মূলভাব : পরার্থপরতা মানুষের বিশিষ্ট গুণ। পশুর মতাে আত্মকেন্দ্রিক জীবনযাপনের জন্যে মানুষ পৃথিবীতে আসেনি। পরার্থে আত্মােৎসর্গ করার মধ্যেই রয়েছে মানবজীবনের পরম সার্থকতা।
সম্প্রসারিত ভাব : পশুর মতাে কিছু আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপর মানুষ লােকসমাজে আছে। তারা সমাজ-সংসারের কথা ভুলে নিজেকে নিয়ে অতি ব্যস্ত; অতি বিব্রত থাকে। অথচ সমাজ-সংসারের কাছে প্রত্যেকের ঋণের সীমা-পরিসীমা নেই। মানুষ সামাজিক জীব। সংঘবদ্ধ সমাজ জীবনই তাকে দিয়েছে আত্মরক্ষার নিরাপত্তা, শান্তি-শৃঙ্খলার অনুকূল পরিবেশ ব্যক্তিমানুষের কল্যাণে সমাজ যেমন এগিয়ে আসে, সমাজও আশা করে তার বৃহত্তর কল্যাণে ব্যক্তিমানুষ তেমনই ক্ষুদ্র স্বার্থের কথা ভুলে সহযােগিতার হাত বাড়াবে, প্রয়ােজনীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করবে অকুষ্ঠচিত্তে। সংঘবদ্ধ সমাজজীবনে আত্মকেন্দ্রিক ভাবনা-চিন্তা, স্বার্থপর মনােবৃত্তি এবং কার্যকলাপ সামাজিক কল্যাণের পরিপন্থি। প্রতিটি সামাজিক মানুষ পারস্পরিক সহযােগিতার যােগসূত্রে আবদ্ধ। সংসারের কেউ নিজের জন্যে আসেনি। একা একা কেউ বাঁচতেও পারে না। আত্মকেন্দ্রিক একক জীবন ভয়ংকর দুঃসহ। পাঁচজনের সঙ্গে মিলেমিশে বাঁচা, যথার্থ বাঁচা। সেজন্যে স্বার্থত্যাগ করা প্রয়ােজন। আত্মকেন্দ্রিকতার শক্ত নিয়ামকটির ধ্বংস প্রয়ােজন। পরার্থে আত্মােৎসর্গে জীবন সার্থক হয়, ধন্য হয়। পরহিতে নিজেকে নিঃশেষে দান করে প্রকৃত সুখ, অনাবিল আনন্দ ও পরম তৃপ্তির অধিকারী হয় মানুষ। মন্তব্য : ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে মানবতার স্বার্থকে বড় করে দেখার মধ্যেই জীবনের প্রকৃত সার্থকতা। মানুষ যদি কেবল আপন স্বার্থ নিয়ে মগ্ন থাকত তাহলে পৃথিবীর এ উন্নত সভ্যতা কোনােদিনই গড়ে উঠত না।
Post a Comment