SkyIsTheLimit
Bookmark

শাসন ও সুশাসন সম্পর্কে ধারনা

পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র মানব সভ্যতার বিবর্তনের ফসল। যুগের পর যুগ ও বিভিন্ন স্তর পেরিয়ে বিভিন্ন শক্তি ও উপাদানের  সমন্বয়ে এসবের উদ্ভব ঘটেছে। এসব সংগঠন গড়ে উঠেছে মানব জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রদানের জন্য। এ সকল  সংগঠনের সদস্যদের পারস্পরিক সম্পর্ক নির্ধারণ ও আচরণ নিয়ন্ত্রণের জন্য একসময় শাসন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। আদিতে সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থায় শাসন প্রবর্তনের মূল লক্ষ্য ছিল জননিরাপত্তা নিশ্চিত করা। মনুসংহিতায় লক্ষ্য করা যায় যে, রাজা   প্রজাদের নিকট থেকে উৎপন্ন ফসলের ছয় ভাগের এক ভাগ রাজস্ব আদায় করতাে। এর বিনিময়ে রাজা প্রজাদের নিরাপত্তা  বিধান করতাে। প্লেটো, এরিস্টটল, ইবনে খালদুন প্রমুখ দার্শনিক ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানিগণ বিশ্বাস করতেন যে, উত্তম জীবন গড়ে তোলার জন্য রাষ্ট্রের অস্তিত্ব'  ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ায় সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটলে রাষ্ট্রের কার্যাবলি ও দায়-দায়িত্ব আরাে বৃদ্ধি পায়। ১ম ও  ২য় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে সমাজ ও রাষ্ট্রের নানাবিধ সমস্যা ও জটিলতা বৃদ্ধি পেলে তা নিরসনকল্পে পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলােতেও।  জনকল্যাণের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচিত হতে থাকে। বৃদ্ধি পেতে থাকে কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের (Welfare state) ধারণা।  এরপর থেকে আধুনিক রাষ্ট্র ‘জনগণের বন্ধু, দার্শনিক ও পরিচালকে’ (Friend, Philosopher and Guide) পরিণত হয়।  বর্তমানে জনকল্যাণই রাষ্ট্রের মুখ্য উদ্দেশ্য বলে বিবেচিত হয়। এজন্য প্রয়ােজন হয়ে পড়ে সুশাসনের। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির  উন্নয়নের ফলে তথ্যের সহজলভ্যতার পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা ও দক্ষতা, সুশাসনের প্রয়ােজনীয়তাকে আবশ্যকীয় করে  তুলেছে।  বিশ্বব্যাংক ও UNDP-এর মতে, সুশাসনের মাধ্যমেই একটি রাষ্ট্রের নাগরিকগণ তাদের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক  আশা-আকাঙ্ক্ষা সমূহকে প্রকাশ করতে পারে এবং তাদের অধিকার ভোগ করতে পারে। এছাড়াও একটি রাষ্ট্রে সুশাসন।  প্রতিষ্ঠিত হলে সে রাষ্ট্রে টেকসই উন্নয়ন সাধিত হয়। সব ধরনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বিকাশের জন্যও প্রয়ােজন সুশাসন।  এজন্যই সুশাসন বিষয় সম্পর্কিত তাত্ত্বিক মিশেল ক্যামডেসাস (Michel Camdessus) বলেছেন যে, রাষ্ট্রের সব ধরনের উন্নয়নের জন্য সুশাসন অত্যাবশ্যক'  জাতিসংঘের আফ্রিকা অঞ্চলের বিশেষ উপদেষ্টা ইব্রাহিম গানবারি সুশাসনের ওপর গুরুত্ব আরােপ করতে গিয়ে বলেছেন  যে, যে সমস্তু রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে শুধুমাত্র সে সমস্ত দেশেই ঋণ মওকুফ করা হবে।  শাসন (Governance) : Good Governance বা সুশাসন সম্পর্কে আলোচনার আগে জানা প্রয়ােজন 'শাসন' বা ।  শাসনের ব্যবস্থা’ বা ‘Governance' বলতে কী বােঝায়। গভর্নেন্স’ একটি বহুমাত্রিক ধারণা যা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ, ক্ষেত্র এবং  প্রেক্ষাপট থেকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এ কারণে তাত্ত্বিকদের মধ্যে গভর্নেন্স' বিষয়ে সংজ্ঞা প্রদানের ক্ষেত্রেও পার্থক্য লক্ষ করা  যায়।  গভর্নেন্দুকে রাজনৈতিক ব্যবস্থায় শাসনের ব্যবস্থা হিসেবে দেখা হয়ে থাকে। ল্যান্ডেল মিলস এবং সেরাজেন্ডিন।  (Landell Mills and Serageldin)-এর মতে, 'জনগণ কীভাবে শাসিত হয়, কীভাবে রাষ্ট্রীয় বিষয়াদি পরিচালিত হয়, কীভাবে দেশের রাজনীতি আবর্তিত হয় এবং একই সাথে এ সকল প্রক্রিয়া কীভাবে লােকপ্রশাসন ও আইনের সাথে সম্পর্কিত সে  বিষয়কেই গভর্নেন্স বলে।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment