SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা বনায়ন

পরিবেশ সংরক্ষণে বনায়ন
বা বৃক্ষের সমাহার  
বা বৃক্ষরােপণ
বা বাংলাদেশের বনায়ন 
বা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বনায়ন 
বা সামাজিক বনায়ন
ভূমিকা : আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বনজ সম্পদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য ও দেশের মােট ভূমির কমপক্ষে শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়ােজন। বনজ সম্পদের বহু বিচিত্র কল্যাণের কথা অনুধাবন করা হলেও বাংলাদেশে এ পরিমাণ মাত্র নয় ভাগ। বনভূমির প্রয়ােজনীয়তার কথা বিবেচনা করে দেশে বনায়নের মাধ্যমে বনজ সম্পদ বৃদ্ধির উদ্যোগ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলাের তুলনায় বাংলাদেশের বনভূমির পরিমাণ নৈরাশ্যজনক কম হওয়ায় দেশকে অগণিত সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এর প্রতিকারের লক্ষ্যে বনভূমির পরিমাণ অবশাই বৃন্ধি করতে হবে।
বাংলাদেশের বনাঞ্চল : প্রাকৃতিক লীলাবৈচিত্র্যের এ দেশে বনভূমি সৃষ্টি হয়েছে বিচিত্ররূপে। প্রকৃতির বৈচিত্র্যের সাথে মিল রেখে সাগর তীরে, পাহাড়ী এলাকায়, সমতল ভূমিতে বনভূমি গড়ে উঠেছে। সুন্দরবন বনাঞ্চল দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সমুদ্র উপকূলবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বিরাজমান। রয়েল বেঙ্গল টাইগার আর হরিণসমৃদ্ধ এ বনাঞ্চলে অসংখ্য মূল্যবান কাষ্ঠসম্পদ দেশের অর্থনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখেছে। নিউজপ্রিন্ট ও অন্যান্য শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ করে সুন্দরবন। দেশের কাঠের অধিকাংশ প্রয়ােজন এখান থেকেই মিটে। চট্টগ্রাম, পার্বত্য জেলাসমূহ ও সিলেট অঞ্চলে পনের হাজার বর্গকিলােমিটারের সমৃদ্ধ বনভূমি রয়েছে। এখানে মূল্যবান কাঠ ছাড়াও প্রচুর বাঁশ ও বেত জন্মে। এ এলাকায় রাবারের চাষ করা হচ্ছে। দেশের অর্থনীতিতে এ অঞ্চলের বনভূমির অবদান গুরুত্বপূর্ণ। ভাওয়াল ও মধুপুরের এক হাজার বর্গকিলােমিটারের বনভূমি বিভিন্ন মূল্যবান কাঠ সম্পদে সমৃদ্ধ। ময়মনসিংহ গাজীপুর ও টাঙ্গাইল জেলা জুড়ে এ বনভূমি ছড়িয়ে আছে। শাল ও গজারি গাছ সমৃদ্ধ রংপুর ও দিনাজপুর জেলায় বিস্তৃতি ৩ বর্গীকিলােমিটারের বনাঞ্চলও উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশের বনাঞ্চল বলতে প্রধানত এ কয়টি স্থান বােঝায়।
বনাঞ্চল উন্নয়ন : বাংলাদেশের প্রয়ােজনের তুলনায় বনভূমির পরিমাণ কম বলে সরকার এ বৈচিত্র্যমুখা উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। বনজ সম্পদ উন্নয়নের সাথে সম্পৃক্ত বনায়ন কর্মসূচির মধ্যেদেশের বনজ সম্পদ সংরক্ষণ, সম্প্রসারণ তথা বনজ সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহারের জন্য বনশিল্প উন্নয়ন সংস্থা গঠন করা হয়েছে। দেশে বন গবেষণা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে। রাবার চাষ, টে্ড পাতা চাষ ও মূল্যবান বৃক্ষরােপণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দেশের বনভূমি বৃদ্ধির জন্য বনায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের বনসম্পদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সরকার দেশের বনাঞ্চল সংস্কার ও উন্নয়নের বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। সরকারের বনবিভাগ থেকে বনাঞ্চল উন্নয়নের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা ছাড়াও সারাদেশের জনগণের মধ্যে বনায়ন সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। প্রতিবছর বৃক্ষরােপণ অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে দেশের বনায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়ে থাকে। সারাদেশে নার্সারিতে চারা, কলম ইত্যাদি উৎপন্ন করে জনগণের মধ্যে বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়। আয়ােজিত হয় বৃক্ষমেলা।
বনসম্পদ উন্নয়ন ও বনায়নের প্রয়ােজনীয়তা : অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য বনসম্পদের উন্নয়নের মাধ্যমে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখা দরকার। দেশে বনভূমির পরিমাণ প্রয়ােজনের তুলনায় অনেক কম। তাছাড়া নানা কারণে দেশের বনভূমি ক্রমেই উজাড় হচ্ছে। দেশে জনসংখ্যার দ্রুত বৃদ্ধিজনিত সমস্যার কারণে অনেক বনভূমি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে পরিবেশগত ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদা মিটানাের জন্য বনভূমির পরিমাণ ক্রমেই কমে আসছে। দেশের যে পরিমাণ বনজ সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে সে পরিমাণ গাছ লাগানাে হচ্ছে না। বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কার্যক্রম হিসেবে বৃক্ষরােপণ মভবান পরিচালিত হলেও তা থেকে আশানরপ সাফল্য লাভ সম্ভব হচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন শিল্প ও প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল আর বনজ সমপদ ব্যবহারের ফলে বুক্ষের পরিমাণ কমছে এবং বনায়ন কর্মসূচির মাধ্যমে সে পরিমাণ বনভূমি তৈরি হচ্ছে। না। সেজন্য বনায়নের মাধ্যমে দ্রুত বনভূমি সম্প্রসারণের প্রয়ােজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়ােজন। 
বনায়নের উপায় : বাংলাদেশে বনায়নের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে এবং দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। বনায়নের জন্য নতুন এলাকা কাজে লাগাতে হবে। নদনদীর কিনারে, পাহাড়ের ঢালু, সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে, সড়কের পাশে গাছ লাগানাের ব্যবস্থা করতে হবে। সে সাথে বর্তমানের বনভূমির গাছ কাটা রােধ করতে হবে। অপরিণত গাছ কখনই কাটা যাবে না। যেসব বনাঞ্চলে গাছ কাটা হবে সেসব অঞ্চলে পুনরায় বনায়নের ব্যবস্থা করতে হবে। বাঘ, হরিণ, হাতি, ভালুক ইত্যাদি প্রাণীর জন্য অভয়ারণ্য সৃষ্টি করা দরকার। অর্থকরী বৃক্ষরােপণের ব্যবস্থা করতে হবে। জনগণকে বৃক্ষরােপণে উৎসাহ দানের ব্যবস্থা নিতে হবে। জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার না করে তার বিকল্প পদ্ধতির প্রয়ােগ করা বাঞ্ছনীয়। বনভূমি থেকে কাঠের চোরাচালান বন্ধ করতে হবে। বনাঞ্চলের সাথে যােগাযােগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করতে বনজ সম্পদ সংগ্রহের ব্যবস্থা করতে হবে। বনজ সম্পদ উন্নয়নের জন্য গবেষণার সুযােগ থাকতে হবে এবং বন কর্মীদের প্রয়ােজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। বনায়নের মাধ্যমে দেশের বনজ সম্পদ উন্নয়নের উদ্যোগ গ্রহণ ও সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনা জোরদার করতে হবে। 
উপসংহার : বাংলাদেশ আয়তনের দিক থেকে একটি ছােট দেশ; কিন্তু জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বের সর্বাদিক ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এদেশে এমন পর্যাপ্ত জায়গা নেই যে,বনায়নের মাধ্যমে বনভূমি সম্প্রসারণ করা যাবে। বরং দেশের যে জমিটুকু বনভূমি হিসেবে বর্তমান রয়েছে তার আয়তন দিন দিন কমছে। সেজন্য বনায়নের ব্যাপারে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে দেশের বনভূমি ধ্বংস হয়ে দেশকে মরুভূমিতে রূপান্তরিত হওয়ার দিকে ঠেলে দেবে। দেশের এ সংকটের কথা বিবেচনা করে দেশের সকল অধিবাসীর সচেতন হতে হবে যাতে বৃক্ষ নিধন বন্ধ করা এবং বনভূমি বৃদ্ধিতে সবাই তৎপর হয়।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment