SkyIsTheLimit
Bookmark

নৈতিকতা সম্পর্কে ধারণা

নৈতিকতার ইংরেজি প্রতিশব্দ Morality। ইংরেজি Morality শব্দটি এসেছে ল্যাটিন ‘Moralitas' থেকে, যার অর্থ ।  সঠিক আচরণ বা চরিত্র’ । গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস, প্লেটো এবং এরিস্টটল সর্বপ্রথম নৈতিকতার প্রতি গুরুত্ব আরােপ করেন।  সক্রেটিস বলেছেন, সৎ গুণই জ্ঞান' (Virtue is knowledge)। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিরা অন্যায় করতে  পারেন না এবং ন্যায় বােধের উৎস হচ্ছে ‘জ্ঞান (knowledge) এবং অন্যায়বােধের উৎস হচ্ছে ‘অজ্ঞতা’ (ignorance)।  পরবর্তীতে রােমান দার্শনিকরা প্রথাগত আচরণের অর্থে ‘mas' কথাটি ব্যবহার করেন। ল্যাটিন এই ‘mas' শব্দ থেকেই  Morals ও Morality (নৈতিকতা) শব্দের উদ্ভব ঘটেছে।  জোনাথান হেইট (Jonathan Haidt) মনে করেন, ‘ধর্ম, ঐতিহ্য এবং মানব আচরণ—তিনটি থেকেই নৈতিকতার উদ্ভব  হয়েছে।   নীতিবিদ মুর বলেছেন, 'শুভর প্রতি অনুরাগ ও অশুভর প্রতি বিরাগই হচ্ছে নৈতিকতা।।   Cambridge International Dictionary of English-তে বলা হয়েছে,নৈতিকতা হলো  আচরণ, স্বচ্ছতা, সততা ইত্যাদির সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি গুণ, যা প্রত্যেক ব্যক্তিই আইন কিংবা অন্য কোনাে বিষয়ের থেকে  বেশি গুরুত্ব প্রদান করে থাকে।   নৈতিকতার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে Collins English Dictionary-তে বলা হয়েছে, 'Morality is concerned  with on negating to human behaviour, esp. the distinction between good and bad and right and wrong  behaviour."  নৈতিকতা হলো মানুষের অন্তর্নিহিত ধ্যান-ধারণার সমষ্টি যা মানুষের সুকুমার বৃত্তি অনুশীলনে অনুপ্রাণিত করে। নৈতিকতা  বা ন্যায়বােধ মানসিক বিষয়। এটি হলাে মানবমনের উচ্চ গুণাবলি। নৈতিকতা বা নীতিবােধ একান্তভাবেই মানুষের হৃদয়-মন  থেকে উৎসারিত। নৈতিকতা বা নীতিবােধের বিকাশ ঘটে মানুষের ন্যায়-অন্যায়, ভালাে-মন্দ, উচিত-অনুচিত বােধ বা অনুভূতি  থেকে।  শুধুমাত্র আইন বা রাষ্ট্রীয় বিধিবিধানই নাগরিক জীবন নিয়ন্ত্রণের জন্য যথেষ্ট নয়। আর. এম. ম্যাকাইভার এ জন্যই বলেছেন যে,  Law does not and can not cover all grounds of morality.  নৈতিকতা বা ন্যায়নীতিবােধের ধারণা বা এর প্রতি যে দেশের জনগণের শ্রদ্ধাবােধ বেশি, যারা জীবনের চলারপথে।  নীতিবােধ দ্বারা পরিচালিত হন, তারা দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতিতে লিপ্ত হন না। আইন অপেক্ষা বিবেক দ্বারা তারা পরিচালিত হন।  নীতিবান মানুষের ভাল-মন্দ, উচিত-অনুচিত, ন্যায়-অন্যায়ের ইত্যাদির মানদণ্ডে নিজেরাই চলার চেষ্টা করে।   নৈতিকতার পিছনে সার্বভৌম রাষ্ট্র কর্তৃত্বের সমর্থন বা কর্তৃত্ব থাকে না। কেননা নৈতিকতা বিবেক ও মূল্যবােধ দ্বারা।  নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত। রাষ্ট্র নৈতিক বিধি প্রয়োগ করে না। নৈতিকতা বিরোধী ব্যক্তিকে রাষ্ট্র কোনাে প্রকার দৈহিক শাস্তি প্রদান।  করে না। বিবেকের দংশন নৈতিকতার বড় রক্ষাকবচ।।   নৈতিকতা মূলত ব্যক্তিগত এবং সামাজিক ব্যাপার। নৈতিকতা মানুষের মানসিক আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। আচরণ নিয়ন।  করে মানুষের কল্যাণ সাধনই নৈতিকতার লক্ষ্য। যে রাষ্ট্রের মানুষের নৈতিক মান সুউচ্চ, সেদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সহজ। কেননা সেদেশের নাগরিকগণ নিজেরাই অন্যায় কাজ থেকে দূরে থাকেন, ঘুষ দুর্নীতিকে ঘৃণা করেন।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment