বা শ্রম ও উন্নয়ন
বা বাংলাদেশে শ্রমের গুরুত্ব
বা শ্রম ও শ্রমিক
ভূমিকা : মানুষের জীবন কর্মমুখর। সংসার জীবনে জীবিকার্জনের জন্য প্রত্যেক মানুষকেই কোন না কোন কাজে হতে হয়। জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রেই পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবিকার্জন করতে হয়। যথার্থ পরিশ্রমই মানুষের সৌভাগ্য আনয়ন ব্রতী করতে পারে। যে মানুষ যত বেশি পরিশ্রম করতে পারে ততই তার ভাগ্যের উন্নতি সাধিত হতে পারে। তাই দেখা যায়, জীবনের সাথে পরিশ্রমের একটি বিশেষ যােগাযােগ রয়েছে। শ্রমের গুরুত্ব : মানবজীবন ও জীবিকা একান্তই বৈচিত্র্যপূর্ণ। মানুষে মানুষে শিক্ষা ও যােগ্যতার যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। এজন্য মানুষের জীবিকার্জনে শ্রমের পরিমাণগত পার্থক্যের সৃষ্টি হয়। কেউ অল্প পরিশ্রমে বেশি লাভবান হয়, আবার কেউ মাথার ঘাম পায়ে ফেলেও দুমুঠো অন্নের ব্যবস্থা করতে সক্ষম হয় না। শ্রমের তারতম্যের জন্য মানুষের সামাজিক মর্যাদার পার্থক্য দেখা দেয়। যােগ্যতার তারতম্যের জন্য কাজের তারতম্য ঘটলেও সকল শ্রেণীর কর্মীর প্রয়োজন রয়েছে। বহু প্রাচীনকাল থেকেই জীবিকার পার্থকা পরিলক্চিত হয়। এক এক শ্রেণীর মানুষ এক এক ধরনের কাজ করে থাকে। এতে সমাজের মধ্যে উচ্চ নীচ ভেদাভেদ সৃষ্টি হয়েছে। তবে সামাজিক অসাম্যের মধ্যেও একটি দিকে সকলের ঐক্য পরিলক্ষিত হয়, তা হল, সবাই শ্রমের মাধ্যমে জীবিকার্জন করে। প্রত্যেক মানুষ নিজ কর্মক্ষেত্রে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য পরিশ্রম করে চলেছে। যথাযােগ্য মর্যাদা লাভেই মানুষের পরিশ্রম সার্থক হয়ে উঠে।
শ্রমের প্রয়ােজনীয়তা : মানুষের জীবনে পরিশ্রমের প্রয়ােজনীয়তা অপরিসীম। কর্মবিমুখ মানুষ কোনদিনই উন্নতি লাভ করতে পারে না। এ বৈচিত্র্যময় পৃথিবীতে যত বৈচিত্র্যপূর্ণ কাজই থাকুক না কেন সর্বক্ষেত্রেই সাফল্য অর্জনের জন্য পরিশ্রমের যথেষ্ট প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে। পরিশ্রমবিমুখ মানুষের জীবন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। যে পরিশ্রমের ফলে মানুষের জীবন সার্থকতায় মণ্ডিত হয়ে উঠে তার যথাযােগ্য মর্যাদার প্রয়ােজন রয়েছে। মানুষ যুগে যুগে নিজের পরিশ্রমের মর্যাদা লাভ করে জীবনের গৌরব বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে। তাই বলা হয়, 'মানুষের সর্বোৎকৃষ্ট বন্ধু হল তার হাতের দশটি আজ্গুল।
ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে শ্রম : ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনে উন্নতি সাধন করতে হলে শ্রমের মর্যাদা স্বীকার করতে হবে। কোন মানুষই কঠিন পরিশ্রম ছাড়া যথার্থ সাফল্য অর্জন করতে পারে না। ব্যক্তিগত দিক ছাড়াও জাতীয় জীবনে যথার্থ সাফল্য ও উন্নতির জন্য কঠোর পরিশ্রমের প্রয়ােজন। জীবনের সর্বক্ষেত্রে শ্রমের অপরিসীম প্রয়োজনীয়তা বিদ্যমান থাকলেও পৃথিবীতে বারবার শ্রমকে অবহেলা করা হয়েছে। তার উপযুক্ত মর্যাদা প্রদান করা হয় নি। বিশেষত আমাদের দেশে শ্ৰমের প্রকৃত মর্যাদা প্রদান করা হয় না। শ্রমজীবীদের প্রতি তথাকথিত ভদ্রলােকের একটি অবজ্ঞার ভাব সর্বদা বিরাজ করে। যে চাষি সমগ্র দেশের অন্নের যােগান দেয় সে চাষা' হিসেবে অবজ্ঞার পাত্র। এ ধরনের উন্মাসিকতার জন্য আজ আমাদের জাতীয় জীবন একান্তই অনগ্রসর।
উন্নত দেশে শ্রমের অবস্থা : উন্নত দেশগুলােতে শ্রমের উপযুক্ত মর্যাদা স্বীকৃতি লাভ করেছে। আর এ স্বীকৃতির জন্য সেখানকার জনসাধারণ অত্যন্ত কর্মঠ। ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনের কল্যাণ সাধনের জন্য তারা সচেষ্ট এবং তাতে সাফল্যও অর্জন করেছে। তারা আমাদের দেশের মত কোন কাজকেই ছােট বলে মনে করে না। সমাজের উচুস্তরের লােকেরা অতি নগণ্য কাজও অত্যন্ত মনােযােগ সহকারে সম্পাদন করে। সেসব দেশে গুরুত্বের সাথে যা বিবেচনা করা হয় তা হল কর্তব্যনিষ্ঠ। যে মানুষ যত কর্তব্যনিষ্ঠ তার সাফল্য তত বেশি।
তুলনা : আমাদের দেশের অবস্থা ভিন্ন ধরনের। এখানে যে কোন ধরনের কায়িক শ্রমই ঘৃণাই। বরং কাজকর্ম থেকে হাত গুটিয়ে থাকতে পারলে সম্মান বেশি পাওয়া যায় বলে ধারণা। শিক্ষিত লােকেরা অশিক্ষিত লােকদের কাজকে অবজ্ঞার চোখে দেখে থাকে। এর ফলে আমাদের দেশ পাশ্চাত্য দেশগুলাের তুলনায় অনেক পেছনে পড়ে রয়েছে।
উপসংহার : মানুষের যথার্থ কল্যাণের জন্য শ্রমের উপযুক্ত মর্যাদা দিতে হবে। ছােটবড় প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজ নিজ কর্তব্য হবে ছে সম্পর্কে সচেতন হলে এবং অন্যের শ্রমের মর্যাদা দিলে জাতীয় জীবনের যথার্থ কল্যাণ সাধিত হবে। আমরা স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের নাগরিক। সােনার দেশ গড়ার স্বপ্ন ও সাধনা আমাদের। এর যথার্থ বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশীকে শ্রমের প্রতি অনুরাগী হতে হবে।
Post a Comment