SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা ক্রিকেট-বিশ্বে বাংলাদেশ

বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ
ভূমিকা: বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এবং অভিজাত খেলার নাম ক্রিকেট। বাংলাদেশে দীর্ঘকাল যাবত এ খেলার প্রচলন থাকলেও ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশ প্রথম অংশগ্রহণের গৌরব অর্জন করে। বর্তমান বাঙালি জাতি ক্রিকেটকে এতটাই ভালােবেসে ফেলেছে যে, জাতির অনেক আশা ও আকাঙ্ক্ষার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে ক্রিকেট। ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থানও উন্নতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।
বাংলাদেশে ক্রিকেট খেলার ইতিহাস: ইংরেজ শাসনামলে ভারতবর্ষে ক্রিকেট খেলার সূচনা হয়। দেশবিভাগের পরে ভারত ও পাকিস্তান আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রিকেট খেলার সুযােগ পায়। সেসময় পূর্ব পাকিস্তানেও স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং শহরগুলােতে ক্রিকেট বেশ পরিচিত হয়ে ওঠে কিন্তু পাকিস্তান আমলে তৎকালীন শাসক ও সংগঠকদের আন্তরিকতার অভাব ও বৈষম্যমূলক নীতির কারণে এখানে আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট বিকশিত হয়নি। এমনকি পাকিস্তানের এ অংশ থেকে দু-চারজনকেও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে খেলার সুযােগ দেওয়া হয়নি। স্বাধীনতার পর এক দশকের মধ্যেই বাংলাদেশ আইসিসির সহযােগী সদস্যের মর্যাদা লাভ করে। তারপর সুযোেগ ঘটে বিশ্বকাপের যােগ্যতা নির্ধারণি আইসিসি ট্রফি খেলার। ১৯৯০ সালের আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরে আসর থেকে বিদায় গ্রহণ করে। অবশেষে দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেয় ৯৭-র আইসিসি ট্রফিতে। '৯৭-এর আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে বিশ্বকাপে খেলার মর্যাদা নিশ্চিত করে। মালয়েশিয়ার কিলাত ক্লাব স্টেডিয়াম ইতিহাস হয়ে যায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কাছে।
ক্রিকেটে পথ চলা শুরু: সপ্তম বিশ্বকাপ ক্রিকেট ১৯৯৯-এর আসরে মােট ১২টি দেশ অংশগ্রহণ করে। এটি ছিল শতাব্দীর শেষ বিশ্বকাপ ক্রিকেট। উক্ত বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দেশগুলাে মধ্যে বাংলাদেশের জন্যে ছিল প্রথম বিশ্বকাপ ক্রিকেট। আইসিসি ট্রফিতে সেমিফাইনালে স্কটল্যান্ড ও ফাইনালে শক্তিশালী কেনিয়াকে হারিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ ক্রিকেট আসরে অংশগ্রহণের যােগ্যতা অর্জন করে।
প্রথম বিশ্বকাপে বাংলাদেশ: ১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতাে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশ নেয় বাংলাদেশ। আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে বাংলাদেশ এ আসরে অংশগ্রহণ করে। বিশ্বকাপ ব্রলিকেটে বাংলাদেশের প্রথম খেলা ছিল ১৭ই মে শক্তিশালী নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। এ খেলায় বাংলাদেশ মাত্র ১১৬ রান সংগ্রহ করে হেরে যায় প্রতিপক্ষের কাছে। ২৪-এ মে তৃতীয় খেলায় বাংলাদেশ নবাগত স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ক্রীড়ানৈপুণ্য প্রদর্শন করে এবং জয় লাভ করে। ৩১-এ মে বাংলাদেশের পঞ্চম খেলায় প্রতিপক্ষ ছিল সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান। সেদিন গােটা বিশ্বকে হতভম্ব করে দিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে বিজয়ী হওয়ার গৌরব অর্জন করে। মূলত সেদিনই বিশ্ববাসীর কাছে একটি নতুন ক্রিকেট শক্তি হিসেবে পরিচয় লাভ করে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপ ক্রিকেটের একটি নতুন দল হিসেবে প্রথমে অংশগ্রহণ করেই বাংলাদেশ মূল্যবান চার পয়েন্ট অর্জন করে ইতিহাস সৃষ্টি করে। 
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের পারফরমেন্স : সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটের পারফরমেন্স খুবই ইতিবাচক। বিশেষ করে বিশ্বের অন্যতম ক্রিকেট শক্তি ওয়েস্ট ইন্ডিজ-এর মতাে দলকে টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে হােয়াইটওয়াশ করা বাংলাদেশের জন্যে একটা বিরাট অর্জন। এর পর পরই নিউজিল্যান্ডকে ওয়ানডে ক্রিকেটে হােয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশের ক্রিকেটারেরা তাদের জাত চিনিয়েছেন। এ ছাড়া জিম্বাবুয়ে, কেনিয়া, আয়ারল্যান্ডের মতাে দলগুলােকে বাংলাদেশ হারিয়েছেন। তবে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে এখনই বিশ্বের অন্যান্য দল বাংলাদেশকে যথেষ্ট সমীহ করা শুরু করেছে। 
নবম বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাফল্য : ২০০৭ ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ছিল ক্রিকেটীয় আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার। ডেভ হােয়াটমােরের প্রশিক্ষণে মাশরাফি, আশরাফুল, তামিমরা দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার স্বপ্ন নিয়েই ওয়েস্ট ইন্ডিজে যায়। প্রথম ম্যাচে শক্তিশালী ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়ে সে স্বপ্ন পূরণের অভিযান শুরু। দ্বিতীয় রাউন্ডে বিশ্বকাপের শীর্ষ বাছাই দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বাংলাদেশ প্রমাণ করে ভারতের বিপক্ষে জয় কোনাে অঘটন ছিল না। আয়ারল্যান্ডের কাছে অপ্রত্যাশিত পরাজয়ই ক্রিকেট টাইগারদের জন্যে কলঙ্ক হয়ে রইল। তারপরও সবমিলিয়ে নবম বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অভাবনীয় সাফল্য ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশকে অনেক উঁচু আসনে বসিয়েছে নিঃসন্দেহে। 
২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপ ও বাংলাদেশ : বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট। তাই বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে একটি উন্মাদনা বাংলাদেশের মানুষের মাঝে বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই বিরাজ করে। তবে ভালাে ক্রিকেট খেললেও বাংলাদেশ গ্রুপ পর্বের বাধা পেরিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠতে পারেনি। গ্রুপ পর্বের খেলার মধ্যে ৩টিতে জয় পায় বাংলাদেশ। শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে জয় বাংলাদেশের জন্যে এবারের বিশ্বকাপের সেরা প্রাপ্তি। এ ছাড়া অপেক্ষাকৃত দুর্বল দল আয়ারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডকে হারায় বাংলাদেশ। ৬ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ তালিকায় পম দল হিসেবে বাংলাদেশ এবারের বিশ্বকাপ শেষ করে। 
২০১৫ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাফল্য : ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অর্জন উল্লেখ করার মতাে। এই বিশ্বকাপে ইতিহাসে প্রথমবারের মতাে বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার গৌরব অর্জন করে। কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে চরম বিতর্কিতভাবে না হারলে হয়তাে বিশ্বকাপে অর্জনটা আরও সমৃদ্ব হতে পারত বাংলাদেশের। তবে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড থেকে বীরের বেশেই ফিরেছে মাশরাফি বাহিনী। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সাফল্য শুরু আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১০৫ রানের বড় জয় দিয়ে। এরপর স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে শুধু দলীয় অর্জনই ছিল না, ব্যক্তিগত সাফল্যও দৃষ্টি কেড়েছে সবার। অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মাহমুদউল্লাহ ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা দুটি শতক করে বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছেন। ব্যাট হাতে বেশ উজ্জ্বল ছিলেন মুশফিকুর রহিমও। নজর কেড়েছে সৌম্য সরকার ও সাব্বির রহমানও। বল হাতে দুই পেসার রুবেল হােসেন ও তাসকিন আহমেদ দারুন খেলেছেন। সবমিলিয়ে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে বিগত সালের তুলনায় অধিক সাফল্য অর্জন করে বাংলাদেশ । বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি দরিদ্র দেশ। অর্থনৈতিক সমীকরণে বাংলাদেশে ক্রিকেট নিয়ে অতি মাতামাতি হয়তাে বিলাসিতা। কিন্তু মানুষের মনন ও আবেগকে তাে অর্থ-সম্পদ দিয়ে বিচার করা যায় না। দুঃখ-দারিদ্র্যের মাঝে সামান্য হলেও এ খেলাটি বাঙালি প্রাণে যথেষ্ট আশা ও উলীপনা সৃষ্টি করে থাকে। রাজনৈতিক অস্থিরতা, হতাশা ও দুর্নীতির আবর্তে বন্দি মানুষ মাঝে মাঝেই প্রেরণা লাভ করে থাকে, দু চোখে সােনালি ভবিষ্যৎ নির্মাণের স্বপ্ন লালন করার প্রয়াস পায়। ক্রিকেট খেলার মাধ্যমে বিশ্বে পরিচিতি লাভের পাশাপাশি এও কম প্রাপ্তি নয়। 
উপসংহার: বাংলাদেশ বিশ্বক্রিকেটে একটি সম্ভাবনাময় শক্তি। বিশ্বের শত শত দেশ থেকে মাত্র দশটি দেশ টেস্ট ক্রিকেট খেলছে, এর বাংলাদেশ একটি। এটি একটি গৌরবের বিষয়। এ শক্তিকে আমাদের ভালােবাসতে হবে। তবৈই বাঙালি জাতি বারবার জানাতে পারবে - চেয়ে দেখে, 'আমরাও পারি।'

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment