SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পােশাক শিল্পের অবদান

ভূমিকা: বাংলাদেশের মােট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮২ শতাংশ আসে পােশাক খাত থেকে। ৭০ এর দশকের শেষের দিকে রপ্তানি শুরু হলেও ৮০ এর দশকে বাংলাদেশের পােশাক রপ্তানি রমরমা অবস্থায় চলে যায়। বাংলাদেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর হলেও পােশাক সেক্টরটি বৈদেশিক মুদ্রার সবচেয়ে বড় যােগান দেয়। প্রায় ৪০ লাখের বেশি লােক এ সেক্টরে নিয়ােজিত আছে। 
বাংলাদেশের পােশাক শিল্পের ইতিহাস: মূলত ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশে পােশাক শিল্পের যাত্রা হলেও ১৯৮০ এর দশকের গােড়ার দিক থেকে বাংলাদেশে পােশাক শিল্পের উৎকর্ষ ও বিকাশ সাধিত হতে থাকে। ৯০ এর দশকে এসে শিল্প বিস্ময়কর উন্নতি সাধন করে। ১৯৭৬ সালে এ শিল্পের যাত্রার শুরুর দিকে এর সংখ্যা ছিল মাত্র ৪টি এবং কর্মচারীর সংখ্যা ছিল ১৪৩ জন। কিন্তু বর্তমানে ৪০ লাখের বেশি যায় প্রায় ৮০ শতাংশ নারী কাজ করে। 
জাতীয় রপ্তানিতে পােশাক শিল্পের অবদান: ১৯৮৩-৮৪ সালে পােশাক শিল্পের রপ্তানি মূল ছিল ৩১.৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত তিন দশকে এটি ব্যপকভাবে পরিবর্তিত হয়। ২০১২-১৩ সালে এর মােট রপ্তানি হয় ২১৫১৫.৭৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৩-১৪ সালে দেশের মােট রপ্তানির ৮০ শতাংশ যােগান দেয় পােশাক খাত। ২০০৬-০৭ সালে পােশাক খাতের রপ্তানি আয় ছিল ৯.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। রপ্তানির এই পরিসংখ্যান থেকে ধরে নেওয়া যায় ২০২১ সালে পােশাক রপ্তানির লক্ষমাত্রা ৫০ বিলিয়ন নয়, ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উন্নয়ন সম্ভব। ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিসটিক রিভিউ ২০১৭ অনুযায়ী WTD বলেছেন পোশাক বিক্রয়ে বাংলাদেশের বৈশ্বিক বাজারের অংশ বেড়েছে ৬.৪ শতাংশ যা গত বছরের চেয়ে ০.৫০% বৃদ্ধি পেয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়: বাংলাদেশে মূলত আমদানি ও বৈদেশিক সাহায্য নির্ভর দেশ। নিত্য ব্যবহার্য পণ্য থেকে শুরু করে সামগ্রিক ব্যায়ভার এর জন্য বাংলাদেশ করে থাকে। পােশাক শিল্পের বিপুল রপ্তানি আয় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার পর্যাপ্ত মজুদ বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি: শপিং ব্যবসা, বন্দর ব্যবহার বৃদ্ধি, সড়কপথ, রেলপথ ও বিমান পরিবহনের ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে এবং সরকারের আয় বেড়েছে তথা বৈদেশিক বিনিয়োগের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। দেশি কাপড়ের বিশাল বাজার সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে ৭০-৮০ কোটি মিটার কাপড় প্রস্তুত করে। 
দারিদ্র্য বিমােচন: পােশাক শিল্প বিপুল পরিমাণ কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট প্রায় ১ কোটি জনগণের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ দারিদ্র্য বিমােচন হয়েছে যা অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। 
বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশের পােশাক শিল্প: বর্তমান বিশ্বে তৈরি পােশাকের বাজার ৪৫০ বিলিয়ন ডলারের। চীন একাই ১৬০ বিলিয়ন ডলারের বা ৩৫.৫ শতাংশ অংশীদার। সে তুলনায় বাংলাদেশের হিস্যা ছিল ৫.৪ শতাংশ। আমাদের অংশীদারিত্ব ৮ শতাংশে নিতে পারলে ৫০ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথ সুগম হবে। 
বাংলাদেশ থেকে পেশাক রপ্তানী হতে আয়ের শতকরা হিসাব: যুক্তরাষ্ট্র-২০.০৬%, জার্মানি ১৪.৭৫, যুক্তরাজ্য ১০.৪২%, ফ্রান্স ৫.৩৭% এবং অন্যান্য ৪৯.৪%। গত কয়েক বছরে বিশ্ব বাজারে তৈরি পােশাকের মূল্য উল্লেখযােগ্য হারে কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে ওভেন পােশাকের কাটিং এন্ড মেকিং চার্জ কমেছে। উদ্যোক্তরা জানিয়েছেন আগে যেখানে প্রতি ডজন পােশাকে CM পাওয়া যেত ১০ ডলার, বর্তমানে তা ৬ ডলারে নেমে গেছে। 
উপসংহার: বর্তমান বিশ্ব প্রতিযগিতার বিশ্ব। মুক্ত বাজার অর্থনীতি, অর্থনৈতিক মন্দা, জাতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রভৃতি পোেশাক শিল্পের জন্য অন্তরায়। এই অবস্থায় বিকশিত পােশাক শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রণে তাদের যুগােপযােগী সিদ্ধান্ত ও তার বাস্তবায়ন প্রয়ােজন। বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমবিকাশমান এবং তার উপযুক্ত উদাহরণ "New Eleven-11" সংযুক্তি। এ ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন রাখার জন্য পােশাক শিল্পকে অধিকতর রপ্তানিমুখী ও মানসম্পন্ন করে গড়ে তুলতে হবে।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment