জীবনের লক্ষ্য স্থির করার প্রয়ােজনীয়তা : জীবনে সার্থকতা লাভ করতে হলে একটি দৃঢ় সংকল্প চাই। কবি গেয়েছেন। -
মন রে কৃষিকাজ জানাে না
এমন মানব-জমিন রইল পতিত
আবাদ করলে ফলতাে সােনা।
মানবজমিনে সােনা ফলাতে হবে। এজন্যে যথাসময়ে বীজ বপন এবং আনুষঙ্গিক পরিশ্রম ও সাধনার দরকার। তেমনি জীবনের স্বপ্নকে সার্থক করে তুলতে হলে প্রয়ােজন সাধনা এবং প্রজ্ঞা। জীবনের ধ্রুব লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার পথে অনেক বাধা, অনেক বিঘ্ন। কিন্তু তাতে পশ্চাৎপদ হয়ে সম্মুখের স্থির লক্ষ্যাভিমুখে অগ্রসর হয়ে চলতে হবে। তাই জীবনের চলার পথে চাই নির্দিষ্ট এবং সুপরিকল্পিত পথরেখা। সে পথরেখাই সফলতার তােরণ দুয়ারে আমাকে উপনীত করবে। সেজন্যেই জীবনের সূচনাতেই লক্ষ্য স্থির হওয়া উচিত।
আমার জীবনের লক্ষ্য : আমার জীবনের লক্ষ্য একজন সুদক্ষ কৃষক হওয়া। আমার লক্ষ্য জেনে অনেকে হয়তাে আমাকে উপহাস করবে। কিন্তু আমার জীবনের স্থির লক্ষ্যই হলাে কৃষক হওয়া। আমার লক্ষ্যকে অনেকে সামান্য এবং দীন মনে করতে পারে। যারা এরকম মনে করে, আমি তাদের দোষ দেই । কারণ দোষ তাদের নয়, দোষ আমাদের দৃষ্টির সংকীর্ণতার। কৃষক বললে সবাই আমাদের দেশের গতানুগতিক ধারার মান্ধাতা আমলের সেই কৃষক, যাদের শিক্ষা নেই, স্বাস্থ্য নেই, দু বেলা দু মুঠো পেট ভরে খাওয়ারও সংস্থান নেই, তাদের কথা ভেবে থাকে। আমি সেরকম কৃষক হতে চাই না। আমি আধুনিক যুগের শিক্ষিত, সুদক্ষ, বিজ্ঞাননির্ভর কৃষক হতে চাই।
লক্ষ্য স্থির করার কারণ : বন্ধুমহলের কেউ হতে চায় ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ ম্যাজিস্ট্রেট, কেউ বা অর্থনীতিবিদ। সকলে চাকরিকেই। জীবনের একমাত্র লক্ষ্যরূপে স্থির করেছে। বাংলাদেশে এ চাকরিপ্রিয়তা এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে, সমস্ত দেশে কৃষিবিমুখতা দেখা দিয়েছে। যে কৃষি আমাদের দেশের অর্থনীতির মূল উৎস এবং যে কৃষি নানা উপায়ে আমাদের দেশে জনসংখ্যার অধিকাংশের জীবিকার আয়ােজন করে দেয়, তার পরিচালনার দায়িত্ব মুষ্টিমেয় নিরক্ষর, রুগণ, পরিবর্তন বিমুখ, দরিদ্র কৃষকদের হাতে তুলে দিয়ে আমরা নিশ্চিত হয়ে বসে আছি। এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। আমাদের শিক্ষিত যুবসমাজের কেউ কি সে মাটির ডাকে সাড়া দেবে না? জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন-
ও ভাই খাটি সােনার চেয়ে খাঁটি
আমার দেশের মাটি।
দেশের অগ্রগতির সঙ্গে আমার লক্ষ্যের যােগসূত্র : আজ আমাদের দেশের শিল্প খাত বিধ্বস্ত, কৃষি খাত অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত। দিনের পর দিন শােষক-শাসকেরা, এদেশকে কামধেনুর মতাে দোহন করে নিয়ে গেছে। ক্ষমতার অতিরিক্ত উৎপাদন করে বাংলাদেশের কৃষি আজ সর্বস্বান্ত। অথচ স্বাধীনতা লাভের পর আমাদের লক্ষ্য ছিল- ধন ধান্য পুষ্পভরা একটি সােনার বাংলাদেশ গড়ে তােলা। স্বপ্নের বাংলাকে বাস্তবিক সােনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে আমার লক্ষ্য অত্যন্ত সহায়ক হবে। এ লক্ষ্যের অন্য কোনাে বিকল্প নেই। আমাদের দেশের কৃষক ভোতা লাঙল, হালের রুগণ বলদ ও নিকৃষ্ট বীজ নিয়ে সারহীন জমিতে যথাসম্ভব স্বল্প পরিমাণ ফসল ফলিয়ে চলছে। সেচের জল তারা ঠিকমতাে পায় না। চোখের জলে আর ঘামে মাটি ভিজে ওঠে, তবুও নদী পরিকল্পনার জল এসে আমাদের জমিতে পৌছায় না। আমি নতুন উদ্যমে এ হতাশাক্লিষ্ট কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে চাই। আমি কৃষিতে অবদানের মাধ্যমে যতটুকু সাধ্য দেশ সেবা করে যাব। আর এরই মাঝে আমার জীবনের স্বপ্ন ও লক্ষ্যের সার্থকতা নিহিত বলে আমি মনে করি।
উপসংহার : কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়নই দেশের সমৃদ্ধির মূল চাবিকাঠি। কৃষিই দেশের সকল উন্নয়নের রুদ্ধদ্বার খুলে দেবে। মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে। আমার বিশ্বাস, যদি আমার চেষ্টায় কোনাে ত্রুটি না থাকে এবং মনের একাগ্রতা অটুট থাকে, তবে আমি এ বিষয়ে নিশ্চয়ই সফলতা লাভ করব। কবি বলে গেছেন : 'মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন।'—এ শপথ বাক্য আমাকে সাফল্যের সিংহদ্বারে পৌছে দেবে, আমার প্রাণে নতুন উদ্যম ও নতুন প্রেরণা জোগাবে। আর স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করব-
তােমার পতাকা যারে দাও
তারে বহিবারে দাও শকতি।
আমাকে শক্তি দাও, সামর্থ্য দাও, প্রাণে আর মনে দাও স্বপ্ন সাধনার অপরাজেয় উৎসাহ।
Post a Comment