মূলভাব : গতিই জীবন; স্থিতিতে মৃত্যু। জীবনের পথ অতিক্রমণ হয় বাধাকে পেরােনাের মধ্য দিয়ে। জড়াতাকে গ্রাহ্য করলে অগৌরবের মৃত্যু মেলে।
সম্প্রসারিত ভাব : মানুষ সৃষ্টির সেরা গৌরব নিয়ে পৃথিবীতে আসে। কিন্তু তার শ্রেষ্ঠত্ব আপনা-আপনি অর্জিত হয় না। নিয়ত পরিশ্রম ও অধ্যবসায় দিয়ে তাকে গৌরবের মুকুট পরতে হয়। অনেকের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের আকাঙ্ক্ষা থাকে ঠিকই; কিন্তু অর্জনের বিস্তৃত পথ দেখে তারা ভয় পায়। প্রতিকূলতার মধ্যে যেতে তাদের মন সায় দেয় না। তাই তারা জড়তাকে আশ্রয় করে এবং নিজেকে শুয়ােপােকার মতাে গুটিয়ে ফেলে। তাদের মধ্যে থাকা সুপ্ত প্রতিভা ও অপরিমেয় সম্ভাবনাগুলাের অপমৃত্যু ঘটে। সশরীরের বেঁচে থাকলেও তারা বাস্তবে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে; যাপন করে মৃতের জীবন। নিজের সম্ভাবনা সম্পর্কে অজ্ঞাত থেকেই একজীবন পার করে দেয় তারা। মানুষের জীবনবৃত্তান্ত থেকে তাকে অপরিমেয় সম্ভাবনার প্রাণী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। তার অমিত শক্তি অমিত সাহস। কিন্তু সংকীর্ণতার বেড়াজাল অতিক্রমণ করতে পারে না বলে সে পেছনে পড়ে থাকে। জীর্ণ লােকাচার ও মানসিক 1. পরাধীনতা তাকে দুর্বল ও মেরুদণ্ডহীন করে দেয়; লােপ পায় তার স্বাভাবিক বিবেচনা শক্তিও। তাই অপুষ্ট বীজের মতােই মাটির ওপরে ওঠার কোনাে সম্ভাবনা তার আর থাকে না। চলৎশক্তিহীন এক পাথরপিণ্ডে পরিণত হয় সে। জীবনের স্বাভাবিক বিকাশকে হারিয়ে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সে পশ্চাৎপদ এক জীবসত্তায় পরিণত হয়। জীবন হয়তো সে যাপন করে; কিন্তু এ জীবনযাপন তাে মৃত্যুরই শামিল। এ থেকে মুক্তির পথ একটাই; তা হলাে জীবনকে প্রগতির পথে আনা তথা গতিশীল করা। সকল জরা ও ভয়ভীতিকে সাহস দিয়ে জয় করে জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। পৃথিবীর সকল অপশক্তিকে শুভবুদ্ধির মাধ্যমে প্রতিহত করা; অন্যায় ও বঞ্জনাকে আত্মশক্তি দিয়ে মােকাবিলা করে সত্যের গতিপথ নির্মাণ করা। সত্যের পথেই রয়েছে মৃত্যুর মহিমা আর গতিজীবনের সব ছন্দ। তাই গতিতে জীবন ভাসিয়ে যদি মৃত্যুও আসে তা হবে প্রতীক্ষিত ও আকাঙ্ক্ষিত। জগতে সে মৃত্যু মানুষের একান্ত প্রার্থিত; জীর্ণভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে সে শতগুণ শ্রেয়।
মন্তব্য : হীন ও অগতির জীবন কখনােই মানুষের জন্য গৌরব বয়ে আনে না। জড়জীবন যেমন অমার্জিত, তেমনি তা মৃত্যুরও শামিল। দুর্জয়চিত্তে ও প্রগতি নিয়ে যে মানুষ জীবনকে গতিশীল করে সে-ই হয় সম্মুখগামী; তার জীবন হয়ে ওঠে অর্থবহ ও সার্থক।
Post a Comment