SkyIsTheLimit
Bookmark

বাংলাদেশের পোশাক শিল্প রচনা

পােশাক শিল্প ও তার ভবিষ্যৎ
বা পােশাক শিল্প ও বৈদেশিক মুদ্রা

ভূমিকা : বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে এক দেশ অন্য দেশের ওপর টেক্কা মেরে উপরে উঠার প্রতিযাগিতায় লিপ্ত। এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরােপ, জাপান প্রভৃতি উন্নত দেশের নাম বলা যায়। আর যারা উন্নয়নশীল তারাত উপরে উঠার কথা কল্পনাও করতে পারে না। বাংলাদেশ অনুন্নত দেশ। যে কোন দিক দিয়েই তার উন্নতি ও সমৃদ্ধির গতি বাড়ানাে কঠিন। তবু দু একটি ক্ষেত্রে তার কর্মতৎপরতার কথা উন্নত দেশগুলাের কাছেও প্রশংসিত হয়েছে। যেমন- পােশাক শিল্প। বাংলাদেশের তৈরি পােশাক রপ্তানি বাণিজ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এদেশ শিল্প বাণিজ্যে অনগ্রসর। বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের ক্ষেত্রে অনেকে অনেক পশ্চাৎবর্তী। এতােসব অনগ্রসরতা সত্ত্বেও দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে পােশাক শিল্পের যে অবদান তা রীতিমতাে উৎসাহব্যঞ্জক। আরও কয়েকটি ক্ষেত্রে যেমন ব্যাঙের পা, চিংড়ি মাছ, চা প্রভৃতি বিদেশে রপ্তানি করে আর্থিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করা গেছে।

পােশাক শিল্প ও তার অবস্থা : স্বাধীনতা অর্জনের পর বাংলাদেশ বিদেশে কিছু কিছু শিল্পজাত দ্রব্য রপ্তানি শুরু করে এবং ১৯৮৫ সালে তৈরি পােশাক শিল্পের ব্যাপক সম্প্রসারণ হয়। প্রথম দিকে মাত্র ১৫০টি পােশাক তৈরির কারখানা চালু হয়। এ সীমিত সংখ্যক কারখানা নিয়ে পােশাক শিল্পের যাত্রা শুরু হলেও শিল্পপতিরা ধীরে ধীরে কারখানার সংখ্যা ও কর্মীর সংখ্যা বাড়িয়েছেন। আবার বিদেশের চাহিদা অনুসারে দেশের শিল্পপতিরা পােশাক উৎপাদনে বেশি টাকা বিনিয়নগ করেছেন। বিগত বৎসরগুলােতে আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা প্রচণ্ডভাবে বেড়েছে, শিল্পপতিদের ভূমিকা অধিকতর সক্রিয় হয়ে উঠেছে তার ফলে বর্তমানে পােশাকশিল্প পাোশাক তৈরির ক্ষেত্রে পূর্বাপেক্ষা বহুগুণে সম্প্রসারিত হয়েছে। বর্তমানে কারখানার সংখ্যা ২৮০০ ছাড়িয়ে গেছে। শ্রমিক ও কর্মীর সংখ্যা ১৫ লক্ষের মত। এর মধ্যে ১০% মহিলা। বাংলাদেশ যেসব শিল্পজাত দ্রব্য বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে (জাতীয় আয়) তার মধ্যে পােশাক শিল্পের পরিমাণ ৭০ শতাংশ। হিসাব অনুসারে জানা যায় যে, ১৯৯৫ সালে তৈরি পােশাক বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা ২০০ কোটি ডলার আয় হয়েছে।

বিদেশের বাজার : বিদেশের বাজারের চাহিদার উপর পােশাক রপ্তানির পরিমাপ এবং সে সূত্রে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের পরিমাণ নির্ভর করে। আমাদের দেশের তৈরি পােশাক শিল্পের বড় খদ্দের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ভারতও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পােশাক রপ্তানি করে থাকে এবং আমাদের শিল্পের সঙ্গে কর্মীদের আচরণ, রাজনৈতিক অস্থিরতা এ সবের কারণে পােশাক শিল্পের সমস্যা ভারতের উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধির সহায়ক হয়েছে। তবে ভারত হােসিয়ারি শিল্পে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অনেক অনেক এগিয়ে আছে। পােশাক শিল্পে অবশ্য বাংলাদেশের গৌরব করার মত অবস্থা রয়েছে। মার্কিন যুক্তেরাষ্ট্রের পর আমাদের ক্রেতা হল ইউরােপ এবং কানাডায়। বাংলাদেশের তৈরি পােশাক রপ্তানি হয়ে থাকে। এসব দেশ ছাড়া অন্যান্য যেসব দেশে বাংলাদেশের তৈরি পােশাক রপ্তানী হয়ে থাকে সেগুলাে হল যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানী, বেলজিয়াম, এবং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলােতে। অস্ট্রেলিয়া, জাপান, রাশিয়া এসব দেশেও পােশাক শিল্পের বাজার প্রসারিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

পােশাক শিল্পে উদ্ভূত সমস্যাদি : বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ দারিদ্র্যের শিকার। দরিদ্রতাবশত পরিবারের যুবক, যুবরতীরা অধিকাংশই বেকার। সুতরাং, তারা সস্তা শ্রমের বিনিময়ে পােশাক শিল্পে ও অন্যান্য শিল্পে কর্মরত থাকতে বাধ্য হয়। এক কথায়, দেশের সস্তা শ্রমের শিল্পকে বিস্তৃততর প্রেক্ষাপটে সম্প্রসারণের সুযােগ করে দিয়েছে। অবশ্য এমন কিছু সমস্যা আছে যা শিল্প সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রচণ্ড বিঘ্ন সৃষ্টি করে থাকে। রাজনৈতিক গােলযােগ, ঘন ঘন হরতাল, কর্মীদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি এসব পােশাক শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত করে থাকে। আবার আমদানিকারক দেশগুলাে কোটা পদ্ধতির প্রচলন ও প্রয়ােগ দ্বারা প্রতিবন্ধক সৃষ্টি করে। পােশাক শিল্প উৎপাদনের জন্য যে কাঁচামাল দরকার হয় সেগুলাে বিদেশ থেকে আমদানি করার ব্যাপারে অনেক অসুবিধার সৃষ্টি হয়। কাপড় (১০০ ভাগ), সুতাে, রং, বােতাম, চেইন, ইলাস্টিক, স্ন্যাপ বাটন, কাটুন, কালার সেট এর সব কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় বলে পােশাক উৎপাদনে অনেক ক্ষেত্রে অনাবশ্যক বিঘ্ন সৃষ্টি হয় ও বিলম্ব ঘটে। ইদানীং কোন কোনটি (যেমন কাটুন) আমাদের দেশে তৈরি হওয়ার ফলে পােশাক তৈরিতে গতি বৃদ্ধি পেয়েছে। কাঁচামালের বাদবাকিগুলাে দেশে প্রস্তুত করা গেলে সমস্যা অনেকখানি লাঘব হবে।

উপসংহার : পোশাক শিল্পের উৎপাদনে ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বাংলাদেশ যে ভূমিকা গ্রহণ করে আসছে , তার গুরুত্ব অপরিসীম। তাছাড়া গরিব দেশ বিধায় এ দেশে বেকার সমস্যা প্রকট; পােশাক শিল্পের উৎপাদনে এ যে লক্ষ লক্ষ নরনারী কর্মরত থাকতে পারছে তাতে আংশিকভাবে হলেও বেকার সমস্যার সুরাহা হয়েছে। এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সবারই আন্তরিক সহযােগিতা ও সহমর্মিতার মনােভাব প্রদর্শন করা দরকার। পােশাক শিল্পের সম্প্রসারণে সরকারকেও সদিচ্ছার মনােভাব দেখাতে হবে।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment