মূলভাব : মানুষের সামনে রয়েছে দুটি জগৎ। একটি তার স্বার্থের ক্ষুদ্র। পৃথিবী, অন্যটি সমগ্র মানবসমাজকে নিয়ে তার বৃহৎ বিশ্ব। এ দুই পৃথিবীর মাঝে মানুষের দোলাচল মন কেবলি স্বার্থের অভিমুখী হয়ে পড়ে। কিন্তু জীবনের এ ক্ষুদ্র স্বার্থপরতার মধ্যে বেঁচে থাকার কোনাে সার্থকতা নেই।
সম্প্রসারিত ভাব : মানুষের বাঁচার অর্থ শুধু তার শারীরিক অস্তিত্ব রক্ষা নয়। তার যথার্থ পরিচয় মনুষ্যত্বের বিকাশের মধ্যে। মানুষ যতই দেশ ও দশের জন্যে আপন স্বার্থকে বিসর্জন দেয় ততই সে অন্যের হৃদয়ে অধিকার লাভ করে। একমাত্র এ পথেই মানুষের জীবন গৌরবান্বিত হয়ে উঠতে পারে। একক আত্মপ্রীতির যে জগৎ, মানুষ সেখানে অতি ক্ষুদ্র। মহাজীবনের সমগ্রতা থেকে বিচ্যুত হয়ে সে তখন এক ভগ্নাংশ মাত্র। মানুষ যদি শুধু তার নিজের জন্যে বাঁচত, যদি নিজের স্বার্থই তার কাছে একমাত্র সত্য হতাে তবে পৃথিবীর আজকের সভ্যতা গড়ে উঠত না। পৃথিবীর সভ্যতার মূলে আছে সংখ্যাতীত মানুষের আত্মত্যাগ এবং কর্মপ্রচেষ্টা। মানুষ শুধু নিজের জন্যে বাচে না, অনেকের জন্যে তাকে বাঁচতে হয়। এ বৃহৎ জগতের মধ্যেই তার বাঁচার সার্থকতা। মানুষ যতই স্বার্থত্যাগ করে ততই সে অপরের মধ্যে নিজের সত্তাকে প্রতিষ্ঠিত করে তুলতে পারে। অন্যের শ্রদ্ধা ও ভালােবাসার মধ্যেই জীবন গৌরবান্বিত হয়ে ওঠে এবং বেঁচে থাকা সার্থকতামণ্ডিত হয়। রক্ষা নয়।
মন্তব্য : স্বার্থসর্বস্ব মানুষের স্থান এ পৃথিবীতে নেই। কারণ তারা নিজের স্বার্থের চিন্তায় বিভাের থেকে জগৎ সংসারের কথা ভুলে যায়। তাই এসব আত্মকেন্দ্রিক মানুষ সমাজের বােঝা, দেশ ও জাতির কলঙ্ক। বাঁচার মতাে বাঁচতে শেখেনি বলে এরা মৃতের সমতুল্য।
Post a Comment