মূলভাব : অন্যায়কারী ও অন্যায়কে নতশিরে সহ্যকারী উভয়েই সমান অপরাধী। কেউ নিজে অন্যায় না করলেই তার কর্তব্য ফুরায় না। আপ্রাণ চেষ্টা করে অন্যায়কে প্রতিহত করাই সকলের কর্তব্য।
সম্প্রসারিত ভাব : প্রত্যেক মানুষেরই অন্তরে ন্যায়বােধের অস্তিত্ব রয়েছে। তার বিবেকের শুভ্র বেদিতে ন্যায়ের আসন পাতা। জগতের সকল কাজেই তার অন্তরের বিবেক থেকে আসে অমােঘ নির্দেশ। মানুষকে সেই নির্দেশ পালন করতে হয়। কিন্তু ভীতি ও দুর্বলতার কারণে অনেক সময় মানুষ ন্যায়ের সেই অমােঘ নির্দেশ পালন করতে পারে না; সেই পবিত্র দায়িত্ব পালনে কুষ্ঠিত হয়। তাই মুষ্টিমেয় মানুষের অপরাধের প্রতি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের রয়েছে অন্যায়কে মানিয়ে চলার মানসিকতা। এ মানসিকতায় কতখানি ক্ষমাশীলতা, কতখানি ঔদার্য, কতখানি সহনশক্তি তার পরিমাপ । করা দুঃসাধ্য। বস্তুত মানুষ শুধু তিতিক্ষা ও করুণাবশতই অন্যায়কারীকে ক্ষমা করে না; তার এ মানসিকতার নেপথ্যে রয়েছে এক আত্মপলায়নপর মনােভাব। নিজেকে অপরাধীর সংস্রব থেকে দূরে সরিয়ে রাখাকেই সে। নিরাপদ বলে মনে করে। ন্যায়ের নির্দেশ পালনে এ অক্ষমতার অর্থটা অন্যায়কে প্রশ্রয়দান। তেমনই অন্যায়কে ক্ষমা করা বা উপেক্ষা করাও অন্যায়কে প্রশ্রয়দান। যার ফলে অন্যায়কারীরা আরাে অন্যায় করার সাহস পায় এবং তাতে পৃথিবী থেকে ন্যায়বােধ ধীরে ধীরে তিরােহিত হয়। কাজেই অন্যায়কারী এবং যে অন্যায় সহ্য করে, তারা উভয়েই দোষী, উভয়েই শাস্তির যােগ্য। অন্যায় আচরণে কেউ কেউ নীরব উদাসীন দর্শকের ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। তাতে প্রশ্রয় পেয়ে অন্যায়কারী হয়ে ওঠে দুর্নিবার ও শক্তিশালী। কিন্তু বুদ্রদেবতা বেশিদিন তা সহ্য করবেন না। তাঁর রুদ্রতেজে একদিন না একদিন অন্যায়কারী এবং অন্যায়ের প্রশ্রয়দাতা উভয়কে ভােগ করতে হবে কঠিন শাস্তি।
মন্তব্য : সৃষ্টিকর্তা অন্যায়কারীকে যেমন ঘৃণা করেন তেমনি অন্যায় সহ্যকারীকেও ঘৃণা করেন। তাই সকলকে অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে সােচ্চার হতে হবে।
Post a Comment