সম্প্রসারিত ভাব: পৃথিবীতে মানুষ নানা জাতি, উপজাতি, ধর্ম-বর্ণ ও গােষ্ঠী-গােত্রে বিভক্ত। মনুষ্যসৃষ্ট এ বিভাজন-রীতির কারণে এখানে একশ্রেণির মানুষকে উচ্চশ্রেণির বা উচ্চজাতের মানুষরূপে বিবেচনা করা হয়, আর অন্য শ্রেণির মানুষকে নিম্নজাতের মানুষ হিসেবে গণ্য করা হয়। ধারণা করা হয়, তথাকথিত উচ্চজাতের মানুষ জন্মগতভাবেই সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী। আর নিম্নজাতের মানুষ সম্মান ও মর্যাদাহীন। কিন্তু এ ধারণা সর্বাংশে ভুল। কারণ মানুষের মূল্য নির্ধারিত হয় তার কর্মের দ্বারা, জন্মের দ্বারা নয়। পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছেন যারা তথাকথিত নিম্নবংশে জন্মগ্রহণ করেও পৃথিবীতে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন। কারণ এঁরা নিজের কর্মের দ্বারা নিজের ও বিশ্ববাসীর কল্যাণসাধনে সদা প্রস্তুত। এঁদের কর্মের জন্য এরা জগদ্বাসীর নিকট সমাদৃত হন। মানুষ এদের মান্য করে এবং মর্যাদা দেয়। বংশ-গৌরবের অমর্যাদা এঁদের কর্মের কাছে পদানত। যিশুখ্রিষ্ট এর শ্রেষ্ঠ উদাহরণ। পৃথিবীর ইতিহাসে এ রকম অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। যেমন শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ ফুটবলার ম্যারাডােনা এক সাধারণ দিনমজুরের ছেলে; বুয়েন্স-আয়ার্সে এক অখ্যাত বস্তিতে তাঁর জন্ম। দার্শনিক ফ্লিয়নথাসের পিতা ছিলেন বাগানের মালি। মক্াবিজয়ী মুসলিম সেনাপতি জায়েদ ছিলেন এক ক্রীতদাসের পুত্র। কিন্তু উল্লিখিত মনীষীদের স্ব-স্ব ক্ষেত্রে কৃতিত্ব প্রদর্শন ও সম্মান অর্জনের ক্ষেত্রে বংশগৌরবহীনতা কোনাে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারেনি। অন্যদিকে উচ্চবংশে কিংবা ধনীর ঘরে জন্ম নেওয়া অনেক মানুষই কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। কারণ উচ্চবংশে জন্ম নিলেও তারা নিজের ও জগদ্বাসীর কল্যাণে কিছুই করতে পারেনি।
মন্তব্য: পৃথিবীতে মানুষকে কর্মের সাধনায় আত্মনিয়ােগ করতে হবে। কারণ পৃথিবীতে বংশমর্যাদাসম্পন্ন মানুষ নয়, করিৎকর্মা ও সৎকর্মশীল মানুষই সমাদৃত হন।
Post a Comment