SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা সৎসঙ্গ

উন্নত সংস্পর্শ
বা সৎসঙ্গে যুব জীবন
বা উন্নত জীবনের সঙ্গ
ভূমিকা : মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সংসারে সকলের সাথে মিলেমিশে জীবনযাপনের রীতি শুর হয়েছে বহুদিন আগে থেকেই। যৌথ জীবনের পরিসরে কিভাবে প্রত্যেকটি জীবন সুন্দর ও সার্থকভাবে বিকশিত হয়ে উঠতে পারে সেজন্য মানুষের সাধনার অন্ত নেই। নিজের জীবনের বিকাশ নিজ নিজ পরিবেশের মধ্যেই সাধিত হয়। আর তাই পরিবেশের প্রভাব মানবজীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত।
সৎসঙ্গের সংজ্ঞা : পরিবেশ যদি যথার্থ অনুকূল হয়ে উঠে তবে যে কোন মানবসন্তানই প্রকৃত মানুষ হয়ে উঠার সুযােগ পায়। ৪৩২ নিষ্কলুষ পরিবেশ তাই, অভিপ্রেত। এ সুন্দর পরিবেশ গড়ে তােলার জন্য মানুষের জীবনে সঙ্গী সাথীর স্থান সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। সাথী হিসেবে যদি ভালাে মানুষ পাওয়া যায় তবে তা সৎসঙ্গ বলে বিবেচিত হয়ে থাকে। তাই সৎসঙ্গ বলতে বােঝায় উত্তম চরিত্রের বন্ধু-বান্ধব, যাদের প্রভাব ও আদর্শে নিজের জীবন গড়ে তােলা সম্ভব হতে পারে।
জীবনের বৈশিষ্ট্য : মানুষের চারপাশে যে জীবন নিয়ত আবর্তিত হয় তাতে আছে ভালােমন্দের সমাহার। বস্তুতপক্ষে, ভালােমন্দ নিয়েই সংসার জীবন। প্রত্যেক মানুষ তার জীবনে একদিকে যেমন ভালাের মুখােমুখি হচ্ছে, তেমনি প্রতিনিয়ত মন্দেরও মুখােমুখি হচ্ছে। কিন্তু জীবনের সার্থক বিকাশের জন্য প্রয়ােজন কেবল ভালাের দিক, মন্দ দিকগুলাে তাকে সচেতনভাবে পরিহার করে চলতে হবে। সেজন্য মন্দসজ্গ পরিত্যাগ করে উত্তম সঙ্গী জুটিয়ে নিয়ে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে ‌।
সৎসঙ্গের প্রয়ােজনীয়তা : সৎসঙ্গের প্রয়ােজন মানবজীবনে অত্যধিক। জন্মের পর থেকে মানুষের যে শিক্ষা গ্রহণের সূত্রপাত হয় জীবনের শেষ অধ্যায় পর্যন্ত বিচিত্র অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের মাধ্যমে তা চলতে থাকে। কিন্তু জীবন গঠনের একটা বিশেষ সময় আছে; সেটা জীবনের প্রাথমিক পর্যায়। তখন নানা অভিজ্ঞতার মাধ্যমে জ্ঞানার্জন করে মানুষ জীবনকে একটা কাঠামাের মধ্যে ফেলার চেষ্টা করে। যতদিন পর্যন্ত জীবন গঠনের জন্য শিক্ষাকাল চলতে থাকে ততদিন পর্যন্ত সৎসঙ্গের প্রয়ােজনীয়তা আছে। কারও জীবনই পরিপূর্ণতা নিয়ে বিকশিত হয়ে উঠেনি। তাকে পরিপূর্ণতার দিকে অগ্রসর হতে হলে জ্ঞান অর্জন করতে হয়; অভিজ্ঞতা তাকে বিকশিত হতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে উত্তম সঙ্গী থাকলে তাদের প্রভাবে জীবনকে সার্থকতার পর্যায়ে উন্নীত করা সম্ভব। 
সৎসঙ্গের উপকারিতা : কথায় বলে, 'সৎসঙ্গে স্বর্গবাস অসৎসঙ্গে সর্বনাশ। সঙ্গী-সাথী যদি ভালাে চরিত্রের হয় তাহলে তাদের প্রভাবে নিজের জীবনকে ন্যায় ও সত্যের পথে পরিচালিত করা সহজ। নিজের কোন ত্রুটি থাকলে তা তখন দূর করা সম্ভব হয়। ভাল চরিত্রের বন্ধু-বান্ধব সাথে থাকলে নিজের মনের মধ্যে কোন অসদূদ্দেশ্য আসতে পারে না এবং কখনও কিছু অন্যায় থাকলেও তা আর মাথা চাড়া দিতে পারে না। বলা যেতে পারে, সৎস্গীরা পরশপাথরের মত। পরশপারথরের যাদুস্পশে লােহা যেমন সােনা হয়ে যায়, তেমনি সৎ্চরিত্রের অধিকারী বন্ধুদের সান্নিধ্যে মানুষ সুন্দর চরিত্রর অধিকারী হতে পারে। মানবজীবনের সামনে উজ্জ্বল আদর্শ থাকলে তা জীবনের গঠনে ও নিয়ন্ত্রণে বিশেষ সহায়ক হয়। আর সৎসক্গীই সে মহান প্রয়ােজন সাধন করে থাকে। 
অসৎসঙ্গের অপকারিতা : অন্যদিকে অসৎসজ্গা মানবজীবনে সর্বনাশ ডেকে আনে। সংসারে ভালাের পাশাপাশি মন্দ লােকেরও অভাব নেই। মন্দ লােকের সান্নিধ্যে এসে মানুষ কুপথে যায় এবং জীবনের জন্য ডেকে আনে নিদারুণ অন্ধকার। এমনি অনেক চরিত্রবান ব্যক্তি খারাপ সঙ্গীর জন্য অধঃপতনের দিকে ধাবিত হয়। জীবনের যে কোন সময় এ ধরনের সঙ্গদোষ ঘটতে পারে। সেজন্য অসৎসঙ্গী খুবই ভয়াবহ বলে বিবেচনার যােগ্য। 
মানুষের কর্তব্য : সৎসঙ্গ ও অসৎসঙ্গ এ পার্থক্যের কথা বিবেচনা করেই মানুষের জীবনে সৎসঙ্গের প্রয়ােজনীয়তা সবীকৃত হয়েছে এবং অসৎসঙ্গ পরিহারের চেষ্টা করা হয়। মানুষের শিশুকাল থেকে এ সম্পর্কে সচেতন হওয়া বাঞ্ছনীয়। জীবনের প্রাথমিক পর্যায়ে যদি সঠিক গতিপথ নির্ধারণ করা না যায় তবে ভবিষ্যৎ কখনও উজ্জ্বল হতে পারে না। তাই ছােটবেলা থেকেই অসৎসঙ্গ পরিহার করতে হবে এবং সৎসঙ্গে যাতে জীবন গড়ে ওঠার সুযােগ পায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। 
উপসংহার : মানবজীবন গঠন অত্যন্ত জটিল ব্যাপার। এক্ষেত্রে সচেতন না হলে জীবনকে সার্থক করে তােলা যায় না। আমাদের দেশের যে পরিবেশ তাতে বেশি সচেতনতা থাকা বাঞ্ছনীয়। অশিক্ষা ও দারিদ্র আমাদের সমাজ জীবনকে বিষাক্ত করে রেখেছে। এখানে ছড়িয়ে আছে অনাচার ও কুসংস্কার। সেজন্য প্রতিকূল পরিবেশে জীবনযাপন করতে হলে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আমাদের শিশুরা যাতে সুন্দর পরিবেশে মানুষ হয়ে উঠতে পারে সেজন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। সৎসঙ্গের প্রয়ােজনীয়তা বিবেচনা করে প্রত্যেককে সঙ্গী-সাথী নির্বাচনে সচেতন হতে হবে।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment