বা অপসংস্কৃতি ও বাংলাদেশ
ভূমিকা : মানুষ তার নিজস্ব ভাষার মাধ্যমে জ্ঞানের রাজ্যে বিচরণ করে কল্যাণময় বিষয়গুলাে আহরণ করে যে চেতনার উন্মেষ ঘটায় তাই তার সংস্কৃতি। সংস্কৃতি একটা জীবন চেতনা। নিজেকে সভ্য ও. সুন্দর করে বহিঃপ্রকাশ ঘটানােই হচ্ছে সংস্কৃতি। এটা মানুষের এমন একটা আনন্দের বাহন, যার সৌন্দর্য ও প্রেম মূল আশ্রয়। এ আশ্রয় থেকে বিচ্যুত হলেই সংস্কৃতির অপমৃত্যু ঘটে। সংস্কৃতি: কোন জাতি তার দীর্ঘদিনের জীবনের ভিতর দিয়ে যে মানবিক মূল্যবােধ সুন্দরের পথে, কল্যাণের পথে এগিয়ে চলে, তাকে সংস্কৃতি বলা যেতে পারে। অর্থাৎ কোন জাতির পরিচয় তার সংস্কৃতির মাধ্যমে। গতিময়তাই সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য। তাই এর নির্দিষ্ট কোন ছকে বাঁধা গতি নেই। স্থান, কাল পাত্রভেদে এর রূপভেদ দেখা যায় কিন্তু গুণভেদ নেই। সুন্দরভাবে বেঁচে থাকাই সংস্কৃতির মূলমন্ত্র। হিংসা দ্বেষমুক্ত সত্য ও সুন্দরের পূজারীরাই সংস্কৃতির সাধক।
অপসংস্কৃতি :সংস্কৃতির বিকৃত রূপই হচ্ছে অপসংস্কৃতি। সংস্কৃতি যেমন মানুষকে বিকশিত করে, আনন্দিত ও প্রেমময় করে, তেমনি অপসংস্কৃতি মানুষের জীবনে বিকৃতি আনে, চিত্তকে কলুষিত করে, জীবন ও মূল্যবােধকে ধ্বংস করে দেয়। তাই যে আচার মানুষের নৈতিকতাকে বিনষ্ট করে তাই অপসংস্কৃতি। যা সাময়িকভাবে মুগ্ধকর, মােহনীয় অথচ স্থায়ী কোন ফল এনে দেয় না তাই অপসংস্কৃতি।
দেশ ও সংস্কৃতির সম্পর্ক : সংস্কৃতি অর্থ শালীন জীবনবােধ। শিক্ষা ও সভ্যতা থেকে এ জীবনবাধ জন্ম দেয়। দেশের মাটির সাথে আমাদের নিবিড় সম্পর্ক। যে শিক্ষায় দেশপ্রেম, মানব প্রেম জন্ম দেয় না তা হলাে অপশিক্ষা। এ অপশিক্ষা অপসংসকৃতির বাহন। বর্তমানে আমরা রীতিনীতি, দেশজ মূল্যবােধ বিসর্জন দিতে শুরু করেছি। আমাদের সমাজে যে অপসংস্কৃতি প্রবেশ করেছে তা তরুণ সমাজের আচার-আচরণ, পােশাক-পরিচ্ছদ দেখলেই বােঝা যায়। তারা দেশীয় আবহাওয়ায় বিদেশী জীবন বােধকে গ্রহণ করে আত্মতৃপ্তি পাচ্ছে। পাশ্চাত্যের অনুকরণে নাচ, গান, বিকৃত ছবি দেখে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এগুলাের সাথে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির কোন মিল নেই।
অপসংস্কৃতির কুফল : সংস্কৃতি যেমন জীবনকে সুন্দর করে বাঁচার তাগিদ দেয় তেমনি অসংস্কৃতি জীবনকে ধ্বংস করে। অপসংস্কৃতি স্থায়ী নয়, ক্ষণিকের ও চমকের। সেজন্যই এটা ক্ষতিকর। সংস্কৃতি দীর্ঘদিনের লালিত সাধনার ফসল। সেখান থেকে বিচ্যুত হলেই অপসংস্কৃতির অনুপ্রবেশ ঘটে। কোন জাতির জীবনে অপসংস্কৃতি একবার জায়গা দখল করলে তাকে দূর করা দুরূহ। এটা বিবেককে ধ্বংস করে দেয় এবং মূল্যবােধের মৃত্যু ঘটায়।
অপসংস্কৃতির উৎস : ভিনদেশী সংস্কৃতি মানে অপসংস্কৃতি নয়। বিদেশী কোন কিছু গ্রহণ করার আগে বিচার করতে হবে তা আমাদের সহায়ক হবে কি না, আমাদের চিন্তা-ভাবনাকে আরও উদার করবে কি না। যদি না করে তবে তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। সংস্কৃতির নানাদিক আছে। সাম্প্রদায়িকতা, হিংসা, কুটিলতা সংস্কৃতির পথে বাধাস্বরূপ। কারণ, এগুলোই অপসংস্কৃতির উৎস। তাই গ্রহণযােগ্য হলে বিদেশী সংস্কৃতির কোন কোন দিক আমরা চালু করতে পারি।
অপসংস্কৃতি ও যুবসমাজ : যুবকরা দেশের ভবিষ্যৎ। এ ভবিষ্যৎ নষ্ট করার অপকৌশল হল অপসংস্কৃতিকে উৎসাহিত করা এবং তা বাস্তবে প্রয়ােগ করা। আমাদের যুবসমাজের উপর অপসংস্কৃতির প্রভাব খুব বেশি। সিনেমার কাহিনী, নাচ, গান, পােশাক-পরিচ্ছদ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এমনভাবে পরিবেশিত হয় যে, জনগণ বিশেষত যুবসমাজ অতি সহজই বিনোদনের উপকরণ হিসেবে খুঁজে পায়। তারা সিনেমার উদ্ভট, অবাস্তব জীবনকেই অনুকরণ করতে ভালােবাসে এবং ঐসব কায়দা- কানুন মত চলাফেরা করতে স্বাচ্ছন্দ্যবােধ করে। এ কৃত্রিমতাই অপসংস্কৃতির রূপ । এর মূলে রয়েছে চরম দুর্নীতির রাহুগ্রাস। অধুনা সত্য ও সুন্দরকে ত্যাগ করে যুবকেরা উগ্র জীবনযাপনে উৎসাহিত হয়ে উঠেছে। এবং চরম অবক্ষয়ের মাঝে জীবনবােধ খুঁজে বেড়াচ্ছে। অশ্লীল ছবি তরুণ-তরুণীদের এখন প্রিয়। তাদের আচার-আচরণ যেমন কুরুচিপূর্ণ, তেমনি অপসংস্কৃতির সহায়ক। তারা আজ অপসংস্কৃতির স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়েছে।
অপসংস্কৃতি রােধের উপায় : কোন কিছুই পরিকল্পনামাফিক দূর করা যায় না। অপসংস্কৃতিকেও রােধ করা যাবে যদি না সমাজকে আমরা পুরােপুরি দুর্নীতিমুক্ত করতে পারি। কারণ, অপসংস্কৃতির মূল হচ্ছে দুর্নীতি। অবৈধ অর্থ ও সম্পদ অর্জনের রাস্তা বন্ধ করতে হবে এবং সবাইকে সােচ্চার ও সচেতন হতে হবে। বিদেশী কোন সংস্কৃতি প্রচার বা গ্রহণ করার আগে দেখতে হবে এটা আমাদের সহায়ক হবে কি না। যদি না হয় তবে বন্ধ করে দিতে হবে। উদ্ভট কাহিনীপূর্ণ ছবির প্রচলন। বন্ধ করতে হবে। সুস্থ সাবলীল জীবন ব্যবস্থা চালু করতে হবে।
উপসংহার : সংস্কৃতি চর্চার প্রয়ােজন আছে। তবে কোনটা গ্রহণীয় বা কোনটা বর্জনীয় তা আগে ভেবে দেখতে হবে। এ জ্ঞান যুবসমাজকে দিতে হবে। সচেতন হতে হবে রাষ্ট্র পরিচালকদের। মিথ্যা আগ্রহে যদি আমাদের চেতনা বিকশিত হয় তাহলে । অপসংস্কৃতি আমাদের কাছে আদরণীয় হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
Post a Comment