মূলভাব : অরণ্যের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। এটি সুখে- দুঃখে মানুষকে স্নেহের পরশ বুলিয়ে দেয়। অন্যদিকে, অরণ্যহীন নগর রােমান্টিক ও সৃষ্টিশীল মানুষের কাছে এক যন্ত্রণাদায়ক স্থান।
সম্প্রসারিত ভাব : সৃষ্টিলগ্ন থেকেই মানুষ অরণ্যের সান্নিধ্যে জীবনযাপন করে। তখন থেকেই অরণ্য যেন মানুষকে সস্নেহে লালন-পালন করার ভার নিজের হাতে নিয়ে নেয়। অরণ্য নানারকম ফুল-ফলসহ বিভিন্ন খাবার দাবার মানুষকে সরবরাহ করত। মানুষের জীবনধারণের জন্যে সবচেয়ে প্রয়ােজনীয় যে অক্সিজেন তা মানুষ অরণ্যের কাছ থেকেই পেয়ে থাকে। অন্যদিকে, বৃষ্টিপাত সংঘটনসহ মানুষের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অরণ্যের রয়েছে বিরাট ভূমিকা। কিন্তু অরণ্যের মহাসমারােহ এখন আর লক্ষ করা যায় না। সভ্যতার ক্রমবিকাশের ফলে মানুষ অরণ্যকে ধ্বংস করে সেখানে নগর-পত্তন করছে। আবার মানুষ তার গৃহ-নির্মাণ, প্রয়ােজনীয় আসবাবপত্র-নির্মাণ, জ্বালানি সমস্যা সমাধানসহ নানা প্রয়ােজনে অরণ্যের প্রধান সম্পদ বৃক্ষকে অকাতরে নিধন করছে। ফলে মানুষের জীবন প্রক্রিয়াও আজ বিপন্ন হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে, অরণ্য-প্রকৃতিকে ধ্বংস করে মানুষ যে নগরের পত্তন করেছে সে নগর মানুষকে সুখ দিতে পারছে না। প্রয়ােজনীয় সুযােগের অভাবে এখানে অনেক মানুষের সুপ্ত বাসনা ও সৃষ্টিশীলতার অকালমৃত্যু ঘটে। এখানে অন্যের দুঃখের কথা শােনার কারাে সময় নেই। পারস্পরিক স্নেহ-মমতা, সহমর্মিতা, সংবেদনশীলতা, আন্তরিকতা-এসব যেন এখানে একেবারেই অনুপস্থিত; যেটুকু আছে তাও যেন কৃত্রিমতার আবরণে আচ্ছাদিত। এখানকার মানুষগুলােও কেমন যেন যান্ত্রিক স্বভাবের। এ কারণেই বােধ হয় . কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপলব্ধি ইটের পরে ইট মাঝে মানুষ কীট।
মন্তব্য : মানুষের জীবনে অরণ্যের প্রয়ােজনীয়তা বহুমাত্রিক। তাই দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর- এ আহ্বান আজ আর কেবল কোনাে রােমান্টিক বা সৃষ্টিশীল মানুষের নয়; এটি আজ সব সচেতন মানুষেরই প্রাণের দাবি।
Post a Comment