'এ বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর
অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।'
সম্প্রসারিত-ভাব : মানব সভ্যতা বিকাশে নারী-পুরুষের সমান অবদান রয়েছে। পুরুষের পক্ষে নারীর সাহায্য ছাড়া কোন কিছুই করা সম্ভব নয়। কিন্তু তারপরও আমরা মধ্যযুগীয় বর্বর চিন্তা থেকে মুক্ত হতে পারি না। যে নারী ছাড়া আমাদের ঘর গেরস্থালীর সমস্ত কিছু অচল হয়ে পড়ে। বিপদে দিশেহারা হয়ে পড়ি। সেই নারীকে আমরা আজো পশুর মত কেনা-বেচা করি। দাম্পত্য সম্পর্কের মত এমন একটা মধুর সম্পর্ক স্থাপন করতে গিয়ে আমরা অর্থ-বৃত্ত চেয়ে বসি রাঘব বােয়ালের মত। কন্যাদায়গ্রস্ত পিতার টুটি চেপে ধরে কেড়ে নিয়ে আসি যতদূর সম্ভব। বিয়ের নামে প্রচলিত এ কনা-বেচার প্রথাকেই বলা হয় পণপ্রথা বা যৌতুক প্রথা। যার বলি হচ্ছে আমাদের সমাজের অধিকাংশ নারী। যৌতুকের দায়বদ্ধতা থেকে নিষ্কৃতির জন্য ভিটেমাটি বিক্রি করতে হয় দরিদ্র পিতাকে। যৌতুক প্রদানের ব্যর্থতায় সংসার ভাঙে নব বধূর। মধুর স্বপ্ন বিষিয়ে উঠে জীবনের শুরুতেই। অত্যাচারিত হয়ে আত্ম-বিসর্জনের পথও বেছে নিতে হয় অনেককে। পত্রিকা খুললেই যার প্রমাণ আমাদের দেশে দৈনিক দশ বিশটা আর দশটা সাধারণ সংবাদের মতােই পাওয়া যায়। কবে কে, কোথায়, কিভাবে এ ভয়ানক ব্যাধিরূপী সামাজিক প্রথা সৃষ্টি করেছিল যা আমাদের দেশ, জাতি, সমাজ আজ সভ্যতার চরম শিখরে এসেও পরিত্যাগ করতে পারেনি। সত্যিই এ বড় লজ্জার ব্যাপার। মানুষ যেমন ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে তা ক্রমেই বেড়ে চলে, তার হাত থেকে কোনক্রমেই পরিত্রাণ লাভ করা যায় না, যৌতুক নামক ভয়ানক এ সামাজিক ব্যাধি থেকেও তেমনি আমরা কেউই রেহাই পাচ্ছি না। একবার যেমন নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি, তেমনি অন্যকে অত্যাচারিত করছি। আসলে এ সামাজিক ব্যাধিটি আমাদের মানসিকতায়ও পচন ধরিয়েছে। এর থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত। তা না হলে মানবতার অপমানের পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে না। এ জন্য প্রয়ােজন সর্বাগ্রে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন এবং বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলন। বিশেষ করে নারীদেরকে সচেতন করে তােলা। নারীর মূল্যবােধ জাগ্রত করা, তাদেরকে স্বাবলম্বী করে তােলা এবং অধিকার সচেতন করে তােলার মাধ্যমেই এ ব্যাধির চিকিৎসা করতে হবে। তা না হলে এর কালাে থাবা থেকে আমরা কেউই মুক্তি পাব না। কারণ, এটা সত্যিই এক ভয়ানক ব্যাধি।
Post a Comment