SkyIsTheLimit
Bookmark

বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও প্রতিকারের উপায় রচনা


বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা ও তার সমাধান
বা বাংলাদেশের জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ও তার প্রতিকার

ভূমিকা: সামগ্রিকভাবে আন্তর্জাতিক সমস্যা হিসেবে বর্তমান বিশ্বে জনসংখ্যা সমস্যা অন্যতম প্রধান সমস্যা। এ সমস্যা সমগ্র পৃথিবীর জন্য শুধু ভয়াবহই নয়, হুমকিও সরাসরি। জনসংখ্যার এ অবিশ্বাস্য বিস্ফোরণ প্রতিটি দেশের উন্নতির প্রধান অন্তরায়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতই বাংলাদেশের প্রধান সমস্যাগুলাের মধ্যে জনসংখ্যা সমস্যা অন্যতম। এ প্রসঙ্গে মহাজ্ঞানী 'Aristotle বলেছেন,

'Optimum population is a boon
Over population is a bane'

জনসংখ্যা সমস্যার স্বরূপ : “Human Resource Development' গ্রন্থে বলা হয়েছে, “Man might do anything good for man if the lies in an optmum level". অপরপক্ষে, বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদ টমাস রবার্ট ম্যালথাস জনসংখ্যা সমস্যার স্বরূপ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। তার মতে, জনসংখ্যার আধিক্যই দেশের চরম অর্থনৈতিক দুর্গতি ও অবনতির মূল কারণ। তাঁর মতবাদ অনুযায়ী জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় গুণােত্তর প্রগতিতে আর জীবন ও জীবিকার সংস্থান বাড়ে সমান্তর প্রগতিতে। ফলে প্রতি পঁচিশ বছরে দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়, যার জন্যে জীবন ও জীবিকা সংস্থানের ক্ষেত্রে চরম অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়। উন্নয়ন ও অগ্রগতি ব্যাহত হয়। সর্বোপরি জীবনযাত্রার মান নেমে আসে।

বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ভয়াবহতা : পৃথিবীর ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলগুলাের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের ৩০০০ ভাগের এক ভাগ মাত্র বাংলাদেশ কিন্তু জনসংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীর মধ্যে ১৯৯৯ সালে এদেশে জনসংখ্যা ছিল ১২.৮১ কোটি। এ জনসংখ্যা বেড়ে ২০০৫ সাল নাগাদ ১৫ কোটিতে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ১৯৯১ সালের আদমশুমারী হিসাব অনুযায়ী এদেশে জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার শতকরা ২.১৭ হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি বর্গমাইলে জনবসতির হার ১৭০০ জন। যদি এভাবে জনসংখ্যা বাড়তে থাকে তাহলে, অচিরেই দেশের অবস্থা কিরপ ভয়াবহ হবে তা কল্পনা করা যায় না। বর্তমানে খাদ্যের অভাবে বহত্তর জনগােষ্ঠী দিশেহারা। দেশের সর্বত্র আজ একটানা হাহাকার অন্ন চাই, বস্ত্র চাই, মাথা গোঁজার ঠাই চাই। দেশের সীমিত সমপদের পরিপ্রেক্ষিতে এ বিশাল জনগােষ্ঠী আমাদের উন্নয়নের পথে বিরাট বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে। ফলে বাংলাদেশের জনসাধারণের স্বল্প মাথা পিছু আয় ও নিম্ন জীবনযাত্রার মান ক্রমবর্ধমান দারিদ্রতা, বিপুল খাদ্য ঘাটতিসহ ব্যাপক বেকারত্ব, অপুষ্টি ও নিরক্ষরতাসহ গােটা জাতি দিন দিন অন্ধকারে নিমজ্জিত হচ্ছে।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণ : বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার অত্যন্ত বেশি এর কারণ হিসেবে ভৌগােলিক পরিবেশ, অশিক্ষা, নিম্নমানের জীবন যাত্রা, ধর্মীয় ও সামাজিক প্রভাব খাদ্যাভ্যাস, বাল্যবিবাহ, জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে অজ্ঞতা, মৃত্যুর হার হ্রাস, বিনােদনের অভাব, দারিদ্রতা ও কর্মহীনতা, আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা প্রভৃতিকে চিহ্নিত করা যায়। 

জনসংখ্যা বৃদ্ধির অসুবিধা/ কুফল : যে কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সে দেশের জনসংখ্যার গঠন ও বরণ্টনের উপর নির্ভরশীল। দেশের সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা অধিক হলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হয়। বাংলাদেশের অধিক জনসংখ্যা নিম্নলিখিত সমস্যাগুলাের সৃষ্টি করে : ১। খাদ্য ঘাটতি, ২। বেকারত্ব , ৩। মাথা পিছু আয় হ্রাস, ৪। মূলধন গঠনে বাধা, ৫। কৃষি জমির পরিমাণ হ্রাস, ৬। ভূমির খণ্ডবিখণ্ডতা বৃদ্ধি, ৭। ভূমিহীন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি, ৮। শিল্পোন্নয়নে বাধা ৯। শিক্ষার অভাব, ১০। চিকিৎসার অভাব, ১১। পুষ্টিহীনতা, ১২। সুবিধা লাভে বঞ্চিত, ১৩। কাঁচামাল উৎপাদন ব্যাহত, ১৪ । চাহিদাবৃদ্ধি জনিত মুদ্রাস্ফীতি, ১৫। বাসস্থানের সমস্যা, ১৬। পরনির্ভরশীলতা, ১৭। পরিবেশ দূষণ, ১৮। চলাফেরায় অসুবিধা, ১৯। জীবনীশক্তির হ্রাস, ২০। সর্বোপরি জাতীয় জীবনে নেমে আসে অস্থিরতা। 

সমস্যা সমাধানের উপায় : বর্তমানে জনসংখ্যা সমস্যা যে পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে, তা সমাধানের কোন নির্ভরযােগ্য উদ্যোগ গৃহীত হয় নি। গােটা বিশ্বই আজ জনসংখ্যা সমস্যার শিকার। তাই বিশ্ব মানবতার কল্যাণে জাতিসংঘের মাধ্যমে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারও জনসংখ্যা সমস্যার ভয়াবহতা উপলব্ধি করেছেন। জন্মহার সমস্যার ভয়াবহতা উপলব্ধি করেছেন। এ প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ ও পরিবার পরিকল্পনা সনির্ভর গ্রাম কর্মসূচির আওতাভুক্ত করা হয়েছে। একই সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধি কমানাের জন্যে নিম্নে লিখিত ব্যবস্থাগুলাে অবলম্বন করলে বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। ১। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ২। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, ৩। দেরিতে বিবাহ, বাল্যবিবাহ ও বহুবিবাহ প্রথার অবসান, ৪। শিক্ষা বিস্তারে নারী শিক্ষার প্রসার, ৫। আইন প্রণয়ন ও আইনের প্রতি আস্থা, ৬। জনসংখ্যার পুনর্বণ্টন, ৭। জাতীয় পুনর্বণ্টন, ৮। আত্ম-কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, ৯। বেকারত্ব দূর করা, ১০। জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিতে প্রয়ােগ তথা পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থার মাধ্যমে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণ করে জনসংখ্যা সমস্যার সমাধান করা যায়। 

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি : জনসংখ্যা সমস্যা বাংলাদেশের এক নম্বর জাতীয় সমস্যা। বাংলাদেশের জনসংখ্যা দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে এমন একটি সমস্যা যাকে শুধু প্রতিরােধ করা যায় কিন্তু একবার প্রকট আকার ধারণ করলে তা মানুষের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এমতাবস্থায় পরিবার পরিকল্পনাই একমাত্র মাধ্যম। বাংলাদেশের জনসংখ্যা সমস্যা সমাধান করার জন্যে সরকার পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির ওপর গুরুত্বারােপ করেছেন। কিন্তু ধর্মীয় গোঁড়ামী, শিক্ষার অভাব, জনগণের অজ্ঞতা, দারিদ্রতা, সরঞ্জামের অভাব প্রভৃতি কারণে এ কর্মসূচি তেমন সাফল্য লাভ করতে পারছে না। 

উপসংহার : বাংলাদেশের মত একটি উন্নয়নশীল ও পরিবর্তনশীল রাষ্ট্রকে আত্মনির্ভরশীল উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে গড়তে হলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ অবশ্যই করতে হবে। জন্মনিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি খুব দ্রুত বাস্তবায়িত না হলে জনসংখ্যার বিস্ফোরণের অভিশাপ থেকে এ দেশ কখনােই মুক্ত হবে না। তাই এর আশু সমাধানে পারিবারিক, সামাজিক ও দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment