SkyIsTheLimit
Bookmark

সমাজ জীবনে দুর্নীতি রচনা

সামাজিক দুর্নীতি ও বাংলাদেশ
বা সামজিক সমস্যা ও বাংলাদেশ

ভূমিকা : বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ। স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাস দীর্ঘদিনের না হলেও সামাজিক অবস্থান দীর্ঘকালের। বিট্রিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসকেরা প্রায় দুশ বছর এ ভারতবর্ষ শাসন করে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাজনের পর থেকে প্রায় ২৫ বছর পাকিস্তানি স্বৈরাচারী শাসকগােষ্ঠী এদেশ শাসন করে। এদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন প্রকার সামাজিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এর মধ্যে সামাজিক দুর্নীতি অন্যতম।

দুর্নীতির প্রকারভেদ : বাংলাদেশে যেসব সামজিক সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে দুর্নীতি বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। সামাজিক দুর্নীতিগুলাে হলাে : চোরাচালান, ঋণ খেলাপী, সরকারি, সম্পত্তি অবৈধ দখল, বিদ্যুৎ চুরি, গ্যাস চুরি, পানি চুরি, আয়কর- বিক্রয়কর ফাকি, শুল্ক ফঁাকি, চাকরির নামে কোম্পানি খােলা, পরীক্ষার হলে দুর্নীতি ইত্যাদি। এছাড়াও বর্তমান বেশ কয়েকটি দুর্নীতি মানব জীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে। যেমন : সন্ত্রাস, যৌতুক এবং নির্বাচন ইত্যাদি।

চোরাচালান : চোরাচালানের মাধ্যমে বিদেশী পণ্যের ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটে। সরকারি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে চোরচালানকারীরা কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এর ফলে দেশীয় পণ্য মার খাচ্ছে। শিল্পের বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে। কর্মসংস্থান কমে যাচ্ছে। এছাড়া মাদকদ্রব্য, বেআইনি অস্ত্র ইত্যাদি আমদানির ফলে সামাজিক দুর্নীতি বেড়ে যাচ্ছে। চোরাচালানের মত ভয়াবহ দুর্নীতিকে যদি নাশ করা না যায়, তাহলে সামাজিক অবস্থা মারাত্মকভাবে ধ্বংসের সম্মুখীন হবে।

ঋণ খেলাপী : বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকার ঋণ প্রথা চালু রয়েছে। এর মধ্যে কৃষি, হাউজ, কর্মসংস্থান, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রভৃতি খাতে ঋণ প্রদান করে থাকে। এসকল গ্রাহকগণ তাদের প্রয়ােজনে ঋণ গ্রহণ করে সময় মত পরিশােধ করতে পারে না। দীর্ঘদিন ঋণের টাকা পরিশােধ না করায় সে টাকা বােঝা হয়ে দাঁড়ায়। তখন ঋণ পরিশােধ করতে না পারায় দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করে। আবার অনেকে ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়।

সরকারি সম্পত্তির অবৈধ দখল ও আত্মসাৎ : এদেশে অনেক সরকারি সম্পত্তি রয়েছে। রাস্তার দুপাশ, রেললাইন , ষ্টেশন, শিল্প-কারখানা, নদীর দু'পাশ ইত্যাদি। এসব স্থান দখল করে দিব্য পসার গড়ে তুলেছে। এগুলাে টিকিয়ে রাখার জন সরকারি কর্মকর্তার সান্নিধ্য লাভ করে। একসময় তারা এগুলাের মালিক বনে যায়।

বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি চুরি : সমাজে সুবিধাবাদী একশ্রেণীর মানুষ আছে। এরা বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং পানির বিল ঠিক মত পরিশােধ না করে বিলের বােঝা গড়ে তােলে। যখন এসব লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়, তখন একশ্রেণীর সুবিধাবাদী কর্মচারী কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়ে কিংবা রাজনৈতিক দলের খােড়া অজুহাতে পার হয়ে যায়। এসব কারণে সামাজিক দুর্নীতি বিস্তার লাভ করেছে।

আয়কর-বিক্রয়কর ও শুল্কফাঁকি :- আয়কর, বিক্রয়কর এবং শুল্ক রাজস্ব আয়ের অন্যতম শাখা। সমাজে উচ্চ পর্যায়ে অবস্থানকারী ব্যক্তিদের নির্ধারিত আয়-ব্যয়ের ওপর কর ধার্য করা হয়। আমাদানিকৃত দ্রব্যের ওপর শুর বসানাে হয়। এসকল সুবিধাভােগী ব্যক্তিগণ কর এবং শুল্ক ফাঁকি দেয় এবং দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করে।

চাকরির নামে দুর্নীতি : অনেক কোম্পানি এবং প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সেখানে শিক্ষিত, কর্মদক্ষ লােক নিয়ােগ করা হয়ে থাকে। তাদের নিকট হতে মােটা অঙ্কের টাকা গ্রহণ করা হয়। এক সময় দুর্নীতিবাজ, অসাধু মালিকগণ লােকান্তরে পাড়ি জমায়।

বিভিন্ন পরীক্ষায় দুর্নীতি: বর্তমানে পরীক্ষায় দুর্নীতি শুধু ছাত্রদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। ছাত্র শিক্ষক, অভিভাবক, পুলিশ, বিচারপতি থেকে শুরু করে সর্বস্তরে দুর্নীতি বিস্তার লাভ করেছে। ছাত্ররা পাশের জন্য নকল নামক দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করে। আর তা সংগ্রহ করে অভিভাবক এবং সুবিধাবাদী পুলিশ। শুধু তাই নয়, এস, এস, সি থেকে শুরু করে বি, সি, এস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস একটি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এসবই সম্ভব হচ্ছে একশ্রেণীর সুবিধাতোগী ব্যক্তির কারণে ।

সন্ত্রাস : অন্যের মনে ত্রাস সঞ্চার করে এমন কোন কাজকে সন্ত্রাস বলে। সন্ত্রাস সামাজিক ত্রাসের প্রতিচ্ছবি। মানবদেহে রােগজীবাণু সংক্রমণের মত সন্ত্রাস নামক দুর্নীতি স্বাভাবিক জীবনকে অস্থির করে তুলেছে। এজন্য কালাে টাকার দৌরাত্ম, বেকারত্ম, ক্ৰমবর্ধমান বৈষম্য, মূল্যবােধের অবক্ষয়কে চিহ্নিত করা যায়। দুঃশাসন, অনাচার, অরাজকতা, উচ্চাভিলাষ, অর্থনৈতিক অবস্থার অনুকূল পরিবেশে দুর্নীতি মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে।

যৌতুক প্রথা : ক্ষতিকর দুর্নীতিমূলক রীতিগুলাের মধ্যে যৌতুক প্রথা অন্যতম। এ সমস্যা সামাজিক জীবনে নিয়ে আসে বিপুল দুঃখ এবং দুর্দশা। পুরুষ শাসিত সমাজে যৌতুকের কবলে পড়ে অগণিত নারী মানবেতর জীনব যাপন করছে।

উপসংহার : সামাজিক জীবনে সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করতে হলে উপরােক্ত সমস্যা গুলো দূর করতে হবে। এজন্য শিক্ষার প্রসার, সামাজিক সচেতনতা, প্রচার মাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে, তাহলে দুর্নীতি নামক অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment