SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা স্বপ্নের পদ্মাসেতু বা, পদ্মাসেতু

সূচনা : পদ্মা সেতু বাংলাদেশের পদ্মা নদীর ওপর দিয়ে নির্মাণাধীন একটি সেতু। এই সেতু বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযােগ ঘটাবে। এই সেতুকে কেন্দ্র করে মনে মনে স্বপ্ন বুনছে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষ। সকলের আশা এই পদ্মা সেতু বদলে দেবে দেশের অর্থনীতি, উন্নত হবে মানুষের জীবনযাত্রা। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় এই প্রকল্প বাংলাদেশে খুলে দেবে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার। 
বাংলাদেশের ভৌগােলিক প্রেক্ষাপটে সেতুর গুরুত্ব : বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এদেশের বুক চিরে বয়ে চলেছে অসংখ্য নদ-নদী। তাই যাতায়াত ব্যবস্থায় আমাদের প্রতিনিয়তই নৌপথের আশ্রয় নিতে হয়। এতে যােগাযােগ ব্যবস্থায় দীর্ঘসূত্রতা ও মন্থর গতি পরিলক্ষিত হয়। এই যাতায়াত ব্যবস্থাকে গতিশীল করার জন্য প্রয়োজন হয় সেতুর। সেতু থাকলে নদীর দুই পাড়ের মানুষের যােগাযােগ ব্যবস্থায় যেমন উন্নতি হয়, তেমনি ব্যবসায়-বাণিজ্য ভালাে হওয়ায় মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ঘটে। 
পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রেক্ষাপট : পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন। এজন্য এই অঞ্চলের মানুষ স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সরকারের কাছে তাদের দাবি বাস্তবায়নের কথা জানিয়ে এসেছে। অবশেষে এই সেতুর সম্ভাবনার কথা বিবেচনায় এনে ১৯৯৮ সালে প্রথম সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সমীক্ষা যাচাইয়ের পর ২০০১ সালে এই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। কিন্তু অর্থের জোগান না হওয়ায় সেতুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে। পরবর্তীতে পদ্মা সেতু প্রকল্পের যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে। পরে ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে এই সেতুতে রেলপথ সংযুক্ত করে। 
পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রতিবন্ধকতা ও বাংলাদেশের সক্ষমতা : পদ্মা সেতু স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। বিভিন্ন সময় নানা প্রতিবন্ধকতার মুখােমুখি হয়েছে এই প্রকল্প। ২০০৯ সালের পর বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করলে তাদের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি হয়। কিন্তু ২০১২ সালে ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক; অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে পদ্মা সেতু প্রকল্প। পরবর্তীতে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘােষণা দেয়। ষড়যন্ত্রের বাধা জয় করে এগিয়ে চলে পদ্মা সেতুর কাজ; নিজস্ব অর্থায়নে দৃশ্যমান হতে থাকে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। 
পদ্মা সেতুর বর্ণনা : নির্মাণকাজ শেষ হলে পদ্মা সেতুই হবে বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলােমিটার এবং প্রস্থ হবে ২১ দশমিক ১০ মিটার। এই সেতুটি হবে দ্বিতল; ওপর দিয়ে চলবে যানবাহন এবং নিচে চলবে ট্রেন। সেতুটি নির্মিত হবে কংক্রিট এবং স্টিল দিয়ে। সেতুর দুই পাশে ১২ কিলােমিটার সংযােগ সড়ক নির্মিত হবে । নদীশাসনের জন্য চীনের সিনহাইড্রো করপোরেশন কাজ পেয়েছে। আর দুই পাশের সংযােগ সড়ক ও অবকাঠামাে উন্নয়নের জন্য কাজ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের অবদুল মােমেন লিমিটেডকে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বুয়েট এবং কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন অ্যান্ড অ্যাসােসিয়েটস সেতুর নির্মাণকাজ তদারক করবে। পদ্মা সেতুর রেল সংযােগ প্রকল্পে ১৪টি নতুন স্টেশন নির্মাণ এবং ৬টি বিদ্যমান স্টেশন উন্নয়ন ও অবকাঠামাে নির্মাণ করা হবে। নতুন ১৪টি স্টেশন হলাে কেরানীগঞ্জ, নিমতলা, শ্রীনগর, মাওয়া, জাজিরা, শিবচর, ভাঙ্গা জংশন, নগরকান্দা, মুকসুদপুর, মহেশপুর, লােহাগড়া, নড়াইল, জামদিয়া ও পদ্ম বিল। এছাড়া অবকাঠামাে উন্নয়নের ৬টি স্টেশন হলাে ঢাকা, গেণ্ডারিয়া, ভাঙ্গা, কাশিয়ানী, রূপদিয়া ও সিঙ্গিয়া। মূল সেতুর পিলার হবে ৪২টি। এর মধ্যে নদীর মধ্যে ৪০টি ও নদীর দুই পাশে দুটি পিলার থাকবে। নদীর ভেতরের ৪০টি পিলারে ৬টি করে মােট ২৪০টি পাইল থাকবে। এছাড়া সংযােগ সেতুর দুই পাশের দুটি পিলারে ১২টি করে মােট ২৪টি পাইল থাকবে। পিলারের ওপর ৪১টি স্প্যান বসানোে হবে। সােনালি রং সূর্যের তাপ কম শােষণ করে বলে পদ্মা সেতুর রং হবে সােনালি। মূল সেতুর কাজ পেয়েছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। বর্তমানে (অক্টোবর, ২০১৮) সেতুটির কাজ ৬০ ভাগ শেষ হয়েছে। 
পদ্মা সেতু নির্মাণের সম্ভাব্য ব্যয় : ২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১০ হাজার ১৬১ কোটি টাকার পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প পাস করে। এরপর ২০১১ সালে প্রকল্পের সংশােধিত ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা। এরপর ২০১৬ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণের ব্যয় দ্বিতীয়বারের মতাে সংশােধন করা হয়। এসময় সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারিত হয় ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। প্রথম দিকে বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, 1. আইডিবি এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে নিজেদের সরিয়ে নিলে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। 
পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব : পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী। এই সেতু বাস্তবায়িত হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রায় ২১টি জেলার মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে। কেননা এই সেতুর মাধ্যমে রাজধানীর সঙ্গে এই অঞ্চলের মানুষের সরাসরি সংযােগ সাধন ঘটায় অর্থনীতি গতিশীল হবে। নিচে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব তুলে ধরা হলাে -
ক. শিল্পক্ষেত্রে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব : পদ্মা সেতু নির্মিত হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যােগাযােগ ঘটবে। ফলে এই অঞ্চলে গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্প খাত। তাছাড়া এই সেতুকে কেন্দ্র করে গতিশীল হবে পায়রা সমুদ্রবন্দর। ফলে ব্যবসায়ের সুবিধার্থে স্থাপিত হবে নতুন শিল্প-কারখানা। 
খ. কৃষিক্ষেত্রে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব : বর্তমানে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যােগাযােগ ব্যবস্থা ভালাে না থাকায় ওই অঞ্চলের মানুষ তাদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। সেতু নির্মাণের ফলে যাতায়াত ব্যবস্থা গতিশীল হবে। ফলে ওই অঞ্চলের কৃষকদের উৎপাদিত ফসল সহজেই দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌছে যাবে। এতে কৃষকরা ফসলের ন্যায্য মূল্য পাবে। এছাড়া কৃষিক্ষেত্রে নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার সহজ হবে।  ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
গ. দারিদ্র্য বিমােচনে পদ্মা সেতুর প্রভাব : পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের দারিদ্র্য বিমােচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই সেতু নির্মাণের ফলে যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় সেখানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। ফলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তাছাড়া সহজেই ওই অঞ্চলের মানুষ কাজের জন্য অন্যান্য স্থানে যেতে পারবে। 
পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পদ্মা সেতুর ভূমিকা : পদ্মা সেতু প্রকল্পকে কেন্দ্র করে নদীর দুই পাশে বিস্তীর্ণ এলাকায় নদীর পাড় বাধা হচ্ছে। ফলে ওই এলাকায় নদীভাঙন রােধ হবে। এছাড়া নদীর দুই পাশে এবং সংযােগ সড়কের রাস্তার দুই পাশে বৃক্ষরােপণ করা হচ্ছে। এতে এসব এলাকার পরিবেশের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সবুজায়নের ফলে ওই এলাকা মরুকরণের হাত থেকে রক্ষা পাবে। আবার বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করে বলে অবাধে বৃক্ষনিধন হয়। কিন্তু পদ্মা সেতু প্রকল্পের মাধ্যমে ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযােগ দেওয়া সহজ হবে। এতে মানুষের জ্বালানির চাহিদা পূরণ হবে। ফলে বৃক্ষনিধন কমে যাবে এবং পরিবেশের ভারসাম্য সুরক্ষিত হবে। 
উপসংহার: পদ্মা সেতু বাংলাদেশের মানুষের একটি স্বপ্নের নাম, যা দেশের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে দেবে। এই সেতুর ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে উঠবে ব্যাপক শিল্পকারখানা, গার্মেন্ট, গােডাউন প্রভৃতি। ব্যবসায়-বাণিজ্যে আসবে নতুন গতি। নানা অনিশ্চয়তাকে পাশ কাটিয়ে নিজেদের টাকায়। বাঙালির স্বপ্ন এখন বাস্তবের পথে। এই সেতু অচিরেই বদলে দেবে দেশের অর্থনীতি, উন্নত করবে মানুষের জীবনযাত্রা।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
3 comments

3 comments

  • Anonymous
    Anonymous
    08 July, 2022
    I am not an ass. But I think you are an ass. Because you have no rights to insult me like this. I was going to announce your name in my social media for your good works but when I inspected the page to shoe your website design and it was accidentally you asked me "Am I an ass?" finding no other way to escape this question I clicked yes and you again called me ass. So disappointing. And finally I am sure that an ass can't run a computer or operate any digital device and also it can't write comments in English. You are serving our country. We don't expect this kind of behavior from you. You may write there "Sorry! viewer we cant give you the chance to inspect our site" but why this kind of silly questions? Hope you understand.
    • Anonymous
      AMAZON AFFILIATE PROGRAM
      11 March, 2024
      Chop
    • Anonymous
      Anonymous
      12 March, 2024
      🤣🤣🤣🤣🤣🤣
    Reply