সম্প্রসারিত-ভাব : সুযােগের অভাবে, কিংবা নিয়তির প্ররােচণায় আরাধ্য অর্জিত হচ্ছে না এ ধারণা লালন করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে অনেকেই। অন্যের সৌভাগ্যকে চক্ষুশূল করে ঈর্ষাকাতর হয় মানুষ। সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, লাভ-ক্ষতি সবার জীবনেরই অজ্গ, সবার জীবনেই আসে অপ্রত্যাশিত সুযােগ, আবার অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত হয় মানুষ এ সরল সত্য উপলদ্ধি না করে মানুষ অন্যের অবস্থার প্রতি ঈর্ষাকাতর হয়। সে ঈর্ষা নতুন দুঃখের, অহেতুক অতৃপ্তি আর ইহীনম্মন্যতারই জন্ম দেয়। এ বিচিত্র স্বভাবের দৃষ্টান্ত একেবারে সহজ দৃশ্য। পর্ণকুটিরের অধিবাসী যেমন প্রাসাদোপম অট্টালিকার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে, নিজের বিরূপ ভাগ্যের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে, বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে, বিপুল অর্থ-বিত্তের অধিকারী সেই প্রাসাদোপম অট্টালিকাবাসীও গরিবের ছিমছাম, শ্রীহীন বাড়ির দিকে তাকিয়ে নিরুপদ্রব শান্ত জীবনের পরম সুখের অলীক কল্পনা করে তৃপ্তি বোধ করে। পরকে সুখী মনে করে নিজের দুঃখের মাত্রা বাড়িয়ে তােলার এ মানসিকতা মানুষকে কেবল অতৃপ্ত ও অসন্তুষ্ট করে না, করে তােলে পরশ্রীকাতর। এতে কেবল মর্মবেদনাই বাড়ে। এ হীন মানসিকতার রন্্রপথেই জন্ম নিতে পারে কুপ্রবৃত্তি বা আত্মপীড়নের ইচ্ছা। জন্ম নিতে পারে পরবিদ্বেষী মনােভাব। মানুষ হয়ে উঠতে পারে অন্যের অকলাণ প্রত্যাশী। এ ধরনের নৈরাশ্যের ভয়ংকর শিকার হয়ে নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে চলছে, এমন মানুষও সমাজে চোখে পড়ে। কিন্তু প্রকৃত বিবেচক জানেন, মানুষের অনিঃশেষ আশা-আকাঙ্ক্ষার পূর্ণ চরিতার্থতা কখনই সম্ভব নয়। তাই অন্যের সৌভাগ্য দেখে দুঃখ না পেয়ে নিজের যা কিছু আছে তা নিয়ে তৃপ্ত থাকতে পারলেই অনেক মর্ম্যাতনা থেকে বাঁচা যায়। পাওয়া যায় তৃপ্তি ও আনন্দ। মানুষ যতই উদারভাবে একে অন্যের সৌভাগ্যকে স্বাগত জানাবে, পরস্পরের সুখ- দুঃখের অংশীদার হবে, মানুষের জীবনে ততই শান্তি, আনন্দ ও সম্প্রীতির সুবাতাস বইবে।
রচনা নদীর এপার কহে ছাড়িয়া নিশ্বাস, ওপারেতে সর্বসুখ আমার বিশ্বাস।
Sraboni
... min to read
Listen
মূলভাব : অতৃপ্তি মানবচরিত্রের একটি স্বভাবধর্ম। অধিকাংশ মানুষই স্বীয় অবস্থায় সুখী ও সন্তুষ্ট নয়। সুখী মানুষও নিজের চেয়ে অন্যকে মনে করে বেশি সুখী।
Post a Comment