SkyIsTheLimit
Bookmark

শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ রচনা

নিরাপদ পরিবেশ ও আমাদের শিশু
বা শিশুদের প্রতি দেশের করণীয়

ভূমিকা : আমাদের শিশুরা আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ, আমাদের আনন্দের উৎস এবং আমাদের দেশ, জাতি ও বিশ্বের ভবিষ্যৎ। এ মন্তব্য সম্পর্কে বিন্দুমাত্র সংশয় প্রকাশের অবকাশ নেই। আজকে যারা শিশু, বিশ্ব পরিচালনার ভার কাল তাদের ওপরই অর্পিত হবে। সুতরাং, শিশুরা এমন এক সম্পদ যার ওপর ভবিষ্যৎ বিশ্ব ও মানবজাতির অস্তিত্ব এবং ভালােমন্দ নির্ভর করছে।

শিশুদের জন্য বয়স্কদের দায়িত্ব : শিশুরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে, সুস্বাস্থ্য, সুশিক্ষায়, নিরাপদে, নিরাপত্তায় বেড়ে উঠতে পারে তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের সকলের, যারা বয়স্ক, যারা অভিভাবক এবং যারা দেশ, সমাজ, বিশ্ব পরিচালনার দায়িত্বে নিয়ােজিত। শিশুদের অস্তিত্ব সুরক্ষায় কল্যাণে ও উন্নয়নে সর্বোচ্চ কর্মসূচী ও কার্যব্যবস্থা গ্রহণ আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাদের ওপর সকল হুমকি, নির্যাতন ও শােষণ যে কোন মূল্যে বন্ধ করতে হবে। সকল প্রকার নিপীড়ন ও সহিংসতা থেকে তাদের মুক্ত করতে হবে। শিশুদের জন্য অহিংস ও নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তােলা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

শিশুদের মৌলিক অধিকার সমূহ : মানুষের জন্য মৌলিক অধিকারগুলাের মধ্যে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসা প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। এ অধিকারগুলাে জন্মগতভাবেই শিশুদের প্রাপ্য। কিন্তু যেহেতু নিজেদের চেষ্টায় এ অধিকারগুলাে অর্জন করা শিশুদের পক্ষে অসম্ভব, সে কারণে তাদের এসব অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের, যারা বয়স্ক মানুষ।

শিশুরা সবচেয়ে অবহেলিত : বিশ্বের সর্বত্রই শিশুদের একাংশ মৌলিক মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। তুলনামূলকভাবে বেশীর ভাগ শিশু পর্যাপ্ত খাদ্য, প্রয়ােজনীয় বস্ত্র ও উপযুক্ত বাসস্থান থেকে বঞ্চিত। উচ্চ শিক্ষা তাে দূরের কথা, তারা আপন ভাষার বর্ণমালা পর্যন্ত পড়তে জানে না। চিকিৎসার সুযােগ-সুবিধাও তাদের নাগালের বাইরে।

শিশুশ্রম : বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ও স্থানে শারীরিক নির্যাতনসহ বিভিন্ন রকম নির্যাতনের শিকার হচ্ছে শিশুরা। অবর্ণনীয় পরিবেশে নানা ধরনের কষ্টকর শ্রম দিয়ে শিশুদের একটা বড় অংশকে আত্মরক্ষার চেষ্টা করতে হচ্ছে। বাধ্যতামূলক শ্ৰমদানসহ নানাভাবে শিশুরা শােষিত হচ্ছে। তাদের নানা অপকর্ম ও অসামাজিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

শিশুরা পরিণত হচ্ছে প্রতিহিংসার শিকার ও বাজারের পণ্যে : শিশুরা এখন বাজারের পন্য ও ব্যাপক হারে অপহৃত ও বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। তারা লাভজনক পণ্যে পরিণত হয়েছে। এছাড়া শিশুরা উচ্চ হারে সহিংসতার শিকার হচ্ছে। যুদ্ধ এবং দাজ্গা- হাঙ্গামায় সবার আগে মরছে শিশুরা। বহু শিশু প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছে। যুদ্ধের ফলে শিশুদের অস্তিত্ব ও জীবন চরমভাবে নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি আমাদের দেশে ও কিছু দিন আগে একটি নামকরা স্কুলের ছাত্রকে স্ত্রাসীরা অপহরণ করে তাদেরকে চাঁদা দেয়ার জন্য। চাঁদা না দেওয়ার কারণে ঐ ছাত্রকে হত্যা এবং টুকরাে টুকরাে করে বস্তায় বন্দী করে পাশের একটি ডােবায় রেখে, সন্ত্রাসীরা চলে যায়। এ অবস্থাতে শিশুদের ভবিষ্যৎ জীবন আজ অন্ধকারে পরিবেষ্টিত হয়ে আছে।

শিশুদের জন্য আমাদের করণীয় : এরকম পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে, শিশুদের নিরাপত্তা, কল্যাণ উন্নয়নে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উভয় পর্যায়ে একযােগে কাজ করতে হবে। যেমন ও দারিদ্র্য বিমােচনে স্বাস্থ্য ও পুষ্টি, শিক্ষা খাতে বিনিয়ােগ, সন্ত্রাস ও সংহিসতার হাত থেকে শিশুদের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে। শিশুর সঙ্গে শিশুর মায়ের নিরাপত্তা ও কল্যাণের বিধান করতে হবে। বলা নিষ্প্রয়ােজন, এককভাবে আমাদের পক্ষে সে দেশের শিশুদের অধিকার, নিরাপত্তা, কল্যাণ ও উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এজন্য আন্তর্জাতিক প্রয়াস, প্রচেষ্টা ও কর্মসূচী আবশ্যক। জনবহুল ও চরম দারিদ্র্যের শিকার, বেশীরভাগ শিশু মৌলিক মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। তাছাড়া তারা নানাভাবে নির্যাতন ও শােষণের শিকার হচ্ছে। শিশুদের ভবিষ্যতের সম্পদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হলে আমাদের আরও যুগােপযােগী কর্মসূচী ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আমরা যদি উপরােক্ত পদক্ষেপগুলাে বিধান করতে পারি তাহলে আমাদের আত্মতৃপ্তির অবকাশ থাকবে না।

উপসংহার : পরিশেষে বলতে হয়, আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যতের অলংকারস্বরূপ। আমাদেরকে শিশুর জন্য একটি চমৎকার বিশ্ব গড়ে তােলার জন্য অঙ্গিকার করতে হবে ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে শিশুদের নিরাপত্তা, শিশু উন্নয়ন ও শিশুর কল্যাণে ব্যাপকভিত্তিক কর্মসূচী গ্রহণ ও শিশুদের সমস্যাগুলােকে সবার উবেধ রেখে সবাইকে এর বাস্তবায়ন করার জন্য আত্মনিয়ােগ করতে হবে।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment