পিতা-মাতার প্রত্যাশা : "আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে”- প্রত্যেক সন্তানের জন্য পিতা-মাতার এ এক শাশ্বত কামনা। মাতৃগর্ভে মায়ের দেহের বিন্দু বিন্দু রক্তই এক সময় আমাদের অস্তিত্বের একমাত্র অবলম্বন ছিল। আর ভূমিষ্ট হওয়ার প্র পিতা-মাতাই হয়ে পড়েন আমাদের একান্ত আপনার মঙ্গলকামী। পিতা-মাতাই সন্তানের মঙ্গল কামনায় সর্বদা তটস্ব থাকেন। শিক্ষায়-দীক্ষায়, কাজে-কর্মে সন্তানকে একজন আদর্শ মানুষরুপে গড়ে তােলাই প্রতিটি পিতা-মাতার একমাত্র আরাধ্য বিষয়। সন্তানের মঙ্গলের জন্য এমন কোন কাজ নেই যা পিতা-মাতা করেন না।
পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের কর্তব্য : নানাবিধ কর্তব্য কর্মের যােগফল মানব জীবন। আর কর্তব্য কর্মের বেড়াজালে আবদ্ধ মানবজীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূৰ্ণ হচ্ছে পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য পালন। পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য পালন যে কত গুরুত্বপূর্ণ তার প্রামাণ মানবজীবনের অখণ্ডনীয় দলিল কোরআন এবং মানব আদর্শের প্রতীক হাদীসে প্রমাণিত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ ঘােষণা করেন, তােমরা আল্লাহর ইবাদত কর, তার সাথে কোন কিছুকে শরীক করাে না এবং পিতামাতার সাথে উত্তম আচরণ কর,।” উল্লিখিত আয়াতের ভিত্তিতে আমরা অনুধাবন করতে পারি যে, কোন অবস্থাতেই পিতা-মাতার সাথে অশিষ্ট আচরণ করা যাবে না। আমাদের শৈশবে পিতা-মাতা, এতই দুঃখ কষ্ট সহ্য করেন যার ঋণ কোনদিন শােধ হবার নয়। পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্যের তাগিদ দিয়ে বিশ্ব মানবতার কল্যাণের মূর্তপুরুষ হয়রত মুহাম্মদ (সঃ) বলেন, মায়ের পদতলে সন্তানের বেহেস্ত।” তিনি পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য পালনের আরাে তাগিদ দিয়ে বলেন। "পিতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি, পিতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি। তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে পিতা-মাতার আদেশ নিষেদ মেনে চলা সন্তানের অপরিহার্য কর্তব্য। পিতা-মাতার প্রতি অবাধ্যতা ক্ষমার অযােগ্য অপরাধ। বরং এরূপ গােণাহের জন্য পরকাল অবধারিত শাস্তির পূর্বে দুনিয়াতেও তাকে শাস্তি দেওয়া হবে এ সম্পর্কে মহানবী (সঃ) বলেন, "আল্লাহ তায়ালা তার ইচ্ছামত বান্দার সকল গুনাহ মাফ করে দেন। কিন্তু পিতা-মাতার অবাধ্যতার গুণাহ মাফ করেন না বরং এই গুণাহগারকে পার্থিব জীবনে মৃত্যুর পুর্বেই শাস্তি দিয়ে থাকেন। সর্বদা পিতা-মাতার সাথে ভদ্রতা ও নম্রতার সাথে মার্জিত ভাষায় কথা-বার্তা বলা প্রত্যোকটি সন্তানের জন্য একান্ত কর্তব্য। তাছাড়া পিতা-মাতার বৃদ্ধাবস্থায় যখন তারা চলতে ফিরতে অক্ষম হয়ে পড়েন তখন তাদেরকে চলতে ফিরতে সাহায্যে করা, রােগ-ব্যধিতে আক্রান্ত হলে সেবা-যত্ন করা, প্রয়ােজনে আর্থিক সাহায্যে করা প্রত্যেক সন্তানের অবশ্য কর্তব্য। মােটকথা। শৈশবে আমাদের অসহায় মুহূর্তে পিতা-মাতা যেমনি আমাদের একান্ত অবলম্বন ছিলেন ঠিক তেমনিভাবে বৃদ্ধাবস্থায় তাদেরকে ছায়ার মত অনুসরণ করা প্রত্যেকটি সন্তানের জন্য অবশ্য কর্তব্য। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘােষণা করেন, পিতা-মাতার সাথে সৌজন্য মূলক আচরন করবে। তিনি আরাে বলেন পিতার মাতার জন্য সর্বদা দোয়া প্রার্থন কর-
“ হে আল্লাহ, আমার পিতা-মাতার শৈশবে যেমন স্নেহ মমতাদিয়ে আমাকে লালন পালন করেছিলেন, আপনি তাদের প্রতি তেমনি সদয় হােন।”
পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য পালনের মহান দুষ্টান্ত : এই বিশ্ব চরাচরে আজ যারা অমরত্বের স্বাদ নিয়ে মানব হৃদয়ে বেঁচে আছেন তাদের অধিকাংশেরই জীবন ইতিহাস পর্যালােচনা করলে দেখা যায়, তাঁরা প্রক্যকেই পিতৃ-মাতৃভক্তির এক একটি উজ্জল দৃিষ্টান্ত। হযরত বায়েজিদ বােস্তামি, ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যা সাগরের মাতৃভক্তি চিরকালই ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে দীপ্যমান। এছাড়া, হযরত, আবদুল কাদির জিলানী, হাজী মুহাম্মদ মহসীন, জর্জ ওয়াশিংটন ও আলেজান্ডার প্রমুখ ইতিহাস প্রসিদ্ধ ব্যক্তিগণ পিতা-মাতার প্রতি যে শ্রদ্ধাভক্তি দেখিয়েছেন তা যুগ-যুগান্তরে অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
উপসংহার : পিতা-মাতার সন্তুষ্টির ওপর আমাদের জীবনের সার্বিক কল্যাণ নিহিত। আল্লাহ তাআলার আনুগত্য স্বীকারের পরই পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য পালন সকল ধর্মেই স্বীকৃত। কাজেই কোন অবস্থাতেই পিতামাতাকে কষ্ট দেওয়া উচিত নয়। কারণ পিতা-মাতার প্রতি কর্তব্য পালনের মধ্যেই রয়েছে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক শান্তি ও মুক্তির পথ।
Post a Comment