SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা ইন্টারনেট

বহির্জগতের সম্পর্কে ইন্টারনেট
বা ইন্টারনেট ও আজকের পৃথিবী
ভূমিকা : সৃষ্টির আদিকাল হতে মানুষকে ঘরে-বাইরে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। সংগ্রামই মানুষের জীবনের ধর্ম। এ জীবন সংগ্রামের যাত্রাপথে বিজ্ঞান হল মানুষের হাতিয়ার। বিজ্ঞান মানুষকে জীবনযাত্রার সুকঠিন নিগড় থেকে অব্যাহতি দিয়েছে। মানুষকে মানবিক চেতনা ও গুণে উন্নত করে প্রেরণা দিয়েছে উন্নত সমাজ গড়ার। ইন্টারনেট আধুনিক বিজ্ঞানের সে রকম একটি বিস্ময়কর আবিষ্কার। বর্তমান বিশ্বের বহুল আলােচিত গতিময়তার এক মাইলফলক ইন্টারনেট। ইন্টারনেটকে কাজে লাগিয়ে গবেষণার কাজে সংগ্রহ করা যায় নতুন নতুন তথ্য, শিক্ষার্থীরা জেনে নিতে পারে তার সমস্যার সমাধান এবং যােগাযােগ ব্যবস্থার চরম উৎকর্ষ সাধন হয়েছে এর বদৌলতেই।
ইন্টারনেট কি : ইন্টারন্যাশনাল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভিস যা বর্তমানে ইন্টারনেট নামে পরিচিত। নেটওয়ার্কভুক্ত কম্পিউটারসমূহকে অন্যান্য নেটওয়ার্কভুক্ত কম্পিউটারের সঙ্গে নেটওয়ার্ক গড়ে তােলাই ইন্টারনেটের কাজ। নেটওয়ার্কসমূহ একত্রিত হয়ে পৃথিবীব্যাপী যে নেটওয়ার্ক সিস্টেম তৈরি করেছে তাকেই ইন্টারনেট বলে।
ইন্টারনেটের প্রকারভেদ : ব্যবহারকারিগণ দু’ভাবে ইন্টানেটের গ্রাহক হতে পারে। প্রথমটি হল, অন-লাইন ইন্টারনেট। টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে সরাসরি কম্পিউটারের ইন্টারনেটের অন্য যে কোন সার্ভিস প্রভাইডারের সঙ্গে যুক্ত করার পদ্বাতিকে অন-লাইন ইন্টারনেট বলা হয়। তাতে ব্যবহারকারিগণ যে কোন সময় অন্য যে-কোন প্রভাইডারের সাথে সম্পৃত্ত ২তে পারে। এছাড়া IPACCES পদ্ধতিতে সরাসরি অন-লাইন ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া যায়। কিন্তু এ পদ্ধতি অতি ব্যয় বহুল হওয়ায় সাধারণ গ্রাহক তাতে আগ্রহবােধ করেন না। দ্বিতীয় হল অফ-লাইন ইন্টারনেট যা ই-মেইল নামে পরিচিত। এ প্রক্রিয়ায় গ্রাহকগণ নিকটবর্তী কোন সার্ভারকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে বলেই এটাকে অফ-লাইন ইন্টারনেট বা ই-মেইল বলা হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে গ্রাহকগণ কম খরচে অফ-লাইন বা ই-মেইল ইন্টারনেটের মাধ্যমে যােগাযােগ ও তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে‌।
ইন্টারনেট তৈরির ইতিহাস : ইন্টারনেট উদ্ভাবনের প্রাথমিক কারণ ছিল সামরিক। বিশ্বের দুই পরাশক্তি সােভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চরম স্নায়ুযুদ্ধের কারণে দুই পরাশক্তির সমর বিশারদরাই পারমাণবিক বােমার ভয়ে অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। তাদের সন্দেহ ছিল, ধ্বংসাত্মক পারমাণবিক বােমা বিস্ফোরিত হলে পুরাে যােগাযােগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়তে পারে। এ জন্যে যােগাযােগ মাধ্যমকে ধ্বংসের কবল থেকে রক্ষা করার চিন্তায় টেলিফোনের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ইন্টারনেট উদ্ভাবন করা হয়। সর্বপ্রথম মার্কিন সামরিক সংস্থা বিশ্বব্যাপী নিজেদের অবস্থানগুলাের সঙ্গে সার্বক্ষণিক গােপন যােগাযােগ রক্ষা করার জন্যে ১৯৬৯ সালে প্রথম ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু করে। তখন এটি পরিচিত ছিল MILNET নামে। এ প্রযুক্তিকে আরও জনকল্যাণমুখী করে তােলার জন্যে পরীক্ষামূলকভাবে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলােকে দেওয়া হলে তারা শিক্ষা গবেষণা এবং তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে। তখন শিক্ষা জগতে এর নামকরণ, হয়। এ্যাপারনেট। পরবর্তীকালে এটি আন্তর্জাতিক যােগাযােগের জন্যে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, যা বর্তমানে ইন্টারনেট নামে পরিচিতি লাভ করেছে। 
ইন্টারনেটের সুযােগ-সুবিধা : ইন্টারনেটের মাধ্যমে নানারকম সুযােগ-সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন ও নিউজগুপ একটি তথ্য বা সংবাদ প্রদানকারী সংস্থা। ইন্টারনেটে নিউজগ্রুপ ব্যবহার করে বিশ্বের খবরাখবর জানা যায়। লেখাপড়া ও গবেষণার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়ােজন হল যথার্থ বই। বিশেষ করে গবেষণাধর্মী বইয়ের জন্যে অনেককে বিদেশে যেতে হয়। কিন্তু ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাংলাদেশে বসে আমেরিকার 'ইউনাইটেড স্টেট অব কংগ্রেস বা হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরীসহ বিশ্বের যে কোন দুষ্প্রাপ্য বই পড়া এবং তথ্যাদি জানা যায়। এর সাহায্যে এক প্রতিষ্ঠানের সাথে আরেক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা। বাণিজ্য সম্পর্কিত লেনদেন সম্পাদিত করা যায়। জটিল কোন মামলার ক্ষেত্রে মানুষ আইনের পরামর্শের জন্যে বিদেশের আইনজ্ঞদের শরণাপন্ন হয়। কিন্তু এখন আর এজন্যে বিদেশে না গেলেও চলবে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসেই যে কোন পরামর্শ লাভ করা যায়। ভ্রমণের ক্ষেত্রেও ইন্টারনেট অত্যন্ত সহজ পথের সন্ধান এনে দিয়েছে। অফিসের হাজারও ফাইলের মধ্য থেকে প্রয়ােজনীয় ফাইলটি খুঁজে বের করা যায় ইন্টারনেটের Archi' পদ্ধতি প্রয়ােগের মাধ্যমে। ইন্টারনেটের সুবাদে ঘরে বসেই উন্নত চিকিৎসা লাভ করা যায়। বর্তমানে ব্যাংকেও ইন্টারনেট ব্যবহৃত হচ্ছে। এভাবেই ইন্টারনেট বিভিন্ন কাজের এক সহজ মাধ্যম হিসেবে সুযােগ সৃষ্টি করেছে। 
বাংলাদেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার: বাংলাদেশে কম্পিউটারের ব্যবহার শুরু হয়েছে ষাটের দশক থেকে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এখানে শতকরা নব্বই ভাগ কম্পিউটার প্রকাশনার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে টাইপরাইটারের বিকল্প হিসেবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সম্পৃক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক তথ্য প্রবাহের সাম্রাজ্য ইন্টারনেটের সঙ্গে। ১৯৯৬ সালের মাঝামাঝি থেকে বাংলাদেশে এ নেটওয়ার্কের প্রচলন শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে টি. এণ্ড টি. বাের্ড, আই এস. এন. রয়টার, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, বেক্সিমকো, সাইটেক কোম্পানি লিঃ নামে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে ভিস্যাট স্থাপনের অনুমতি প্রদান করে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের প্রায় সাত শ' সদস্য ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু করেছে। 
উপসংহার : বিংশ শতাব্দীর এক বিস্ময়কর প্রযুক্তি ইন্টারনেট। একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এ প্রযুক্তির বিস্তার ঘটবে। ফলে তথ্য আদান-প্রদান, ব্যবসা-বাণিজ্য, চিকিৎসা, শিক্ষা, যােগাযােগসহ সকল ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের এক মহাবিপ্লবের সূত্রপাত ঘটবে। বিশ্বের সমস্ত কঠিন কাজ মানুষের হাতের মুঠোয় বন্দী হয়ে যাবে। উন্নত বিশ্বের সাথে সাথে তৃতীয় বিশ্বও তখন এগিয়ে যাবে অগ্রগতির দিকে।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment