'Sports makes a man strong,
Sports makes a man live long.'
খেলাধুলার প্রকারভেদ: পৃথিবীতে বিভিন্ন প্রকারের খেলাধুলা রয়েছে। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, শুটিং, সাঁতার, টেনিস, হাড়ড়ু, কাবাড়ি, দাঁড়িয়াবান্দা, গােল্লাহট, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন ইত্যাদি ছাড়াও আরও অসংখ্য রকমের খেলা রয়েছে। এর ভেতর কিছু কিছু খেলা দেশীয় পর্যায়ে আর কিছু খেলা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
শরীর গঠনে খেলাধুলা: খেলাধুলা মানুষের শরীর ও মন সতেজ করে। বলা হয়ে থাকে স্বাস্থ্যই সম্পদ। আর সুস্থ শরীরই মানুষকে দান করতে পারে দুর্দম তেজস্বিতা ও অদম্য উদ্দীপনা। জীবনে স্বাস্থ্যের অপরিহার্যতার কথা বিবেচনা করে মানুষ সুস্থ শরীরের জন্য যুগ যুগ ধরে খেলাধুলার অনুশীলন করে আসছে। দেহের পেশি গঠনে খেলাধুলা সহায়ক ভূমিকা পালন করে। দেহকে সুস্থ, কর্মক্ষম ও প্রাণ-প্রাচুর্যে পূর্ণ করার জন্য খেলাধুলা অপরিহার্য। সুস্থ শরীর মনের যে শক্তি ও সুদৃঢ় বুনিয়াদ রচনা করে দেয়, তাতে মানুষ পরবর্তীকালে জীবনযুদ্ধে মনােবল না হারিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সামর্থ্য অর্জন করে।
খেলাধুলা ও শৃঙ্খলা: শৃঙ্খলাবােধ শুধু ব্যক্তির নয়, সমগ্র দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নতির এক প্রধান হাতিয়ার। ক্লীড়াঙ্গনই শৃঙ্খলাবােধের সূতিকাগৃহ। এরই নিয়মিত অনুশীলনে মানুষ আয়ত্ত করে দেহ-মনে শৃঙ্খলা। জীবন সুস্থ ও সবল হয়ে ওঠে, সামষ্টিক চেতনার উন্মেষ ঘটে, দলগত ঐক্যবােধে অনুপ্রাণিত হয়। ব্যক্তির সংকল্প মিশে যায়, সমষ্টির সংকল্পে। ব্যক্তিগত দুর্বলতা হারিয়ে যায় দলগত প্রচেষ্টার মধ্যে। গােটা দল সর্বশক্তি উজাড় করে জয়ের প্রত্যাশায় ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিপক্ষের ওপর। একক নৈপুণ্য মুখ্য নয়, দলগত সংহতিই সেখানে প্রধান। আর এ দলগত শৃঙখলাবােধই জাতির অগ্রগতির অন্যতম ভিত্তি। সেজন্যই প্রত্যেক সমাজ-রাষ্ট্রে খেলাধুলার এত কদর।
খেলাধুলা ও চরিত্র গঠন: খেলাধুলা এক অনাবিল আনন্দের চিরন্তন উৎস। এ আনন্দের মধ্য দিয়েই গড়ে ওঠে মানুষের শরীর, মন ও চরিত্র। সেই চরিত্রই ভবিষ্যতের জীবনযুদ্ধে সফলতার প্রধান সােপান। খেলাধুলার মাধ্যমেই জীবনের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়। খেলাধুলাই মানুষকে দেয় জীবনে ভারসাম্যের শিক্ষা। খেলার মাঠের মতাে জীবনের প্রাঙ্গণেও সাফল্যের জন্য আছে প্রতিযােগিতা, আছে বিজয় উল্লাস, পরাজয়ের গ্লানি। তাই দরকার শান্তচিত্তে তা মেনে নেওয়ার মানসিক ক্ষমতা। খেলার মাধ্যমেই সে সংগ্রহ করে জীবনে শিষ্ট আচরণের দীক্ষা। সংগ্রহ করে চারিত্রিক দৃঢ়তা, মানসিক বলিষ্ঠতা। খেলাধুলা একদিকে তার চরিত্রকে দেয় সংকল্পের দৃঢ়তা, প্রতিযােগিতার একাগ্রতা; অপরদিকে দেয় পরাজয়ের সহনশীলতা, হৃদয়ের উদারতা।
খেলাধুলা ও শিক্ষা: শিক্ষা নিছক পরীক্ষা উত্তরণের প্রতিশ্রুতি মাত্র নয়, রুজি-রােজগারের উপকরণও নয়, নয় মানসিক ব্যায়ামের আখড়া। শিক্ষা সমগ্রজাতির অগ্রগতির উপায় উদ্ভাবন করে মানুষের সুপ্ত প্রতিভার উন্মােচনে প্রেরণা যোগায়। দেহ-মনের সুশৃঙ্খল সামঞ্জস্য বিধানের মধ্যেই আছে মানুষের পূর্ণতার সন্ধান । খেলাধুলার আনন্দস্পর্শে দেহ-মন হয়ে ওঠে সজীব ও প্রাণময়। একদা শিক্ষার সঙ্গে ছিল খেলাধুলার অহি-নকূল বিরােধ, ছিল উপেক্ষা, নির্বাসন। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় খেলাধুলা আর অনাদৃত নয়। শিক্ষা তাই সাবলীল স্বাচ্ছন্দ্য জীবনপ্রবাহে উদ্ভাসিত। মুক্তির আনন্দে উচ্ছলিত। শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য যদি হয় সুস্থ জীবনবােধের উজ্জীবন, তবে খেলাধুলার গুরুত্ব সেখানে সর্বাধিক।
খেলাধুলা ও জাতীয়তাবােধ: খেলাধুলা মানুষের জাতীয়তাবােধেরও জাগরণ ঘটায়। জাতীয়তাবােধ প্রত্যেক জাতির এক অমূল্য সম্পদ। এ মহৎ অনুভবেই দেশের গৌরব হয়, জাতির ললাটে অঙ্কিত হয় জয়ের তিলক। একদল খেলােয়াড় যখন ভিন্ন দেশের ভিন্ন দলের সঙ্গে প্রতিযােগিতায় অবতীর্ণ হয়, তখন সেই দলের সঙ্গে সেই দেশের অগণিত মানুষের আকাঙ্কষা, সংগ্রামী চেতনা এক উজ্জ্বল আদর্শবােধ জাগিয়ে তােলে। সেই দল তখন আর কয়েকজন খেলােয়াড়ের সমষ্টিমাত্র নয়, সমগ্র দেশের অগণিত মানুষের প্রতিনিধি। ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে তখন সবাই এক দল এক প্রাণ। জাতীয়তাবােধের চেতনা থাকে বলেই প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলাে চারিত্রিক দৃঢ়তায়, অনমনীয় মনােভাবে, নিয়ম-শৃঙ্খলার অনুসরণে এবং সংগ্রামী সংকল্পে দুর্জয় হয়ে ওঠে, তাদের প্রতিযােগিতাটি হয়ে ওঠে ক্রীড়া-নৈপুণ্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ও অনুপম শিল্পশ্রীর স্মরণীয় আসর।
খেলাধুলা ও বিশ্বভ্রাতৃত্ববোেধ: খেলাধুলা মানুষে মানুষে ব্যবধান ঘুচিয়েছে, পরকে আপন করেছে। এরই মাধ্যমে এক দেশ অন্য দেশে শুভেচ্ছার বার্তা পাঠিয়েছে, প্রীতির সম্পর্ক সুদৃঢ় করেছে। পারস্পরিক বােঝাপড়ার ক্ষেত্র হয়েছে প্রসারিত। ঠাণ্ডা লড়াইয়ের উগ্র প্রতিযােগিতা হ্রাস পেয়েছে। খেলাধুলা মানুষে মানুষে প্রীতির সেতুবন্ধন। খেলাধুলা বিশ্বভ্রাতৃত্ববােধ জাগরণের প্রধান উৎস। ভ্রাতৃত্ববােধের উন্মেষে প্রত্যক্ষ আনন্দ-আসর। জয়- পরাজয়ের হিসাবটা এখানে বড় নয়। প্রতিযােগিতার আসরে, উন্নতমানের ক্রীড়া-কৌশলে, হাজার হাজার ক্রীড়া-প্রেমিকের মন জয় করে ক্রীড়াবিদরা। দর্শকরা মুগ্ধ হয়, প্রীতির হাত বাড়িয়ে দেয়, অকুণ্ঠ প্রশংসায় অভিনন্দিত করে । ক্রিকেট, ফুটবল, টেনিস, টেবিল-টেনিস, ব্যাডমিন্টন ইত্যাদি কত না ক্রীড়া-প্রতিযােগিতার আসর বসে দেশে দেশে। এভাবেই মানুষ সঞ্চয় করে ভ্রাতৃত্ববােধের এক মহৎ অভিজ্ঞতা; লাভ করে মনুষ্যত্বের দুর্লভ ঐশ্বর্য।
উপসংহার: খেলাধুলায় প্রতিযােগিতার মনােভাব মানুষকে দৃঢ়সংকল্প করে, চলার পথে দেয় সহিষ্ণুতার দীক্ষা, নমনীয় পৌরুষকে দীপ্ত করে, ছিন্ন করে সংকীর্ণতার আবরণ। জয়-পরাজয়ে, সফলতা-ব্যর্থতায় সেখানে মানুষ লাভ করে এক সুশৃঙ্খল জীবনবােধ। খেলার মাঠও মানুষের অন্তহীন সাধনার পীঠস্থান। আমাদের দেশেও সার্বিক প্রগতির জন্য প্রয়ােজন দেহ-মনের স্বাভাবিক বিকাশের পথ উন্মুক্ত করা। প্রয়ােজন সংকীর্ণ দলীয় রাজনীতির উর্ধ্বে উঠে খেলাধুলার অঙ্গনে নতুন প্রতিভার অন্বেষণ, পরিচর্যা ও ভবিষ্যৎ নিশ্চয়তার প্রতিশ্রুতি। তবেই দেশ নবজাগ্রত এক চেতনায় আবার উদ্বুদ্ধ হয়ে ফিরে পাবে তার হৃত গৌরব, পারবে সাফল্যের বিজয়মাল্য ছিনিয়ে আনতে।
Post a Comment