না উনি Just Ordinary scientist নন, Extraordinary Scientist!
আমার মতে যদি কোন Scientist কে Scientific Idea এর প্রবর্তক দেওয়া হয়, তবে স্যার নিকোলা টেসলা-ই তার একমাএ উত্তরাধিকারী । তার জীবনী আর প্রোজেক্ট সম্পর্কে পুরোপুরি জানা আজও সম্ভব হয় নি । তবে যতটুকু প্রকাশিত হয়েছে তা এতটাই চমকপ্রদ যে তা, যে কাউকে ভাবিয়ে তুলতে বাধ্য করবেই করবে! (সে সময়ে এগুলো আবিষ্কার করা তো দূরের কথা টেসলা এগুলো কিভাবে চিন্তা করলেন!)
১৮৫৬ সালের ১০ই জুলাই, এক ভয়াল ঝড়-বৃষ্টি আর বজ্রপাতের রাতে জন্ম টেসলার । পরিবেশের এমন অস্বাভাবিকতা দেখে কুসংস্কারচ্ছন্ন ধাএী বলেছিলো, "Child of Darkness" অর্থাৎ, এটি অন্ধকারের সন্তান!
কিন্তু, তার মা পাল্টা জবাব দিয়ে বলেন, "No, Child of Light" অর্থাৎ, না, আমার সন্তান হবে আলোর সন্তান!
তার বাবার নাম মালতিন টেসলা, আর মায়ের নাম ডুকা টেসলা । অকল্পনীয় মেধাশক্তির কারণে তাকে 'ফটোগ্রাফিক' বলা হতো । কারণ, তিনি যা একবার দেখতেন তা তার মুখস্ত হয়ে যেত ।
একদিন ম্যাথ টিচার বোর্ডে কতগুলো অংক দিলে স্বাভাবিক ভাবেই সব ছাত্র তা করতে শুরু করলে ব্যাতিক্রমী টেসলা চুপ করে বসে থাকে । টিচার তাকে প্রশ্ন করলে টেসলা মুখে মুখেই অংক গুলোর এমন ভাবে উওর দেয় যে টিচার এর সন্দেহ হয় - এই ছাত্র নিশ্চয় মুখস্ত করেছে । তাই তিনি নিজে থেকে কিছু ম্যাথ বানিয়ে দেন এবং টেসলাও সবগুলো ম্যাথ এর সঠিক উওর দিলে, টিচার এতটাই অবাক হন যে টেসলা কে তিনি "ভয়ঙ্কর মেধাবী" বলে উঠেন!
ডিনের থেকে লেটার পেয়েছিলেন তার বাবা । সেখানে প্রফেসর লিখেছিলেন, "আপনের ছেলে প্রথম শ্রেণীর স্টার"
নিকোলা টেসলা প্রতিদিন মধ্যরাত ০৩ টা থেকে পরের দিন রাত ১১ টা পর্যন্ত টানা (২০ ঘন্টা) খাটতেন । এমন কি ছুটির দিনেও তিনি বিশ্রাম নিতেন না । অদ্ভুত হলেও, চার বছরের পড়া তিন বছরেই শেষ করে গ্র্যাজুয়েট করেন ১৮৭৩ সালে!
সেই বছরেই নিজ গ্রামে ফিরে গেলে তিনি কলেরায় আক্রান্ত হন । কয়েকবার মৃত্যুর কাছাকাছি পৌছে গিয়েছিলেন । এর পর থেকেই তিনি জীবাণুকে খুব ভয় পেতেন, তিনি বার বার হাত পরিষ্কার করতেন, নিজেকে সাংঘাতিক রকম পরিষ্কার রাখতেন ।
১৮৭৯ সালে বাবা-মা মারা যাওয়ার পর বাবার পুরানো চিঠি ঘাটতে গিয়ে দেখলেন, সেখানে তার প্রফেসরদের কাছ থেকে চিঠি আছে । সেখানে লেখাছিল, "আপনার ছেলেকে এখুনি স্কুল থেকে সরিয়ে নিন । না হলে খাটতে খাটতে মারাই যাবে । তার অসংখ্য আইডিয়া গুলোর মধ্যে আংশিকই আবিষ্কৃত হয়েছে । কারণ, এখনও অনেক আইডিয়া আবিষ্কৃত হয় নি, সেই সুযোগ তিনি পান নি । আবার কতগুলো প্রকাশিত ই হয় নি ।
যে গুলো আবিষ্কৃত হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্যঃ স্পেস ট্রাভেল, আধুনিক বিমান, হেলিকপ্টার, রাডার, রিমোট, টেলিভিশন, রেডিও, আধুনিক কম্পিউটার, ফাইবার অপটিক্স, ইন্টারনেট, টেলিফোন, স্মার্টফোন, GPS, আধুনিক ক্যামেরা, টেসলা কার, এসি, জেনারেটর, ফ্রিজ, ট্রান্সফর্মার, মোটর, ট্রানজিস্টর, এ.সি কারেন্ট, ইলেকট্রন মাইক্রোস্কোপ, আধুনিক টেলিস্কোপ, আধুনিক জাহাজ, সাবমেরিন, সিমেন্ট, কংক্রিট ইত্যাদি। তার রয়েছে কয়েকশো প্যাটেন্টস ! (Wikipedia থেকে দেখে নিতে এখানে ক্লিক করুন)
AC Current ও Induction Motor নিয়ে টেসলা তার কলেজের Professor এর সাথে কথা বলতে গেলে তিনি এসব অবাস্তব বলে হেসে উড়িয়ে দেন। তার বিচিত্র সব আইডিয়ার মূল্য কেউ দিত না। তখন DC Current এ দুনিয়া চলত। টমাস আলভা এডিসন তখন বিশ্বসেরা বিজ্ঞানী। তিনি ১৮৮৪ সালে টেসলাকে আমেরিকায় তার ল্যাবে কাজ করার জন্য নিয়ে আসেন। অল্প দিনেই তিনি বুঝতে পারেন, টেসলা তার ল্যাবের সেরা ইঞ্জিনিয়ার। এডিসনও টেসলার AC Current এর আইডিয়া উপেক্ষা করেন, কেননা পুরো আমেরিকা তখন এডিসনের DC Current আর বাল্ব দিয়ে চলত। এডিসন বিজ্ঞানের পাশাপাশি ব্যবসায়িক দিকও মাথায় রাখতেন। আমেরিকার বড়বড় ধনকুবেররা তার পিছনে বিনিয়োগ করত। মিডিয়ার লোকজনও তার পক্ষের লোক।
একদিন এডিসন টেসলাকে বলেন তার উদ্ভাবিত বাল্বের ডিজাইনকে বুদ্ধি খাটিয়ে আরও উন্নত করা যায় কিনা? বিনিময়ে ৫০০০০ ডলার দিবেন। টেসলা দিনরাত খেটে বাল্বের অভাবনীয় উন্নতি করেন। কিন্তু, এডিসন তাকে সেই অর্থ না দিয়ে বলেন "It was just a joke!"
এতে টেসলা ক্ষুব্ধ হয়ে এডিসনের চাকরি ছেড়ে পেটের দায়ে দিন-মজুরির কাজ শুরু করেন। এরই মাঝে কয়েক দফা তিনি ঠকেন, ব্যবসায়ীরা তাকে টাকা দেয়ার কথা বলে তাকে দিয়ে ডিজাইন বানিয়ে নিয়ে টাকা না দিয়ে চলে যায়, তার আইডিয়ার মালিক হয়ে যায় অন্য কেউ।
অবশেষে তিনি ১৮৮৮ সালে George Westinghouse নামের এক ব্যবসায়ীর সাথে ৬০০০০ ডলারের চুক্তি করেন। টেসলার আবিষ্কার আর জর্জ এর ব্যবসায়িক বুদ্ধির বদৌলতে টেসলা অল্পদিনেই এডিসনকে টেক্কা দেয়া শুরু করেন। ১৮৯৬ সালে আমেরিকার সরকার টেসলার কোম্পানিকে নিয়োগ দেয় নিউইয়র্ক শহরে বিদ্যুত দেয়ার জন্য। টেসলা তাতে সফল হন।
এডিসনের তখন মাথায় হাত। জনপ্রিয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এডিসন টেসলার AC Current নিয়ে মিথ্যা কথা ছড়াতে থাকেন। যেমন: AC Current ব্যবহারকারী নাকি ৬ মাসের মধ্যে মারা যাবে! AC Current এর উৎসের আশেপাশে মরা জীব রেখে বলতেন এসব নাকি টেসলার AC current এর কারণে মরেছে!
এডিসনের ষড়যন্ত্রের কারণে এমন অবস্থা হয় যে, টেসলার কাছ থেকে কেউ বিদ্যুৎ নিত না। সরকারও এডিসনকে সমর্থন দেয়। এর ফলে টেসলা ও তার কোম্পানি উভয়ই Bankrupted হয়ে পথে বসে যায়।
তার সাময়িক কিছু আবিষ্কার তুলে ধরা হলোঃ
১. ১৫ জুন, ১৮৯৬ সালে তিনি "Tesla Osillator" নামে একটা যন্ত্র আবিষ্কৃত করেন। যাকে Earth Quake মেশিন ও বলা হয়।
কারন জানা যায় টেসলা যখন মেশিন টি পরীক্ষা করছিলেন তখন বড় মাপের একটা ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয় এবং সাথে সাথে অনেক কিছু ভেঙ্গে পরে। টেসলা মানব-জাতির মঙ্গল কামনায় এবং ভবিষ্যৎ এর অপব্যবহারের কথা চিন্তা করে হাতুড়ি দিয়ে নিজেই মেশিন টাকে ভেঙ্গে ফেলেন এমন কি কোন দিনই এই মেশিনটি আর বানান নি।
২. টেসলা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ধনকুবের জেপি মরগান কে তার project এর আর্থিক সহায়তার জন্য আবেদন জানালে জেপি মরগান ১লাখ ৫০০০০ ডলার বিনিযোগ করেন। তার এই অর্থায়নে ১৯০১ সালে নিউইয়র্কের শোরহামে প্রায় ৫৭ মিটার উচু টাওয়ারের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। নাম দেওয়া হয় 'ওয়ার্ডেন ক্লিফ টাওয়ার'
কিন্তু জেপি মরগান কিছু দিনের মধ্যেই জানতে পারেন টেসলা এই টাওয়ার টি রেডি সংক্রান্ত কাজের পরিবর্তে তার নতুন project," Free electricity" নিয়ে কাজ করছেন | (এটি টেসলা'র এমন এক project যাতে সারা বিশ্বের মানুষ তারবিহীন বিদ্যুৎ সেবা পেতো এমন কি এর জন্য গুনতে হতো না কোন টাকা..অর্থ্যাৎ বিদ্যুৎ বিল বলতে আজ কিছুই থাকতো না | তিনি অল্প দিনের মধ্যেই এই project দিয়ে ২ মাইল দূরত্ব পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাঠাতে সক্ষম ও হয়েছিলেন |)কিন্তু এডিসন, মরগান সহ আরও অনেক ব্যাবসায়ী এর বিরুদ্ধে লাগলেন | কারন টেসলা যদি তার এ কাজ সম্পূর্ণ করে ফেলে তবে তাদের মিলিয়ন মিলিয়ন টাকা আয় করতে পারবেন না | তাই জেপি মরগান তার অর্থায়ন বন্ধ করে দিলে থেমে যায় "ওয়ার্ডেন ক্লিফ " টাওয়ার নির্মাণের কাজ | টেসলার নিজের তেমন কোন অর্থ ছিলো না যা দিয়ে টাওয়ার নির্মাণ এর কাজ সম্পূর্ণ করবেন!!!
৩. কিছু দিন আগে প্রকাশিত এক সাংবাদিকের সাথে টেসলার কথোপোকথোন থেকে এটা জানতে পারা যায় যে, টেসলা ২য় সূর্য বানাতে চেয়ে ছিলেন! এমন কি তিনি শনি গ্রহের ০৩ টি বলয়ের মতো পৃথিবীকেও ০৩ টি বলয়ের মধ্যে রাখতে চেয়ে ছিলেন, যাতে পৃথিবী সব সময় আলোকিত থাকে।
৪. একদিন টেসলা বললেন, "আমি এমন এক মেশিন বানাতে পারবো যা মানুষের মস্তিষ্কের তথ্য গুলোকে ছবিতে পরিণত করতে পারবে"
Original: "Alpha waves in the human brain are between 6 and 8 hertz. The wave frequency of the human cavity resonates between 6 and 8 hertz. All biological systems operate in the same frequency range. The human brain's alpha waves function in this range and the electrical resonance of the earth is between 6 and 8 hertz. Thus, our entire biological system - the brain and the earth itself - work on the same frequencies. If we can control that resonate system electronically, we can directly control the entire mental system of humankind." - Nikola Tesla
যদি তিনি এই কাজ তা সম্পূর্ন করে যেতেন তবে আজ আমরা প্রত্যেকের কর্ম-কান্ড, আইডিয়া আগে থেকেই জেনে নিতে পারতাম, জানতে পারতাম সকলের মনোভাব, উদ্দেশ্য । (যা কিনা আজকের আধুনিক বিজ্ঞানীরা এখনো গবেষণাই করেই যাচ্ছে এবং কিছু কাজ সফটওয়্যার এর সাহায্যে করছে!)
Sir Nikola Tesla With Albert Einstein |
একবার আইনস্টাইন কে প্রশ্ন করা হয়ে ছিলোঃ "পৃথিবীর সবচেয়ে বুদ্ধিমান হতে আপনার কেমন লাগে?" উত্তরে আইনস্টাইন বলেছিলেন, "এই প্রশ্নের উওর আমার জানা নেই । আপনি বরং নিকোলা টেসলা কে জিজ্ঞাসা করুন।" খুব কম মানুষই জানেন যে টেসলা কে ফ্যারাডের চেয়ার দেওয়া হয়েছিলো । যা এখন পর্যন্ত অন্য কোন বিজ্ঞানী কে দেওয়া হয় নি!
তিনি মানুষের অবহেলার কারণে অনেক একা সময় কাটাতেন। তার আবিস্কার গুলো অন্যরা চুরি করে নিজেদের নামে চালিয়ে দিতেন, অথচ নিকোলা টেসলা ঠিক মত খেতেও পারেন নি অভাবে। তার সঠিক মূল্যায়ন আমরা কখনো করি নি।
তার শেষ জীবন কাটে কবুতর পালার মাধ্যমে! সাধারণ মানুষ বলতেন, টেসলার সাথে এলিয়েনদের কথা-বার্তা চলে । আবার অনেকে বলেন টেসলা কালো-জাদু করেছে । কেও কেও বলতেন টেসলা এই যুগের মানুষ নয় । সারা জীবন মানুষের এত অবহেলার কারণে তিনি মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন । সারা-জীবন নিঃগৃহীত মানুষটা মৃত্যুর সময়ে একটু শান্তি চেয়ে ছিলেন । তাই নিউইয়র্কের এক হোটলের ৩৩২৭ নম্বর রুমের দরজায় তিনি ঝুলিয়ে দেন, "Please, Don't disturb me!"
১৯৪৩ সালের ৭ই জানুয়ারি পৃথিবী থেকে চির বিদায় নেন! তার মৃত্যুর ০২ দিন পর FBI এসে তার লাশ নিয়ে যায় আর, নিয়ে যায় অপ্রকাশিত সব হাজারো Scientific Idea যে গুলোর অনেক টাই হয়তো কোন কোন বিজ্ঞানী নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছে!
তিনি এই Simulant সমাজ কে যা দিতে চেয়েছেন তার যদি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হতো তাহলে আজ হয়তো আমরা পুরো সৌরজগৎ জুড়ে রাজত্ত করতে পারতাম! এই ছদ্মবেশী সমাজ যদি এই ভাবেই চলতে থাকে, তবে নিকোলা টেসলার মত এমন এক বিজ্ঞানীর পরিচয় হয়তো একদিন চিরতরেই হারিয়ে যাবে !
Post a Comment