SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ লেখক : রবীন্দ্রনাথ

সূচনা :
রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদায় আসীন এবং বিশ্বসাহিত্যেও তার একটি মূল্যবান আসন রয়েছে। তার প্রতিভা বিচিত্র ও বহুমুখী। তিনি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রবন্ধকার, গীতিকার, সুরকার ও চিত্রকর। এমন বহুমুখী প্রতিভা বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে খুব কম মেলে।
বাল্যজীবন : তাঁর জন্ম কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে। তিনি প্রিন্স দ্বারকানাথের পৌত্র এবং মহষি দেবেন্দ্রনাথের কনিষ্ঠ পুত্র। দ্বারকানাথ ব্যবসা করে প্রচুর বিত্ত ও জমিদারি অর্জন করেন। তাঁর পুত্র দেবেন্দ্রনাথ ব্রাহ্ষ্মধর্ম প্রচার করে সংস্কারমুক্ত মনের পরিচয় দেন এবং মহর্ষি উপাধিতে ভূষিত হন। রবীন্দ্রনাথ উত্তরাধিকার সূত্রে বিপুল সম্পত্তি এবং সংস্কারমুক্ত মনের অধিকারী হন। দেবেন্দ্রনাথের চৌদ্দ সন্তানের মধ্যে তিনি কনিষ্ঠ। ছেলেবেলায় তিনি বিশাল ঠাকুর বাড়িতে ছাকরদের মধ্যে মানুষ হয়েছেন। এই অনাত্মীয় পরিবেশ তাকে কবি ও ভাবুক হতে সহায়তা করে। তিনি মায়ের ভালবাসা পাননি, বউদি কাদম্বিনী দেবীর স্নেহে লালিত হয়েছেন। কাদম্বিনী দেবী তাকে কাব্য রচনায় উৎসাহ যুগিয়েছেন। মাত্র নয় বছর বয়সে তার কবি প্রতিভার বিকাশ ঘটে।
কিশাের জীবন : স্কুলে তাঁর বিশেষ লেখাপড়া হয় নি। তিনি হলেন স্কুল পালানাে ছেলে। তাই সতের বছর বয়সে তাঁকে বিলেত পাঠানাে হয় ব্যারিস্টার বা সিভিলিয়ান হবার জন্যে। তিনি ব্যারিস্টার বা সিভিলিয়ান, কোনটাই হননি। এই বাংলা সাহিত্যের সৌভাগ্য বলতে হয়‌।
দাম্পত্য জীবন : বিলেত থেকে ফিরে আসার পর তাঁর বিয়ে ঠিক হয়। কনে ভবতারিনীর বয়স মাত্র ১০/১১। কনের বাবা বেনী মাধব ঠাকুর এস্টেটের গােমসতা। বিয়ের পর কনের নাম বদলে রাখা হয় মৃণালিনা দেবী। দাম্পত্য জীবনে কবি সুখী হয়েছেন।
পূর্ব বাংলার জীবন : পূর্ব বাংলার সাজাদপুর, শিলাইদহ, পতিসরে ঠাকুরদের বিস্তীর্ণ জমিদারি ছিল। জমিদারি দেখাশােনার জন্য তাকে পাঠানাে হল পূর্ব বাংলায় ১৮৯১ সালে। প্রায় দশ বছর এখানে থেকে তিনি বাংলার মানুষ, জীবন ও প্রকৃতিকে নিবিড়ভাবে দেখেছেন। এই পটভূমিতে লেখা হয় 'সােনাতরী', 'চিত্র, চৈতালী কাব্য। 'গল্পগুচ্ছে 'র গল্পগুলােও এখানকার মানুষ, জীবন ও প্রকৃতি নিয়ে লেখা। এখানেই সূত্রপাত ঘটে 'ছিন্নপত্রে 'র-পত্রাবলীর। এ সময় তার মধ্যে সৃষ্টি অজস্যতা লক্ষ্য করা যায়। 
বােলপুরের জীবন : ১৯০১ সালে তিনি বােলপুরে গিয়ে বিদ্যালয় খােলেন। এই বিদ্যালয়ের নাম রাখা হয় শান্তিনিকেতন এবং তা ধীরে ধীরে বিশ্বভারতীতে রূপ নেয়। বিশ্বভারতী একটি আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়। এ সময় মৃত্যু তার জীবনে একের পর এক হানা দেয়। ১৯০২ -এ স্ট্রী, ১৯০৩ -এ কন্যা, ১৯০৫ -এ পিতা এরং ১৯০৭- ত্রোদশ বছরে বালক পুত্র সমীর মৃত্যু ঘটে। এই দুঃখ তাকে ধীরে ধীরে আধ্যাত্মমুখী করে তােলে এবং তিনি রচনা করেন গীতাঞ্জলি', গীতিমাল্য ও গীতালি' কাব্যাত্য। 
নােবল পুরস্কার লাভ : ১৯১২ সালে তিনি বিলাত যাত্রা করেন চিকিৎসার জন্যে। অসুস্থ শরীর নিয়ে তিনি জাহাজে বসে বসে গীতাঞ্জলি কবিতাগুলাে নিজে ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। ইংরেজি গীতাঞ্জলি প্রকাশিত হলে তিনি নােবেল পুরস্কার লাভ করেন-১৯১৩ সালে। সমগ্র এশিয়ায় তিনি সর্বপ্রথম সাহিত্যের এই সর্বশ্রেষ্ঠ পুরস্কার লাভ করেন। 
মানববাদী কবি রবীন্দ্রনাথ : ১৯১৪ সালে প্রথম মহাযুদ্ধ বাধে। যুদ্ধের মধ্যে যে একটি অশুভ দিক আছে তা কবির চোখে ধরা পড়ে এবং তিনি যুদ্ধের প্রতি ভীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ তিনি স্যার উপাধি ত্যাগ করেন। কবি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় সােচ্চার হয়েছেন। ১৯২০ সালে তিনি ইউরােপ সফরে গিয়ে প্রথম মহাযুদ্ধের ধ্বংসলীলা প্রত্যক্ষ করেন এবং তা তাঁকে প্রবলভাবে অভিভূত করে। এপর তিনি বহুবার ইউরােপ, আমেরিকা এবং চীন, জাপান, রাশিয়া, ইরাক, ইরান ইত্যাদি বিশ্বের প্রায় দেশ সফর করেছেন। ফলে বিশ্বের মানুষের সাথে, তাদের দুঃখ-বেদনার সাথে তার পরিচয় হয়েছে নিবিড়। তিনি উপলদ্ধি করেছেন যে, একটি মহাযুদ্ধ শেষ হতে না হতেই আর একটি মহাযুদ্ধের সম্ভাবনা ঘনিয়ে আসছে। আর একটি মহাযুদ্ধ বাঁধলে মানুষের মনুষ্যত্বের ঘটবে অপমৃত্যু, মানুষের সভ্যতা যাবে ধবংস হয়ে। তাই আসন্ন মহাযুদ্ধের আশঙ্কায় তিনি বিচলিত হয়েছেন। মানবতার ভবিষ্যতে তার বিশ্বাস অবিচল। তাই মৃত্যুর মাত্র তিন মাস পূর্বে তিনি 'সভ্যতার সংকট' প্রবন্ধে বলেছেন : "মনুষ্যত্বের অন্তহীন প্রতিকারহীন পরাভবকে চরম বলে বিশ্বাস করাকে আমি অপরাধ বলে মনে করি।” মানুষের প্রতি বিশ্বাস ও ভালবাসা তার মধ্যে জীবনের শেষ মূহুর্তে পর্যন্ত স্থির ও অবিচল ছিল।. 
উপসংহার : মানুষের প্রতি, জীবনের প্রতি তাঁর অতল গভীর প্রীতি ও মমত্ববােধ। তিনি মানুষকে, জীবনকে, প্রকৃতিকে গভীরভাবে ভালবেসেছেন। জীবনের প্রতি প্রগাঢ় ভালবাসাই তাঁর কাব্যের মূল সুর। এই মধুময় পৃথিবীর প্রতি ভালবাসা তিনি উজাড় করে দিয়েছেন। মৃত্যুর মাত্র কয়েক মাস আগে তিনি উচ্চারণ করেছেন: 
এ দ্যুলােক মধুময়, মধুময় পৃথিবীর ধুলি 
অন্তরে নিয়েছি আমি তুলি, 
এই মহামন্ত্র খানি 
চরিতার্থ জীবনের বাণী।
মানুষের কবি রবীন্দ্রনাথ বাংলা ও বিশ্বসাহিত্যে কালে কালে নন্দিত হবেন।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment