SkyIsTheLimit
Bookmark

বাংলাদেশের পােশাক শিল্প রচনা



বাংলাদেশের পােশাক শিল্প 
বা আমাদের পােশাক শিল্প 
বা পােশাক শিল্প : বর্তমান ও ভবিষ্যৎ
 বা পােশাক শিল্প ও বাংলাদেশ

ভূমিকা : বাংলাদেশ শিল্পোন্নত দেশ নয়। তথাপি যেসব শিল্পে বাংলাদেশ প্রভূত উন্নতি সাধন করেছে তাদের মধ্যে পােশাক শিল্পের নাম সর্বাগ্রে বাংলাদেশের পােশাক-শিল্পমান বিশ্বমানের। বাংলাদেশের পােশাক শিল্পের শতভাগই রপ্তানিমুখী। বিশ্ববাজারে এর বেশ চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশ তার মােট রপ্তানি আয়ের ৫৬ ভাগ অর্জন করে তৈরি পােশাক রপ্তানির মাধ্যমে।
পােশাক শিল্পের অতীত অবস্থা : প্রয়োজনীয় কাঁচামাল এবং সরকারি পৃষ্ঠপােষকতার অভাবে পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশে পােশাক বা বন্তরশিল্প সম্প্রসারিত হয়নি। ভারত ভাগের সময় অর্থাৎ ১৯৪৭ সালের দিকে উভয় পাকিস্তান মিলে কাপড়ের কলের সংখ্যা ছিল ১৪টি। ১৯৭০ সাল নাগাদ তা ১৪০টিতে উন্নীত হয়। যার মধ্যে মাত্র ৪৩টি ছিল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বা বর্তমান বাংলাদেশে। বাংলাদেশকে পশ্চিম পাকিস্তানের কাপড়ের বাজার তৈরিই ছিল এ বৈষম্যের মূল কারণ। 
পােশাক শিল্পের বর্তমান অবস্থা : স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে পােশাক শিল্পে বাংলাদেশ যথেষ্ট উন্নতি করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশে পােশাক শিল্পে কয়েক লক্ষ শ্রমিক কর্মে নিয়ােজিত। এসব শ্রমিকের ৮৪% নারী। নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, টঙ্গী এলাকায় প্রধান কেন্দ্রগুলাে অবস্থিত। আর্দ জলবায়ু, নদী, সড়ক ও রেলপথের যােগাযােগের সুব্যবস্থা, সুদক্ষ শ্রমিক ও প্রয়ােজনীয় মূলধনের প্রতুলতা এসব অঞ্চলের পােশক শিল্প উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে। চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, খুলনা, কুমিল্লা, কালিগঞ্জ এবং গােয়ালন্দে কাপড়ের কল ব্লয়েছে। এ ছাড়া তাঁতশিল্প তাে রয়েছেই। বাংলাদেশের অনেক জায়গায় বেশ উন্নতমানের তাঁতের কাপড় তৈরি হয়। 
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পােশাক শিল্পের অবদান : বাংলাদেশের উসেম্বর আত্মসমর্পণের আগে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের পর ভয়াবহ অর্থনীতিতে পােশাক শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। এগুলো নিম্নরূপ :
ক. পােশাক শিল্প থেকে রপ্তানি আয় : ঝাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনে বিশেষ করে রপ্তানি খাতের প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে তৈরি পােশাক শিল্পের প্রবৃদ্ধি উল্লেখযােগ্য। বর্তমানে রপ্তানি আয়ের প্রায় ই ক্ষণ একদিকে যেমন ছিল র। বাঙালি জাতি উদ্বুদ্ধ ৫৬% আসে পােশাক শিল্প থেকে।  
খ. বেকার সমস্যা সমাধানে অবদান : পােশাক শিল্প বাংলাদেশের বেকার সমস্যার সমাধানে কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছে। বর্তমানে পােশাক শিল্পে প্রায় ৭ লক্ষ শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। বিশেষ করে আমাদের নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযােগ করে দিয়েছে এ শিল্প। বাংলাদেশের প্রায় ৬ লক্ষ নারীশ্রমিক এ শিল্পে কাজ করে  জীবনধারণ করছে। নারীদের যােগ্যতানুযায়ী কাজের ধরন নির্ধারণ করে তাদের এ শিল্পে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিত্তহীন, নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসা নারীরা তাদের শ্রম বিনিয়ােগ। করে এ শিল্পের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছে। 
গ.  দ্রুত শিল্পায়নে অবদান : পােশাক শিল্প আমাদের দেশে শিল্পের দ্ুত দ্রুত প্রসার ঘটাচ্ছে। এ শিল্পকে কেন্দ্র করেই স্পিনিং, উইভিং, নিটিং, ডাইং, ফিনিশিং এবং প্রিন্টিং শিল্প গড়ে উঠছে। শুধু তাই নয় প্যাকেজিং, গামটেপ, জিপার, বােতাম ও বগলস শিল্পের প্রসারও ঘটছে এ শিল্পের ওপর নির্ভর করেই।
ঘ. অন্যান্য অবদান : এ শিল্পের আমদানি-রপ্তানি কাজে ব্যবহারের জন্যে পরিবহন সেক্টর তার কার্যক্ষমতা প্রসারের সুযােগ লাভ করেছে। এ শিল্পে বিনিয়ােগ করে ব্যাংকগুলাে লাভবান হচ্ছে এবং বিমা কোম্পানি প্রিমিয়াম বাড়ছে। 
আমদানিকারক দেশসমূহ : বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পােশর আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারপরই রয়েছে জার্মানির স্থান। এরপর যথাক্রমে ফ্রান্স, ইতালি, ব্রিটেন, নেদারল্যান্ড, কানাডা, বেলজিয়াম, স্পেন ও অন্যান্য দেশ। 
পােশাক শিল্পের বাধা : বাংলাদেশের পােশাক শিল্পের ক্ষেত্রে বড় বাধাগলাে নিম্নরূপ : 
অস্থিতিশীল রাজনীতি : দেশের অস্থিতিশীল রাজনীতি পােশাক শিল্পের জন্যে মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পরিমাণমতাে ও সময়মতাে উৎপাদন ও অর্ডার অনুযায়ী কাজ সরবরাহ করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক অস্থিরতা তথা হরতাল ও অন্যান্য ধ্বংসায্মক কার্যাবলির জন্যে চুক্তি অনুযায়ী সময় মতাে কাজ করতে না পারায় অনেক সময় কাজের অর্ডার বাতিল হয়ে যায়। বাতিলকৃত কাজের ফলে লােকসান দিয়ে তখন এ শিল্পকে চরম অর্থনৈতিক দৈন্যদশায় পড়তে হয়। 
দক্ষ শ্রমিকের অভাব : পােশাক শিল্পে দক্ষ শ্রমিকের অভাব একটি বড় সমস্যা। প্রশিক্ষণের উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়েই এ শিল্পকে অদক্ষ শ্রমিক নিয়ে কাজ করতে হয়। 
কাঁচা মাল সমস্যা : কাঁচামাল এ শিল্পের অন্যতম একটি প্রধান সমস্যা। তুলতা এসব অঞ্চলের পােশক শিল্প উন্নয়নে | দেশে পর্যাপ্ত কাঁচামাল না থাকায় বিদেশ থেকে তা আমদানি করতে হয়। এতে করে রপ্তানি আয়ের একটা বিরাট অংশ খরচ হয়ে যায়। অনেক সময় আমদানিকৃত কাঁচামাল নিম্নমানের হওয়ায় বাংলাদেশের পোশাক বিদেশি ক্রেতাদের কাছে গ্রহণযােগ্যতা হারিয়ে ফেলে । 
কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়া : যুক্তরাষ্ট্র ২০০৫ সালে পােশাক আমদানি ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি তুলে দিলে এ শিল্প ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান এতে করে বন্ধ হয়ে যায়। তা ছাড়া শুল্ক জটিলতা, আইটেমের বৈচিত্র্যহীনতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, আন্তর্জাতিক বাজারে বিরূপ প্রভাব, দুর্বল শিল্পনীতি, আর্থিক মন্দা ইত্যাদি সমস্যা এ শিল্পের উন্নয়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। 
সমস্যা সমাধানে করণীয় : নিম্নলিখিত বিষয়গুলো পােশাক শিল্পের সমস্যা সমাধানে বিবেচ্য হতে পারে : 
ক. দুত রপ্তানির জন্যে কার্গো বিমান চার্টার করার অনুমতি প্রদান; 
খ. নিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা; 
গ. রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা; 
ঘ.  কোটানীতি সংক্রান্ত দুর্নীতির অবসান; 
ঙ. প্রয়ােজনীয় কাঁচামাল দেশেই উৎপাদনের ব্যবস্থা গ্রহণ;
চ. ইপিজেড-এর মতাে সুযােগ-সুবিধা প্রদান। 
উপসংহার : পােশাক শিল্প আমাদের গর্ব, আমাদের সম্পদ। দেশের বাইরে এর চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আমাদের পােশাক শিল্পের প্রদর্শনী দেশে-বিদেশে প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেছে। তাই এ শিল্পের সকল সমস্যা সমাধানে এবং জাতীয় অর্থনীতির এ অন্যতম সফল অংশকে গতিশীল রাখতে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। বস্ত্রকলের পাশাপাশি তাঁতশিল্পের ঐতিহ্য ও গুরুত্ব অনুধাবন করে এর ব্যবহার বজায়

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment