বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গি ও ইতিবাচক দিক : মুক্তবাজার অর্থনীতিকে ইংরেজিতে "Free Enterprise Economy' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে অস্বাভাবিক মুনাফার সুযােগ নেই। ক্রেতা-শােষণ এখানে অন্য যে কোনাে পদ্ধতি থেকে কম। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সম্পদের অধিকতর সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেয়া হয়। জনৈক অর্থনীতিবিদ মুক্তবাজার অর্থনীতির সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন The free enterprise economy is a market oriented economy in which the means of production and business are owned by private individuals and where there is least governmental interference in the performance of economic activity." আধুনিক অর্থনৈতিক নীতিমালায় মুক্তবাজার অর্থনীতি আদর্শতম ব্যবস্থা। এর অনেক সুবিধা রয়েছে। অস্বাভাবিক মুনাফার সুযােগ নেই বলে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে ক্রেতাসাধারণের সুবিধা রয়েছে। এ ব্যবস্থায় সম্পদের সমাবেশ ঘটে বেশি এবং সম্পদের অধিকতর সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করাও সম্ভব হয়। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রযুক্তির সর্বাধিক দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করা হয়। এর ফলে দ্রব্যের মূল্যও কম হয়। ক্রেতা শােষণের সুযােগ তুলনামূলকভাবে কম থাকে বলে মুক্তবাজার অর্থনীতি ক্রেতা সাধারণের কাছে খুবই জনপ্রিয়। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বাণিজ্যক্ষেত্র প্রসারিত হওয়ার সুযােগ থাকে বেশি।
নেতিবাচক দিক ও প্রেক্ষিত বাংলাদেশ : কোনাে কোনাে অর্থনীতিবিদ মনে করেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির প্রচলন হলে দেশের নিজস্ব শিল্পের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এমনকী দেশীয় শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়। বিদেশি শিল্পের সঙ্গে দেশীয় শিল্প প্রতিযােগিতায় টিকে থাকতে পারে না। ফলে দেশীয় শিল্পের বিকাশ রুদ্ধ হয়। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে অন্য দেশের পণ্যের বাজার সৃষ্টি হওয়ার অবাধ সুযােগ থাকে বলে দেশীয় পণ্য কিনে হও ধন্য স্লোগানটি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। মুক্তবাজার অর্থনীতির ফলে দেশের মানুষ বিদেশি পণ্য গ্রহণ করে, দেশীয় পণ্য বর্জন করে। ফলে তা জাতীয় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু থাকলে উন্নত দেশের শিল্পগুলাের সঙ্গে অনুন্নত কিংবা উন্নয়নশীল দেশের শিল্পগুলাে প্রতিযােগিতায় টিকে থাকতে পারে না। মুক্তবাজার অর্থনীতির ফলে সচল শিল্পও রুগণ হয়, আর রুগণ শিল্প ধ্বংস হয়। এর ফলে দেশে বেকারত্ব বেড়ে যায়। মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু হওয়ার ফলে আমাদের দেশীয় শিল্পের বিকাশ ত্বরান্বিত হতে পারছে না, বিশ্ববাজারে প্রতিযােগিতার মাধ্যমে আমাদের শিল্পগুলাে টিকে থাকতে পারছে না। মুক্তবাজার অর্থনীতির সুফল সম্পর্কে বলতে গিয়ে অনেকেই আবার উদাহরণ টেনে বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতির ফলেই আমাদের পােশাকশিল্প বিশ্ববাজারে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। ফলে দেশীয় শিল্পের বিকাশ যেমন ঘটছে, তেমনি অনেক লােকের কর্মসংস্থানও হচ্ছে। আমাদের দেশে মুক্তবাজারের আবশ্যকতা রয়েছে বলে অর্থনীতিবিদদের অনেকেই মনে করেন। তাঁদের মতে, মুক্তবাজার অর্থনীতি চালু থাকলেই দেশীয় বাজার, দেশীয় শিল্প মার। খাবে- এমন কোনাে কথা নেই। এটি নির্ভর করে শিল্পের যােগ্যতার ওপর। মুক্তবাজার অর্থনীতিতে প্রতিযােগিতার কারণে সরকারি অর্থের অপচয় রােধ করা যায় বলেও কোনাে কোনাে অর্থনীতিবিদ মনে করেন।
মুক্তবাজার অর্থনীতিতে যােগ্যতার মূল্যায়ন : মুক্তবাজার অর্থনীতিতে শিল্পের প্রতিযােগিতায় টিকে থাকতে হলে দেশীয় শিল্পকে তুলনামূলক যােগ্যতা প্রমাণ করতে হবে। আমাদের দেশে যেসব শিল্পে সস্তা শ্রমে অধিক উৎপাদন করা যায়, ঐ সমস্ত শিল্পের উৎপাদন বিকাশের ক্ষেত্রে মুক্তবাজার অর্থনীতি ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে পারে।
উপসংহার : মুক্তবাজার অর্থনীতি প্রতিযােগিতামূলক অর্থনীতি। উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অধিকতর দক্ষতা নিশ্চিত করতে না পারলে বাজার অর্থনীতিতে আমাদের কল্যাণ আসবে না আমাদের ধ্যান- ধারণাকে সংস্কারের উর্ধ্বে উঠে, অন্ধ বিশ্বাসকে জয় করে এগিয়ে যেতে হবে। আজকের বিশ্ববাস্তবতায় মুক্তবাজার অর্থনীতির বিকল্প নেই। আমাদের অর্থনীতিতে এ বাজার ব্যবস্থার সুফল নিশ্চিত করতে আরও সম্পদের বৈষম্য কমিয়ে আনতে হবে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে, ভৌত অবকাঠামােগত উন্নয়ন সাধন করতে হবে এবং সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়ােগকে আকৃষ্ট করতে হবে।
Post a Comment