মানব শরীরের সবচেয়ে রহস্যজনক অংশটি সম্ভবত মানুষের মস্তিষ্ক। মস্তিস্ক কিভাবে কাজ করে তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণা করেছেন, নতুন নতুন তথ্য জানার চেষ্টা করেছেন সব সময়। তবুও অনেক কিছুই অজানা রয়ে গেছে গবেষকদের। আর এজন্য মস্তিষ্ক গবেষণার সর্বশেষ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার এর সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি।
এই অনুচ্ছেদে আপনি জানতে পারবেন কি কি করলে স্মৃতিশক্তি কমে যায় এবং কি কি করলে স্মৃতিশক্তি বেড়ে যায়।
১। কম ঘুমের অভ্যাস আপনাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল করে দেয়, ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলের গবেষকরা প্রমাণ করেছেন যে পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে আপনার স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ঠিকমতো না ঘুমানোর কারণে আপনি আলঝেইমারের মতো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। স্মৃতি ভুলে যাওয়ার একটি মারাত্মক রোগ আলঝেইমার। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি দ্রুত সবকিছু ভুলে যায় এবং কিছু মনে রাখতে পারে না। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি পরিচিত লোকজন থেকে শুরু করে একটু আগে দেখা জিনিস পর্যন্ত স্মরণ করতে পারেন না। সারারাত ঘুমের সময়টায় মস্তিষ্কের কোষগুলো ক্ষতিকারক ও বিষাক্ত পদার্থগুলো কে সরিয়ে নিতে থাকে।যদি কেউ প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে না ঘুমায় তাহলে এই ক্ষতিকর পদার্থগুলো হতে পারে আপনার জীবনের জন্য এক বড় ধরনের হুমকি। সুতরাং আপনি কোন কিছু মনে রাখতে পারেন না এর কারণ হতে পারে আপনার পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হওয়া। একজন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের জন্য নিয়মিত ৬ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন।
২। আপনার দীর্ঘদিনের হতাশা।
আপনার স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, কোন কিছুতে মনোযোগ ধরে রাখতে না পারা, এমনকি আপনার নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণ হতে পারে আপনার দীর্ঘদিনের হতাশা। হতাশা আপনার জীবনে শুধুমাত্র এই কয়টি ক্ষতি করেই থেমে থাকবে না, হতাশার কারণে আপনি হয়ে উঠতে পারেন খিটখিটে মেজাজের, প্রচন্ড সন্দেহপ্রবণ ও অযথা ভয় ও দুশ্চিন্তা শিকার হওয়া বা সবকিছু আপনার কাছে বিরক্তিকর মনে হওয়া। এর ফলে আপনি স্থায়ীভাবে মানসিক রোগীও হয়ে যেতে পারেন। হতাশা মানুষের জীবনে আসবেই তাই বলে একে যত প্রশ্রয় দিবেন এটি ততই বেড়ে চলবে। তাই যত দ্রুত সম্ভব হতাশাকে জীবন থেকে ঝেড়ে ফেলে দিন। নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন যে আগামীতে যা কিছু হবে তার জন্য আপনি প্রস্তুত।
৩। পানিশূন্যতার ক্ষেত্রে স্মৃতিশক্তি সংবেদনশীল।
আমাদের মস্তিষ্কের প্রায় ৮০ ভাগই পানি আর এ কারণে পানিশূন্যতাও হতে পারে আপনার স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার কারণ। মস্তিষ্কে যদি স্বাভাবিকের চেয়ে সামান্য পরিমাণ পানিরও ঘাটতি থাকে তাহলে আপনি যে যে সমস্যায় পড়তে পারেন তা হল: কাজে মনোযোগ কমে যাওয়া, অনিদ্রা রোগে আক্রান্ত হওয়া, আর এই দুইটি একসাথে দায়ী অল্পতেই কোন কিছু ভুলে যাওয়া। পানিশূন্যতা রোধের জন্য নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। গরম স্থান এড়িয়ে চলুন, পানিশূন্যতার প্রতিরোধে ফলের জুস অত্যন্ত উপকারী।
৪। খাদ্যতালিকায় বেশি মিষ্টি যুক্ত খাবার। আপনার স্মৃতিশক্তি কে দুর্বল করে দেয়।
খাদ্য তালিকায় অতিরিক্ত মিষ্টি যুক্ত খাবার আপনার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাকে ধীর করে দেয়, কোন কিছু শেখার সামর্থ্যকে কমিয়ে দেয়, কাজে মনোযোগ কমায়, স্মৃতিশক্তি দুর্বল করে এবং এগুলোর একমাত্র কারণ হলো অতিরিক্ত মিষ্টি আপনার মস্তিষ্কের নিউরাল কানেকশন কে দুর্বল করে।তাই বিজ্ঞানীরা বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন যে ফ্যাক্টরিতে যেসব মিষ্টি জাতীয় খাবার উৎপন্ন হয় যেমন: সফট ড্রিংকস, চাটনি ও বিশেষত বাচ্চাদের খাবার এগুলো শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তবে যেসব খাবারে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড আছে যেমন: বাদাম, মাছ ও মাছের তেল। এরা শারীরিক বিকলাঙ্গতার প্রবণতা কমায়।তাই স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর ক্ষেত্রে খাদ্য তালিকায় মিষ্টি জাতীয় খাবারের পরিমাণ কমিয়ে দিন।
৫। পড়াশোনার চর্চা স্মৃতিশক্তি বাড়ায়।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা প্রমান করেছেন যে নিয়মিত পড়াশোনার চর্চা স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। কারণ নিয়মিত পড়াশোনা চর্চা মানুষের বুদ্ধিমত্তার কোষগুলোকে নতুন নতুন উপায়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ দিতে থাকে। এমন কি মস্তিষ্কের এমন কিছু কোষ যেগুলো আগে কখনো ব্যবহৃত হয়নি সেগুলো কেউ সচল করে তোলে। তাই অবশ্যই পড়াশোনার চর্চা মানুষের স্মৃতিশক্তি বাড়ায়। তাই স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য আজ থেকেই নিয়মিত পড়াশোনার চর্চা শুরু করুন।
৬। ছবি আঁকা স্মৃতি শক্তির কার্যক্ষমতা বাড়ায়।
একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে স্মৃতিশক্তি কমে গেলে ক্রিয়েটিভ কাজ যেমন: ছবি আঁকা শিল্পের জন্য চিন্তা মূলক কাজ মানুষের মস্তিষ্কের কোষ গুলোর মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক তৈরি করে দেয়। তখন দুর্বল হয়ে যাওয়া কোষগুলো আবার সচল হতে থাকে।
৭। ভালোবাসা ও ঘৃণার প্রভাব।
বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন ভালোবাসা ও ঘৃনা মানুষের মস্তিষ্কের একই স্থান থেকে সৃষ্টি হয়। তাই এদের প্রভাবো প্রায় একই রকম। ঘৃণা মানুষের মস্তিষ্কের বিচার-বিশ্লেষণ করার ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়। স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হতে পারে অন্যকে ঘৃণা করার প্রবণতা।
৮। আবেগপ্রবণ ভালোবাসা এবং মাতৃত্বের অনুভূতির প্রভাব একই।
তরুণ ছেলেরা আবেগের বশে এসে অনেক ভুল করে থাকে,আবেগের প্রবণতা এতটাই বেশি থাকে যে তারা বুঝতেই পারে না কোনটা ভালোবাসা এবং কোনটা ভালোলাগা।
অন্যদিকে মাতৃত্বের ভালোবাসা স্নেহের অনুভূতি সৃষ্টিকারী কোষগুলোকে সক্রিয় করে দেয়। আর এই সম্পর্কই মানুষের স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তাই সুস্থ ও স্বাভাবিক সম্পর্ক আপনার স্মৃতিশক্তি বাড়াতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
Post a Comment