তথ্য প্রযুক্তি খাত: আইটি সেক্টরে বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। Software Develomping & Apps তৈরির মতাে কাজ করার জন্য তিনিট জিনিস প্রয়ােজন। প্রথমত Analytical Strill, fac, Mathematical Skill এবং তৃতীয়ত, সুদূর প্রসারী ভিসন বা এক কথায় 'Auto visualization power' প্রথম দুটি বিষয়ে নিসংশয়ে বলা যায় আমরা ভারতের বা অন্য দেশের আইটি এক্সপার্টদের তুলনায় কোন অংশে পিছিয়ে নেই। আমাদের Analytical Skill যে কত ভালাে তা আমরা প্রমাণ করেছি Outsourcing খাতে। গত দু-তিন বছর যাবত আন্তর্জাতিক বড় বড় কোম্পানির Logo Design, Analytical Database Consulting, Graphics Desing, Web Devaloping ইত্যাদি কাজ আমরা অত্যন্ত সফলতার সাথে করেছি। আমাদের আউট-সাের্সরা বিড করে কাজগুলাে এনেছেন এবং নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে অত্যন্ত সুদক্ষভাবে তাদের কাজগুলাে সম্পন্ন করে তা Submit করেছেন। এখানে বলে রাখা ভালাে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো কখনােই কোয়ালিটির সাথে আপােষ করে না। সুতরাং আমাদের প্রদর্শন করতে হয়েছে। এতে একই সাথে আমাদের ফ্রিল্যান্সিং আউট-সাের্সারদের Analytical Skill অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার আসুন Mathematical Skill এর-প্রসঙ্গে। সাধারণত আইটি খাতের বেশিরভাগ কাজের জন্য Logarithem এর গাণিতিক সমস্যাগুলাের ওপর ভালাে দক্ষতার প্রয়ােজন হয়। আমাদের দেশের তরুণরা অনেক আগেই Logarithm foc Field Theory and polynomials, convex Geometry and Discrete Geometry & Numerical Analysis- T গণিতের জটিল ও কঠিন জায়গাগুলােতে কাজ করে এবং সফল হয়েছে। ম্যাথ অলিম্পিয়াড এর প্রমাণ সেখানে আমরা একবার রৌপ্য ও দুবার ব্রােঞ্জ পদক বয়ে এনেছি। এবার আসুন প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে। মূলত এই মুহূর্তে প্রধান সমস্যা হলাে আমাদের মানসিকতা, অথচ আইটি খাতে উন্নতির বড় একটি নিয়ামক হলাে সুদূরপ্রসারী চিন্তা। আজ স্টিভ জবস Apple এর স্বপ্ন না দেখলে আমাদের আইফোন ব্যবহার করা হতাে না বা বিল গেটস Microsoft-এর চিন্তা না করলে কম্পিউটার আমাদের কাছে এতাে সহজলভ্য হতাে না। এই সুদূরপ্রসারী চিন্তাধারায় আমরা কিছুটা পিছিয়ে থাকার পরও আমি তথ্য প্রযুক্তি খাতকে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় খাতগুলাের শীর্ষে রাখব।
কৃষিখাত: বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। প্রাকৃতিক কারণে আমাদের দেশের কৃষিখাত অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। আর এর সাথে যুক্ত হয়েছে উর্বর মাটি। এছাড়া আরও যে সম্ভাবনাগুলাে আছে তার মধ্যে রয়েছে প্রচুর নদী-নালা ও এর উর্বর পলিমাটি এবং কাঁচামালের সহজলভ্যতা। তবে এই খাতে উন্নতি সাধনের লক্ষ্যে অবশ্যই কৃষকের উন্নতি সাধন করতে হবে। মধ্যস্বত্বভােগী ও মহাজনী প্রক্রিয়ার বেড়াজাল ছিন্ন করে কৃষককে ফসলের প্রকৃত দাম দিতে হবে। আর দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিশ্ববাজারকে লক্ষ্যে আনতে হবে। এছাড়া কৃষি গবেষণাকে অধিক পরিমাণে উৎসাহ প্রদান করতে হবে এবং কৃষির উন্নত প্রযুক্তি ও প্রক্রিয়াকে কাজে লাগাতে হবে। ফসলের মজুদ বাড়ানাের জন্য অধিক পরিমাণে কোন্ডস্টোরেজ ও বিভিন্ন কৃষিনির্ভর ও উর্ধর এলাকায় ইপিজেড এর আদলে 'Agro Industrial Zone' তৈরি করতে হবে। তবেই এই কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের কৃষিখাত সােনালি খাতে রূপান্তরিত হবে।
তৈরি পােশাক খাত: বাংলাদেশের তৈরি পােশাক খাত অন্যতম শীর্ষ একটি অর্থ উপার্জনকারী খাত। কারণ এই তৈরি পােশাক খাত বাংলাদেশের অর্থনীতিকে অনেকদূর নিয়ে এসেছে। নিম্ন শ্রমিক খরচ ও পণ্যের গুণগত মান এর বড় কারণ। এরপরও এই সেক্টরে আরও এগিয়ে যাবার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এজন্য অবশ্যই নিরাপদ শ্রম পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।
জনশক্তি খাত: জনশক্তি খাত বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান খাত। তবে এ খাতে এতাে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমাদের পিছিয়ে থাকার কারণ অদক্ষ জনশক্তি। আমরা যদি আমাদের দেশের জনশক্তিকে উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান করে এরপর বিভিন্ন দেশে পাঠাই তবে নিঃসন্দেহে এই খাত হতে পারে আগামীদিনের সবচেয়ে সাফল্যময় একটি খাত।
পর্যটন খাত: অপার সৌন্দর্যের দেশ বাংলাদেশ। এ দেশে পাহাড় আছে, আছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। এছাড়াও রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও কৃষ্টি সম্বলিত স্থান। এই সকল স্থানে পর্যাপ্ত অবকাঠামাে নির্মাণ করে উপযুক্ত পর্যায়ে ব্র্যান্ডিং করলে মালদ্বীপ কিংবা শ্রীলঙ্কার ন্যায় বাংলাদেশের পর্যটন খাতও দেশের অর্থনৈতিক উন্নতিতে বিশাল বড় নিয়ামক হবে।
সিরামিক খাত: এ খাতে বাংলাদেশ বেশ সাফল্য দেখিয়েছে। তবে সুযােগ আছে আরও অনেকদূর যাওয়ার। বিশেষত বাংলাদেশের টেবিলওয়ার সিরামিক উত্তর আমেরিকা ও ইউরােপে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। এছাড়া স্যানেটারিওয়ার, ইনসুল্যাটার ও অন্যান্য সিরামিকেও আছে অপার সম্ভাবনা। তবে এ খাতে আরও অধিক সাফল্যের জন্য আরও বেশি টেকনিক্যাল এক্সপার্টস ও স্কিন্ড ম্যানেপাওয়ার আবশ্যক।
ইলেকট্রনিক্স খাত: বাংলাদেশ Semi-conductors প্রস্তুতকরণে একক অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম মােবাইল নেটওয়ার্ক আমাদের দেশে। তাই সময় এসেছে গৃহে ব্যবহার্য জিনিস তথা টেলিভিশন, ডিভিডি ও সিডি প্লেয়ারর্স, রেফ্রিজারেটর, এয়ারকন্ডিশনার, ওভেন ইত্যাদি নিজেরা প্রস্তুত করার। বাংলাদেশের 'Walton' নামের একটি কোম্পানি ইতােমধ্যে এই খাতে কাজ শুরু করেছে। তবে এ খাতে আরও উন্নতির জন্য স্কিন্ড সহজ প্রশিক্ষণবদ্ধ মানবসম্পদ নিশ্চিতকরণ আবশ্যক।
ফ্রোজেনফুড: সারা বিশ্বজুড়ে ফ্রোজেনফুড ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। বাংলাদেশেরও এ খাতে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষত ফ্রোজেনফিস ও শ্রিম্প/প্রােণের ব্যাপক চাহিদা বিশ্বজুড়ে রয়েছে।
ফার্মাসিটিক্যাল খাত: বাংলাদেশে তৈরি মেডিসিন ভ্যাক্সিন বা জাতীয় ফার্মাসিটিক্যাল পণ্য সারাবিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। তবে সম্ভাবনাময় এ সেক্টরে আরও অধিক উন্নতি সাধনের জন্য পণ্যের অধিক গুণগত মান নিশ্চিতকরণ আবশ্যক। এছাড়া এ বিষয়ে উচ্চতর গবেষণাকে অধিক পরিমাণে উৎসাহ প্রদান করতে হবে।
বিদ্যুৎ খাত: বাংলাদেশের Power Sector সবে মাত্র উন্নতি করতে শুরু করেছে। এক সময় বাংলাদেশে বিদ্যুতের জন্য আমরা পুরােপুরি সরকারের ওপর নির্ভরশীল ছিলাম। লােডশেডিং আর সিস্টেম-লসে ভরপুর ছিল এ খাত। এখন বেসরকারি উদ্যোগে এই খাতে বিনিয়ােগ হচ্ছে। তবে তা অব্যাহত রাখতে হবে।
অটোমােবাইল খাত: এই খাতটির সাথে তৈরি পােশাক খাতের মিল রয়েছে। সত্তরের দশকে তৈরি পােশাক খাতকে বেশ উচ্চাবিলাসী খাত বলা হতাে। কিন্তু একবিংশ শতাব্দিতে এসে এই তৈরি পােশাক খাত বাংলাদেশকে নতুন এক পরিচয় দিয়েছে। ঠিক তেমনি আজ অটোমােবাইল খাতকে অনেকের কাছে উচ্চাভিলাসী মনে হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে নিজস্ব ব্র্যান্ডের গাড়ি প্রস্তুত অবশ্যই সম্ভব।
এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি খাত: এই খাতটি নিঃসন্দেহে উচ্চাভিলাষী খাত। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে স্টিল ইন্ডাস্ট্রির প্রসার ঘটেছে। সুতরাং প্রথমে Unpowered aircraft ft Glíder plane' এবং পরবর্তীতে Powerd aircraft 'propeler jet, Rectoreraft' I এক্ষেত্রে কেবল দরকার সাহসী উদ্যোগ।
কনস্ট্রাকশন খাত: দেশের অভ্যন্তরে এই খাতের ব্যাপক প্রসার হয়েছে। এখন সময় এসেছে দেশের বাইরে আমাদের স্থপতি এবং প্রকৌশলীদের মেধাকে কাজে লাগাবার। এতে আমাদের রিয়েল এস্টেট খাত যেমন আন্তর্জাতিক পরিসরে যােগ হবে তেমনি বাংলাদেশের কনস্ট্রাকশন খাত। দেশের ন্যায় বিদেশেও ব্যাপক সুনাম অর্জন করতে পারবে।
উপসংহার: বাংলাদেশের এই অপার সম্ভাবনাময় খাতগুলাের সাফল্য অর্জনের লক্ষ্যে আমাদের তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারি উদ্যোগ ও বেসরকারি বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনাগুলাে হতে পারে একে অন্যের পরিপূরক। কেবল সরকারি উদ্যোগের দিকে তাকিয়ে থাকলেই দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। অপার সম্ভাবনাময় বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতপুলােকে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিচালিত করলে অচিরেই আমাদের মাতৃভূমি প্রিয় বাংলাদেশ বিশ্বদরবারে গৌরবের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
Post a Comment