SkyIsTheLimit
Bookmark

মানবকল্যাণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি রচনা

বিজ্ঞানের জয়যাত্রা
বা সভ্যতার বিকাশে বিজ্ঞান
বা মানবকল্যাণে বিজ্ঞান
বা দৈনন্দিন কাজে বিজ্ঞান
বা বিজ্ঞান ও আধুনিক জীবন/সভ্যতা
বা আধুনিক জীবন ও বিজ্ঞান  
বা বিজ্ঞান ও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি 
বা আধুনিক জীবন ও তথ্যপ্রযুক্তি 
বা সভ্যতার বিকাশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
ভূমিকা : বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ অসাধ্যকে সাধন করতে পেরেছে। ফলে পৃথিবীতে সৃষ্টি হয়েছে নব যুগের। মানুষ তার যুগ-যুগান্তরের স্বপ্ন ও সাধনার অনবদ্য ফসল দিয়ে সভ্যতার অত্যাধুনিক বিশাল ইমারত গড়ে তুলেছে। প্রায় সমগ্র মানবজাতির হাজার হাজার বছরের সমষ্টিগত সাধনা, মৃত্যুকে তুচ্ছ জ্ঞান করে অজানাকে জানার তীব্র আকাঙ্ক্ষা, অনেক মূল্যবান প্রাণের বিনিময়ে রচিত হয়েছে সভ্যতার এ তিলােত্তমা-মূর্তি | সে সভ্যতার বেদিমূলে বলি দিয়েছে বাহুর শক্তি, মস্তিষ্কের বুদ্ধি, ইন্দ্রিয়ের অনুভূতি এবং হৃদয়ের ভালােবাসা। বিজ্ঞান মানুষের অতন্দ্র সাধনার ফসল। বিজ্ঞানের নানা আবিষ্কার মানুষকে দিয়েছে বেগ, সভ্যতার পদক্ষেপকে করেছে দ্রুততর। পৃথিবীকে করেছে ছােট। মানুষকে দিয়েছে অনিঃশেষ শক্তির অপ্রতিরােধ্য জয়যাত্রা। 
বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার : সভ্যতার উষালগ্নের সেই অসহায় মানুষ আজ অসীম শক্তিধর। আধুনিক বিজ্ঞান সময় ও দূরত্বকে জয় করেছে। জেমস ওয়াট স্টিম ইঞ্জিন ও জর্জ স্টিভেনসূন রেলগাড়ি আবিষ্কার করেছেন। বিজ্ঞানের বলে মানুষ জল, স্থল ও অন্তরীক্ষ জয় করেছে। বিজ্ঞান মানুষের সংকট নিবারণের ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিধানের বহু অভাবনীয় কৌশল আবিষ্কার করেছে। বিজ্ঞানের একটি বিশিষ্ট আবিষ্কার বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ মানবসভ্যতাকে অসম্ভব দ্রুত গতিতে এগিয়ে দিয়েছে। বিজ্ঞানের বদৌলতে এক দেশের খবর অন্য দেশে নিমিষের মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছে। ব্যাপক ব্যবধান কমিয়ে সারা পৃথিবীকে বিজ্ঞান এনে দিয়েছে হাতের মুঠোয়। 
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা : বিজ্ঞানের ঐন্দ্রজালিক, শক্তিবলে মানুষ উদ্দাম, উচ্ছল নদীর স্রোতকে বশীভূত করেছে, উষর মরু-প্রান্তরকে করেছে জলসিত্ত, ভূগর্ভের সঞ্চিত শস্য সম্ভাবনাকে করে তুলেছে উজ্জ্বল। ধরিত্রীর সর্বদেহে সঞ্চারিত করে দিয়েছে অপূর্ব প্রাণ-স্পন্দন। বিজ্ঞান আজ উর্বরতা দিয়ে ক্ষয়িষ্ণু বসুধাকে শস্যবতী করে তুলেছে, শিল্পশৈলীর নব নব প্রবর্তনে সে উৎপাদন জগতে এনেছে যুগান্তর এবং সুদূরকে করেছে আমাদের নিকটতম। বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব সাফল্যে জীবধাত্রী বসুধা আজ সদা হাস্যময়ী। প্রাগৈতিহাসিক মানবের অগ্নি-প্রজ্জ্বলন কৌশল আয়ত্ত করার দিন থেকে আধুনিক মঙ্গল গ্রহে প্রেরিত কিউরিওসিটি নামক রােবটের যুগ পর্যন্ত মানুষের অতন্দ্র সাধনা বিজ্ঞানকে করেছে সমৃদ্ধ, সভ্যতাকে করেছে গতিশীল। বিজ্ঞানের বদৌলতে মানুষ বাষ্পীয় শক্তিকে করেছে বশীভূত, আকাশের বিদ্যুৎকে করেছে করায়ত্ত; মুঠিতে পুরাে নিয়েছে আণবিক, পারমাণবিক শক্তিকে। 
দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান : বিজ্ঞান আমাদের জীবনকে করেছে সমৃদ্ধ। সুদূরকে করেছে নিকট। ঘুচিয়ে দিয়েছে স্থানিক এবং মানসিক সংকীর্ণতা। 1. প্রতিদিন প্রভাতে কলরবের সাথে সাথে সংবাদপত্র আমাদের ঘরে পৌছে দেয় বিশ্বের অসংখ্য সংবাদ-কণিকা। বেতারে ধ্বনিত হয় বিশ্ববার্তা। দূরদর্শনের পর্দায় ভেসে ওঠে পৃথিবীর দূর-দূরান্তের ছবি- নিখিল মানুষের চলমান স্রোত। সকালে ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত বিজ্ঞানশক্তির অকৃপণ দাক্ষিণ্য লাভ করতে করতে চলেছি আমরা। আমাদের দিনযাপনের প্রতিটি মুহূর্তকে সমৃদ্ধ করে তুলেছে বিজ্ঞান। অভ্যস্ত জীবনধারায় কোনাে ছন্দপতন ঘটলেই উপলব্ধি করি, আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞানের ভূমিকা কতখানি ব্যাপক ও গভীর। হঠাৎ যখন বিদ্যুতের অভাবে আলােকোজ্জ্বল রাত্রি গভীর অন্ধকারে ডুবে যায়, তখনই বুঝতে পারি, বিজ্ঞান আমাদের প্রতিদিনের জীবনের সঙ্গে কী গভীরভাবে সম্পর্কিত। বিজ্ঞান আজ আমাদের জীবনকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করে তুলেছে। কর্মব্যস্ততার মুহূর্তে দূরালাপনীর সাহায্যে আমরা প্রয়ােজনীয় কাজটুকু ঘরে বসেই সেরে নিতে পারি। আবার কাজের অবসরে শীতাতপ কোনাে বিলাসী প্রেক্ষাগৃহে রঙিন চিত্রায়িত কাহিনি দেখে ক্লান্তি দূর করতে পারি। প্রিয় মুখকে যেমন ধরে রাখতে পারি সেলুলয়েডের স্বচ্ছ আধারে, তেমনি প্রিয় কণ্ঠকে চিরকালের জন্যে বেঁধে দিতে পারি টেপের অদৃশ্য রেখা তরঙ্গে। দুততর কোনাে যানে বসে নিঃশব্দে উপভােগ করতে পারি দুরন্ত গতিকে। উড়ে যেতে পারি হাজার মাইল দূরের আত্মীয়ের সান্নিধ্যে। শব্দের চেয়েও দ্রুতগামী বিমানে করে বিদেশ থেকে আনতে পারি মহামূল্যবান কোনাে মৃতসঞ্জীবনী ওষুধ। এ কথা আজ অস্বীকার করবার উপায় নেই, আমাদের জীবন দিন দিনই হয়ে উঠেছে বিজ্ঞাননির্ভর। পায়ে হাঁটার চেয়ে বাসে, মােটরে চলাতেই আমরা স্বাচ্ছন্দ্যবােধ করি বেশি। মুক্ত হাওয়ার পরিবর্তে বাতানুকূল ঘরের আকর্ষণ আমাদের কাছে অধিক রমণীয়। কালি- কলম-কাগজ-এর নেপথ্যেও রয়েছে বিজ্ঞানের উদ্ভাবনী শক্তির কত না ইতিহাস। বিজ্ঞানের কারণে বিশ্বের কোথায় কী ঘটছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে মুহূর্তেই আমরা জানতে পারি। বিজ্ঞানীরা যে আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে  কতভাবে প্রভাবিত করেছেন তা পরিমাপযোগ্য নয়। পরিধেয় বস্ত্র থেকে ঘর-বাড়ি, পথ-ঘাট, ওষুধ-পত্র, কৃষিজ, খনিজ ভােগ্যপণ্য সবই তাে বিজ্ঞানের প্রযুক্তিবিদ্যার ফসল। বৈদ্যুতিক আলাে, পাখা থেকে যানবাহনের ব্যবহার সবকিছু বিজ্ঞানের অবদান। বস্তুত আমাদের বর্তমান জীবনটাই বিজ্ঞান-নিয়ন্ত্রিত। প্রতি মুহূর্তে শ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্যে বেঁচে থেকেও যেমন বায়ুমণ্ডল সম্পর্কে আমরা প্রতিনিয়ত সচেতন নই, ব্যবহারিক জীবনে বিজ্ঞানের অজস্র যন্ত্রপাতিতেও আমরা এমনই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি যে তার কথা স্বতন্ত্রভাবে আমরা আর স্মরণ করি না। আর এভাবেই বিজ্ঞান আমাদের ব্যবহারিক জীবনে এনেছে পরিবর্তন এবং নিরন্তর উন্নত করে। মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কার মানুষের জ্ঞানচর্চাকে করেছে সহজতর। মানুষের চিন্তা চেতনা খুব সহজে মুদ্রণযন্ত্রের সাহায্যে সংরক্ষণ করা হচ্ছে এবং মানুষে মানুষে চেনা-জানা হচ্ছে নিবিড়তম। ফটোস্ট্যাট প্রয়ােজনীয় কার্য সম্পাদনে উল্লেখযােগ্য ভূমিকা পালন করেছে। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আনন্দদানের পাশাপাশি শিক্ষাদানও চলছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা ও জাতীয় চেতনাকে উজ্জীবিত করার জন্যে চলচ্চিত্র, ইন্টারনেট, সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন আজ বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। কম্পিউটার শিক্ষা সর্বক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। 
বিজ্ঞানের ধ্বংসাত্মক অকল্যাণমূর্তি : বিজ্ঞান যে সভ্যতার শরীরে জীবন প্রতিষ্ঠা করেছে, আজ তারই বিনাশে সে মেতে উঠেছে রুধির তৃষ্ণাতুরা । ছিন্নমস্তকের মতাে। বিংশ শতাব্দীতে সংঘটিত দুটি মহাযুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংসলীলা বিজ্ঞানের দানবীয় শক্তি সম্বন্ধে মানুষের মনে এনেছে এক ঘােরতর আতঙ্ক। ডিনামাইট, বােমারু বিমান, ট্যাঙ্ক, সাবমেরিন ইত্যাদি আবিষ্কারের ফলে মানবজীবনে বিজ্ঞান আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপে পরিণত হয়েছে। বর্তমান কালে বিজ্ঞান কী চায়? জীবন না মৃত্যু? আজ পৃথিবীর মানুষের মনে জেগেছে এ অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কিন্তু দোষ কার? বিজ্ঞানের? না যারা বিজ্ঞানকে স্বার্থ-লােলুপ দানবীয় প্রবৃত্তির চরিতার্থতার জন্যে নির্লজ্জভাবে প্রয়ােগ করছে, তাদের? সেই স্বার্থপর নরপিশাচদের হাতেই। বিজ্ঞান বারে বারে তার মানবিক কল্যাণব্রত থেকে ভ্রষ্ট হয়ে করেছে। নরহত্যার মহােৎসব। দোষ হচ্ছে সেই লােভী শয়তানদের সংকীর্ণ স্বার্থ- বুদ্ধির। দোষ এ শক্তি স্পর্ধিত ধনতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার। কাজেই আজ প্রয়ােজন সামাজিক ব্যবস্থা ও বিজ্ঞান-প্রয়ােগ-পদ্ধতি পরিবর্তনের। 
উপসংহার : অসীম সম্ভাবনাময় বিজ্ঞান মুষ্টিমেয় স্বার্থপর নরঘাতকদের জন্যে আজ সমাজের সার্বিক দুঃখ ও আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে। বিজ্ঞান যদি সর্বধ্বংসী মারণাস্ত্র নির্মাণ থেকে বিরত হয়ে কেবল মানবিক কল্যাণে ব্যবহৃত হয়, তবেই মানুষের দুঃখ রজনীর অবসান হবে। রক্ত- বিপ্লবের হাত থেকে রক্ষা পাবে ধরিত্রী।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment