বা বাংলাদেশের অর্থকরি ফসল চা
বা চা উৎপাদন ও বাংলাদেশ
চা চাষ উপযােগী ভূমি : গ্রীষ্মপ্রধান পার্বত্য দেশেই চা চাষ ভালাে হয়। যেখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় কিন্তু বৃষ্টির পানি জমে থাকে না এমন জায়গায় চা চাষের জন্য বিশেষ উপযােগী। এছাড়া চা গাছের বৃদ্ধি, সতেজতা এবং সজীবতা রক্ষার জন্য বড় বড় গাছ থাকা বিশেষ প্রয়ােজন। সিলেট ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের মত গারাে পাহাড়ে প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যের বিশেষ মিল রয়েছে। এ অঞ্চলে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হয় এবং পাহাড় থেকে পানিও দ্রুত নিচে নেমে যায়। ফলে গারাে পাহাড় চা চাষের উৎপাদন, বৃদ্ধি এবং বিকাশের জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য।
চা উৎপাদনের স্থানসমূহ : বাংলাদেশে চা উৎপাদনের জন্য সিলেট এবং চট্টগ্রাম অঞ্চল বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। এখানে ১৫৮টি চা বাগান রয়েছে। এছাড়া দেশের অন্য কোথাও চা বাগান না থাকলেও দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহের গারাে পাহাড় চা চাষের জন্য এক উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় অঞ্চল। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার একটি বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। চা উৎপাদনে চীন এবং ভারতই শীর্ষস্থানে রয়েছে। এছাড়া, সিংহল, যাভা, যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি দেশেও চা উৎপন্ন হয়।
চাষ প্রণালী : চায়ের জমি প্রথমে ভালভাবে চাষ করে বর্ষাকালে বীজতলায় বীজ রােপণ করা হয়। এরপর, চারাগুলােকে বীজতলা হতে তুলে সারিবদ্ধভাবে লাগানাে হয়। চারাগুলাে বেড়ে উঠলে মাঝে মাঝে ছেঁটে দেওয়া হয়। ফলে গাছের শীর্ষভাগ ঝোপের মতাে আকার ধারণ করে। সেখান থেকে চা পাতা সংগ্রহ, প্রস্তুত এবং বাজারজাত করা হয়। একটি চা গাছ থেকে সর্বোচ্চ যাট বছর পর্যন্ত ভালাে চা উৎপাদিত হয়। এরপর চা গাছ বিভিন্ন প্রকার রােগবালায়ের শিকারে পরিণত হয় এবং উৎপাদন কমে যায়।
চায়ের ব্যবহার : চা একটি উৎকৃষ্ট দেহসহায়ক পানীয় হিসেবে সারাবিশ্বেই জনপ্রিয়। এর কদর ও চাহিদা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। শান্তি, বিনােদনে, রাত্রি জাগরণে, পিপাসা নিবারণে এবং অতিথি আপ্যায়নে চায়ের জুড়ি নেই। চা শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষাসহ সব ঋতুতে বিশেষ উপযােগী। এছাড়া, চা রােগ প্রতিষেধক। সর্দি এবং কাশিতে চা পান করলে এক ধরনের আরামদায়ক অনুরণ সৃষ্টি হয়।
চা শিল্প : চা শিল্প সম্প্রসারণে যে-সব সম্ভাবনা রয়েছে তা কাজে লাগানাে সম্ভব হলে চা উৎপাদন বর্তমানের তুলনায় বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে এবং প্রতিবছর চা রপ্তানী করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে। ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান এবং চা শিল্পের সম্প্রসারণের সাথে সাথে তাদের জীবনমানের উন্নতি হবে। এ শিল্পকে বাচিয়ে রাখতে হলে আমাদের অবশ্যই মানসম্পন্ন চায়ের উৎপাদন বাড়াতে হবে, যাতে বাংলাদেশের চা আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযােগিতা করে স্থান করে নিতে পারে।
বৈদেশিক আয় : চা উৎপাদন ও রপ্তানী করে বাংলাদেশের যথেষ্ট পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয়। এক হিসাব থেকে জানা যায় ১১৯৮-১৯ অর্থ বছরে চা রপ্তানী থেকে আয় হয়েছিল ৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ১৯৯৯-২০০০ অর্থ বছরে ১৫. মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ফলে চা শিল্প বৈদেশিক আয়ের একটি অন্যতম উৎস।
উপসংহার : জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতি তুবরান্বিত করার জন্য কৃষির প্রতি সর্বাধিক নজর দেয়ার বিকল্প নেই। সকল প্রকার কৃষিপণ্যের উৎপাদন আমাদের বাড়াতে হবে। জাতীয় চাহিদা পূরণের পর অতিরিক্ত কৃষিপণ্য রফতানীর সুবন্দোবস্তও নিশ্চিত করতে হবে। কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠার তাগিদ বহুদিন ধরেই প্রদর্শিত হচ্ছে। এদিকেও নজর দিতে হবে। বর্তমান সরকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষিভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আমরা আশা করি, উদ্যোক্তারা সমান ও গুরুত্ব দিয়ে এ ব্যাপারে তাদের ভূমিকাকে ফলপ্রসূ করবে।
Post a Comment