মূলভাব: গ্রন্থগত বিদ্যা যা আত্মস্থ করা হয়নি এবং অন্যের অধিকারে থাকা ধন যা স্বীয় করায়ত্ত হয়নি— এ সমস্তই নিরর্থক। কারণ প্রয়ােজনের মুহূর্তে এগুলাের যথাযথ ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। আর প্রয়ােজনের ; সময় যা কাজে লাগানাে যায় না তা থাকা না থাকা সমান কথা।
সম্প্রসারিত ভাব: পৃথিবীতে মানুষের জীবনে ধন-সম্পদ ও বিদ্যার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। বিদ্যা মানুষের অজ্ঞানতা দূর করে, শাশ্বত সুন্দরের পথ নির্দেশ করে। কিন্তু বিদ্যা যদি গ্রন্থের ভেতরেই মলাটবদ্ধ হয়ে নির্জীব পড়ে থাকে, মানুষ যদি তা আত্মস্থ না করে কিংবা আত্মস্থ করে চলমান জীবনপ্রবাহে কাজে লাগাতে না পারে, তবে সে বিদ্যা মূলত কোনাে বিদ্যাই নয়। মলাটবদ্ধ নিজীব বিদ্যাকে মুক্ত করে এনে মানুষের চলমান জীবনের সাথে তাকে অন্বিত করে দিতে হবে। তবেই সে বিদ্যা পৃথিবীর মানুষের মঙ্গলার্থে ব্যবহৃত হতে পারে। অন্যদিকে নিজের অর্জিত ধনসম্পত্তি যদি অন্যের কাছে রক্ষিত থাকে, তবে প্রয়ােজনের সময় রক্ষিত সম্পত্তি উদ্ধার করাও অনেক সময় প্রকট সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। বরং নিজের কাছে রক্ষিত ধনসম্পত্তিই প্রয়ােজনমাত্র মানুষ ব্যবহার করতে পারে। সুতরাং সার্থক ও সুন্দর জীবনের প্রয়ােজনে বিদ্যাকে গ্রন্থের বন্দিশালা থেকে মুক্ত করে আত্মস্থ করতে হবে, পরের হাতে সংরক্ষিত সম্পত্তিকে নিজের করায়ত্ত করতে হবে। বিদ্যা ও ধন- সম্পদ যখন মানুষের যথার্থ প্রয়ােজন মেটায় তখনই তার সার্থকতা কিন্তু মানুষের যথার্থ প্রয়ােজনের সময় যদি তা কাজে লাগানাে না যায়। তবে সেই বিদ্যা ও অর্থ-সম্পদের কোনাে মূল্য নেই। মন্তব্য: গ্রন্থগত বিদ্যা এবং পরহস্তের ধন জীবনের প্রয়ােজনীয় সময়ে অব্যবহৃত থাকে বিধায় এগুলাে প্রকৃতপক্ষে কোনাে বিদ্যা বা ধন নয়। বিদ্যা এবং ধনকে মানুষের নিজের নিয়ন্ত্রণে রেখে প্রয়ােজনে ব্যবহার করতে পারার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সার্থকতা।
Post a Comment