একঝলকে হিমু
Masud Rana
... min to read
Listen
হিমু - হুমায়ূন আহমেদের অনবদ্ধ সৃষ্টি। কাল্পনিক যুবক। উপন্যাসের কেন্দ্রিয় চরিত্র। যে কিছুটা অদ্ভুত, কিছুটা উদ্ভট। আচরণ অস্বাভাবিক। চাকরি করার সুযোগ থাকলেও বেকার এবং উদাসীন থাকাটাই তার ফ্যাশন। নব্বইশের দশকে হিমুর প্রথম উপন্যাস ময়ূরাক্ষী প্রকাশিত হয়। প্রাথমিক সাফল্যের পর হিমু চরিত্র বিচ্ছিন্নভাবে হুমায়ুন আহমেদের বিভিন্ন উপন্যাসে প্রকাশিত হতে থাকে। পাঠকমহলে চরিত্রটি খুবই সাড়া ফেলে।
পরিচয়
হিমুর প্রকৃত নাম হিমালয়। যা হিমালয় পর্বতের ন্যায় মহত্ব প্রকাশ করে। এ নাম তার বাবা রেখেছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন হিমুকে মহাপুরুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন। তার ছিল ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার যদি প্রশিক্ষণ দিয়ে তৈরি করা যায় তবে একইভাবে মহাপুরুষও তৈরি করা সম্ভব। হিমুর বাবা একজন বিকারগ্রস্ত মানুষ। যার বিশ্বাস তিনি মহাপুরুষ তৈরির জন্য একটি বিদ্যালয় তৈরি করেছিলেন যার একমাত্র ছাত্র ছিল তার সন্তান। হিমুর মা বেঁচে নেই। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান সে। মামারা তাকে খুবই ভালবাসে।
নামজটিলতা
ছাত্রজীবনে হিমু তার নাম নিয়ে ঝামেলায় পড়ে। পিতামহ এ নামটির বিরোধী ছিলেন। তিনি হিমুর নাম রাখতে চেয়েছিলেন চৌধুরী ইমতিয়াজ টুটুল। কিন্তু বাবার দেওয়া নামটাই হিমু গ্রহণ করেছিল।
পড়াশোনা
হিমুর সাধারণ জ্ঞান ভালো। সে ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ-মাধ্যমিক পাশ করে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষানবিশ, পাশ করেছে কিনা জানা যায়নি।
বয়স
হিমু মধ্যবয়সী যুবক। বয়স ২৫ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে।
পছন্দ ও কার্যকলাপ
হিমুর পোশাক-আশাক, চাল-চলন কিছুকিছু মানুষের কাছে ছিল বিরক্তিকর। সে খুব একটা সুদর্শন না হলেও তার চোখ ও হাসি খুব সুন্দর। সবসময় হলুদ রঙের পাঞ্জাবী পরতে পছন্দ তাঁর। অধিকাংশ সময়ই পাঞ্জাবীর পকেট থাকে না। ঢাকা শহরের পথে-পথে উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়ানো তার পছন্দতম কর্মকাণ্ডের মধ্যে অন্যতম। বেশিরভাগ সময় খালিপায়ে চলাফেরা করে। শীতকালে সে রুপার দেওয়া কাশ্মীরি শাল ব্যবহার করে। চুল ও দাড়ি সবসময় বড়বড় রাখে। মাঝেমধ্যে পুরোপুরি ন্যাড়া হয়ে যায়। রাতের বেলায় রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করে। ফুফাতো ভাই বাদল তার অন্ধভক্ত। হিমু মাঝে মাঝে ভবিষ্যতবাণী করে যা প্রায় সময়ই মিলে যায়। সে তার যুক্তি-বিরোধী মতানুসারে কাজ করে এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করে দেয়। প্রায় সময়ই হিমুকে পরোপকার করতে দেখা যায়। সেটার মধ্যেও সে নাটকীয়তা তৈরি করে।
আচরণ
হিমুর আচার-আচরণ বিভ্রান্তিকর। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে তার প্রতিক্রিয়া অন্যদেরকে বিভ্রান্ত করে। বিভ্রান্ত সৃষ্টি করা হিমুর অত্যন্ত প্রিয় একটি কাজ। প্রেম ভালবাসা উপেক্ষা করা হিমুর ধর্মের মধ্যে পড়ে। কোন মায়া-ই তাকে কাবু করতে পারে না। মায়াজালে আটকা পড়তে গেলেই সে উধাও হয়ে যায়।
জীবনযাপন
অদ্ভুত রকমের জীবনযাপন করে হিমু। বাউণ্ডুলেটাইপ। মেসে থাকে। মাঝেমধ্যে রাস্তায় ও পার্কে রাত কাটায়। তার প্রধান কাজ হেঁটে, খালি পায়ে রাস্তায় ঘুরে বেরানো। কোনো পেশা নেই। তার বেশকিছু বিত্তবান আত্মীয় রয়েছে। প্রায়ই তাদের কাছ থেকে উপহার এবং অর্থসাহায্য পায়। তবে সে মানুষের কল্যানের জন্য অনেক কাজ করে।
ব্যক্তিসত্তা
হিমু স্বতন্ত্র ব্যাক্তিত্বের অধিকারী। সে প্রায়ই যুক্তি-বিরোধী মতানুসারে আচরণ করে এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করে। তার এরকম অযৌক্তিক ব্যক্তিত্বের কারণে সে অনেক সম্ভাব্য বিপদ থেকে রক্ষা পেয়ে যায়। তার লোভ, লালসা, ঈর্ষা, ভয় নেই। এরূপ আচরণ অনেক মানুষকে তাকে মহাপুরুষ ভাবতে প্রভাবিত করে। হিমু যথেষ্ট বুদ্ধিমান ও রসবোধসম্পন্ন ব্যক্তি।
ঘনিষ্ঠজন
হিমুর কিছু ভক্তশ্রেণীর মানুষ আছে যারা হিমুকে মহাপুরুষ মনে করে। এদের মধ্যে হিমুর খালাতো ভাই বাদল অন্যতম। মেস ম্যানেজার বা হোটেল মালিক- এরকম আরও কিছু ভক্ত ছড়িয়ে আছে তার। এছাড়াও বিভিন্ন সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী ও খুনি ব্যক্তিদের সাথেও তার সু-সম্পর্ক গড়ে ওঠে। হিমুর একজন বান্ধবী আছে। নাম রূপা। যাকে ঘিরে হিমুর অনেক রহস্যময়তা আবর্তিত হয়। নিরপরাধী হওয়া সত্ত্বেও সন্দেহভাজন হওয়ায় হিমু অনেকবার হাজতবাস করেছে এবং বিভিন্ন থানার ওসি ও সেকেন্ড অফিসারের সাথে তার বন্ধুত্বপুর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।
Post a Comment