SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা গণশিক্ষা

উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা 
বা স্বাক্ষরতার জন্য শিক্ষা 
বা বয়স্ক শিক্ষা
ভূমিকা : আমাদের দেশের নাম বাংলাদেশ। বাংলাদেশের শতকরা প্রায় আশি জন লােকই অক্ষরজ্ঞানহীন। এ বিপুল জনগােষ্ঠী যেখানে অশিক্ষা ও অজ্ঞতার অন্ধকারে ডুবে আছে সেখানে দেশের সামগ্রিক কল্যাণ হবে কি করে ? কাজেই এ দেশের নিরক্ষতার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা একান্তই কর্তব্য, এটি বুঝিয়ে বলার অপেক্ষা রাখে না। সাম্প্রতিককালে দেশের একটি ক্ষুদ্র অংশ এবং সচেতন নাগরিক হিসেবে প্রত্যেক শিক্ষিত ও সমাজহিতৈষী ব্যক্তিমাত্রই এ কথা অনুধাবন করছেন যে, গণশিক্ষা অর্থাৎ, সর্বজনীন শিক্ষাদান ব্যতীত দেশ তথা রাষ্ট্রের কল্যাণ হতে পারে না।
গণশিক্ষার অর্থ কি : একটি দেশের নরনারী সকলেই নিজেদের ভালােমন্দ, ইষ্ট অনিষ্ট বুঝতে পেরে নিজ নিজ ষার্থ সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত শিক্ষাদান করলে তাকে গণশিক্ষা বা সর্বজনীন শিক্ষা বলে। দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ নরনারী গ্রামে গঞ্জেই বাস করে। এদেশে সেকালের সভ্যতার কেন্দ্রস্থল ছিল গ্রাম। সুতরাং, গ্রামবাসীদেরকে পুঁথিপাঠ, জারী গান, যাত্রা প্রভৃতির মাধ্যমে গণশিক্ষা দেয়া হলেও যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে গ্রামের অজ্ঞ ও অশিক্ষিত লােকজন শক্তিমান শিক্ষিতদের ক্রীড়নক হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে গ্রামের নিরীহ ও সরল লােকেরা টাউট ও ঐ জাতীয় লােকের হাতে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছে। অবিলম্বে এর প্রতিকার হওয়া দরকার। গণশিক্ষা প্রচলন ছাড়া এর সত্যিকারের প্রতিকার সমভবপর নয়। জনগণের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে শিক্ষা বিস্তৃত হওয়া প্রয়ােজন সর্বাগ্রে। নচেৎ তারা ইষ্ট অনিষ্ট বিচার করতে ব্যর্থ হবে। দুঃখের বিষয়, আমাদের দেশে গণশিক্ষার অবস্থা অতীব শশাচনীয়। মূলত গণশিক্ষা বলতে কেবল কিছু বইপত্র পড়ে কুল কলেজের একাডেমিক শিক্ষা গ্রহণের কথা বুঝাচ্ছেন। এটি এমন একটি শিক্ষা যা দ্বারা জনসাধারণ নিজেদের ভালােমন্দ বিচার করার ক্ষমতা লাভ করে। মানুষ তখন কেবল নিজের ব্যক্তিগত চিন্তায় মগ্ন থাকে না, বরং সামগ্রিক দেশের মজ্গাল চিন্তায় লিপ্ত থাকে এবং দেশ যদি বিপদের মধ্যে পড়ে তা হলে প্রত্যেকটি মানুষ ব্যক্তিগতভাবে বিপদের মধ্যে পড়বে, এ উপলব্ধি যখন প্রত্যেকটি মানুষের মধ্যে জাগ্রত হবে তখনি বােঝতে হবে যে, গ্ণশিক্ষার ফল ফলতে শুরু করেছে।
আমাদের দেশ ও গণশিক্ষা : আমাদের দেশ বাংলাদেশ। এদেশের শতকরা আশিজন লােক নিরক্ষর। একটা স্বাধীন দেশে এখনকার যুগে, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগােষ্ঠী মূর্খ ও নিরক্ষর হয়ে থাকবে এর চেয়ে লজ্জার আর কি হতে পারে? আমাদের দেশে সিকি যুগ পেরিয়ে গেছে। এর আগে পাকিস্তানীদের প্রবঞ্চনা ও ব্রিটিশদের অবহেলার কুচক্লে এদেশের মানুষ শিক্ষার প্রতি আগ্রহী হয় নি। এজন্যই শিক্ষার হার এত নিচে। শিক্ষিত বলা হবে তাদেরকেই যারা স্বজনদের কাছে চিঠিপত্র লিখতে পারে এবং হিসাবনিকাশে রাখতে ও খবরের কাগজ পড়তে পারে। সেদিক থেকে শিক্ষার হার ৩৫% এর বেশি হবে না। এ কারণেই এদেশ এত অনুন্নত। আমাদের দেশে গণশিক্ষার সমস্যাটিকে যেমন চিহ্নিত করা গেল ঠিক তেমনি এ ব্যাপারে ভাবনা চিন্তার । বিশেষ প্রয়ােজন রয়েছে। বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থায় এ সমস্যার সমাধান করা কঠিন; তবুও কি বসে থাকলে চলবে? জীবনে শিক্ষার কতটুকু প্রয়ােজন তা অনেকের ধারণা নেই। বাপ দাদারা লেখাপড়া না করে তাে ভালােই ছিলেন। আমাদের আর পড়াশুনার জন্য বাড়তি পরিশ্রমের দরকার কি? গৃহস্থালি কাজ করেই পারা যায় না, পড়াশুনার সময় কোথায়? আমরা সচেতন নই তাই এ অবস্থা। এখন প্রয়ােজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তার সঠিক বাস্তবায়ন।
গণশিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা : শিক্ষা মৌলিক অধিকার। তাই শিক্ষার প্রয়ােজনীয়তা প্রশ্নাতীত। আমাদের দেশের শিক্ষার হার অতি নিচু। সংগত কারণেই গণশিক্ষার বিকল্প নেই। উন্নত দেশগুলাে শিক্ষাকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে ধরে নিয়ে বাধ্যতামূলকভাবে শিক্ষা ব্যবস্থা সর্বস্তরে চালু করেছে বলেই সর্বত্র উন্নতির জোয়ার বয়ে চলেছে। গণশিক্ষার মাধ্যমে দেশপ্রেম, জাতীয়তাবােধ, চেতনা জাগ্রত হয় এবং শিল্প সংস্কৃতির গুরুত্ব অনুভূত হয়। তাই গণশিক্ষার বিকল্প নেই। 
পরিকল্পনা গ্রহণের উপায় কি : দেশের নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার জন্য সুষ্ঠু উপায়ে পরিকল্পনা গ্রহণ বাঞ্চনীয়। প্রত্যেক গ্রাম, ও ইউনিয়ন, থানা ও প্রত্যেক জেলা পর্যায়ে সাক্ষরতা অভিযানের প্রােগ্রাম নিতে হবে। গণতন্ত্রের সাফল্যের জন্যও সবার আগে প্রয়ােজন সর্বজনীন শিক্ষা অর্থাৎ গণশিক্ষা। সর্বজনীন ভােটাধিকারের পূর্বশর্ত হল গণশিক্ষা। দেশের জনসাধারণকে শিক্ষিত করে তুলতে হবে, তা হলে এরা ভালােমন্দ বিচার করতে সমর্থ হবে। ভালােমন্দ বিচার করার শক্তি অর্জন করলে সে রাজনীতি বিষয়েও উদাসীন থাকতে পারবে না। দেশকে অশিক্ষিত রেখে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে চাইলে দেশের সত্যিকার উন্নতি হবে না। কাজেই গণশিক্ষা দ্বারা সমাজের সকলের মেরুদণ্ডে শক্তি সঞ্চার করতে হবে। দেশের প্রত্যেক জনগােষ্ঠীর মধ্যে গণশিক্ষা দান অপরিহার্য; প্রাপ্ত বয়স্কদের শিক্ষা দিতে হবে। গণশিক্ষা ছাড়া বিশ্বের কোন দেশই জনকল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে নি। এমন কোন উদাহরণ নেই যে, গণশিক্ষা বা সর্বজনীন শিক্ষা ব্যতিরেকে অমুক রাষ্ট্র জনকল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আর এ কথাও স্বীকার্য যে, জীবন ও জগতের ধারণা, মানসিক উন্নতি, জীবনের নিরাপত্তা এগুলাে পেতে হলে সর্বজনীন শিক্ষাদান করতে হবে। আসলে মানুষের চরিত্র গঠন ও ব্যক্তিত্বের পূর্ণ বিকাশ সাধনের জন্য সাক্ষরতা অভিযান চালানাে অত্যাবশ্যক। দেশের মানুষ যখন গণশিক্ষার আওতায় পড়বে তখনই কল্যাণ সম্ভবপর। 
উপসংহার:  বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ এ যুগে গণশিক্ষা দ্বারা দেশের কোটি কোটি মানুষকে শিক্ষিত করে তুলতে না পারলে তা জাতি তথা রাষ্ট্রের জন্য ধ্বংসই ডেকে আনবে। দেশের সরকার ও শিক্ষিত ব্যক্তিদের এ বিষয়ে কর্তব্য রয়েছে, তাঁরা এ সম্বন্ধে সচেতন হলে তবে রাষ্ট্রের কল্যাণ সম্ভবপর।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment