SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা নিরক্ষরতা দূরীকরণ


স্বাক্ষরতা দিবস ও বাংলাদেশ 
বা নিরক্ষরতা দূরীকরণে গৃহিত পদক্ষেপ 
বা নিরক্ষরতার বিরুদ্ধে অভিযান 
বা নিরক্ষরতার অবসান স্বাক্ষরতার উন্নয়ন 
বা নিরক্ষরতা দূরীকরণের প্রয়ােজনীয়তা 
বা নিরক্ষরতা দূরীকরণে ছাত্রসমাজের ভূমিকা 
বা নিরক্ষর মুক্ত বাংলাদেশ
ভূমিকা : আমাদের দেশের বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে নিরক্ষরতা দূরীকরণের সমস্যা আশু প্রতিকারের অপেক্ষায় রয়েছে। অন্ন, বস্ত্র ও দেশরক্ষা সমস্যার সাথে এ সমস্যা সমাধানের উপর জাতি ও রাষ্টের সর্বাধিক উন্নতি ও প্রগতি নির্ভর করছে। এ সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য সরকার ও দেশবাসীর তৎপর হওয়া উচিত। কারণ , কোন স্বাধীন জাতির পক্ষে মূর্খ ও নিরক্ষর হয়ে থাকা জাতীয় মর্যাদার বিশেষ হানিকর।
বাংলাদেশের নিরক্ষরতা : বাংলাদেশের শােচনীয় নিরক্ষরতা সভ্যতার কলজ্কস্বরূপ। যুদ্ধ, ব্যবসায়-বাণিজ্য, কৃষি, স্বাস্থ্য, রাজনৈতিক প্রগতি এক কথায় জীবনের প্রত্যেকটি প্রয়ােজনের ব্যাপারে আমাদের এখন নিজের পায়ে দাড়াতে হবে এবং আধুনিক দুনিয়ার প্রগতিশীল জাতিসমূহের মধ্যে স্থান করে নিতে হবে। এর জন্য সর্বাগ্রে আমাদের নিরক্ষরতার কলঙ্ক দূর করা প্রয়ােজন। আমাদের দেশের শতকরা ৬৪ জন লােক শিক্ষিত। এত কমসংখ্যক লােক যে দেশে শিক্ষিত, সেখানে জাতীয় উন্নতি কিভাবে সম্ভবপর হবে, এটি সত্যই চিন্তার বিষয়। আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবের নিকট সাধারণভাবে চিঠিপত্র লিখতে, হিসেবনিকেশ রাখতে বা খবরের কাগজ পড়তে ও বুঝতে পারে, এ রকম লােককেই মােটামুটি শিক্ষিত বলতে পারা যায়। কোন উন্নত দেশেই নিরক্ষরতার প্রতি সে দেশের কর্তৃপক্ষ নির্লিপ্ত থাকতে পারে না। পরাধীনতার স্বৈরাচারী শাসন হতে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত রাষ্ট্রগুলােও নিরক্ষরতা সমস্যা স্বতঃস্ফূর্ত উদ্দীপনার সাথে সমাধান করছে। নজীরসরূপ বলা যেতে পারে, অন্যতম মুসলিম রাষ্ট্র তুরকে বিশ বছরের মধ্যে শিক্ষার মান শতকরা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে; “ইউরােপের রুগ্নমানব” (Sick man of Europe) বলা হতো। ক্রিশ লক্ষ বাঙালির রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ পরাধীনতার অথচ এ তুরসককে একসময় জিঞ্জির ভেঙ্গে স্বাধীনতা লাভ করেছে। এখন দেশের লােককে শিক্ষিত ও শক্তিশালী হতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা বিভাগ দেশব্যাপী প্রাথমিক শিক্ষার পরিকল্পনা করেছেন। এ পরিকল্পনায় দেশবাসীর আন্তরিক সমর্থন আছে। প্রাইমারি শিক্ষা জনশিক্ষার আওতায় পড়ে; কারণ এটি জনশিক্ষার প্রাথমিক পদক্ষেপ। প্রাইমারি শিক্ষার প্রতি যেমন দেশ ও সরকারের আশু দৃষ্টির প্রয়ােজন তদ্রুপ বয়স্কদের শিক্ষার পরিকল্পনারও প্রয়ােজন। আনন্দের কথা যে আমাদের বর্তমান সরকার প্রাইমারি শিক্ষার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দিয়েছেন। প্রাইমারি শিক্ষার ফল আস্তে আস্তে পাওয়া যাবে, কিন্তু বয়স্কদের শিক্ষার ফল সাথে সাথে পাওয়া যাবে না ।
বয়স্কদের শিক্ষা প্রণালী : এসব যুক্তির পর বয়স্কদের শিক্ষা অসম্ভব বা দুঃসাধ্য ভাবা উচিত নয়। জাতিসংঘের সমাজ, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিভাগের ডক্টর লাওবাশ তাঁর বহু ব্যবহৃত মূলশব্দ (কি-ওয়ার্ড) ও চিত্র শব্দ (পিকচার-ওয়ার্ড) প্রণালীতে বয়সকদের মধ্যে দ্রুত শিক্ষা বিস্তারের রীতির উৎকর্ষ সাধন করেছেন। এসমস্ত প্রণালীতে দুনিয়ার বিভিন্ন জায়গায় ভাষায় কাজ হচ্ছে। বাংলাদেশের বিচার বিভাগের ইউরােপীয় কর্মচারী মিঃ বিভার আমাদের দেশের বহুসংখ্যক স্কুলে অনেক বছর পর্যন্ত এসকল প্রণালীর পরীক্ষা করেছিলেন। এতে নিরক্ষরতা দুর্ভোগ কতকটা চিরদিনের জন্য কেটে গিয়েছে। তাঁর প্রকাশিত ( Education of All with in Six months) 'ছয় মাসে শিক্ষা লাভ’ পুস্তকখানি তার পরীক্ষিত প্রণালীর বিশদ পরিচয় দান করেছে। তাঁর প্রায় সমস্ত অবসরকাল তিনি এ দেশের নিরক্ষরতার উপকারার্থে ব্যয় করেছেন।
বাংলা ভাষা চালু করা : বাংলা ভাষা চালু করার ব্যাপক পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে। সরকার কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বাংলা একাডেমির ভাষা কমিটি বাংলা ভাষা সহজ করতে ও এটির ব্যাপক সম্প্রসারণ করতে সুপারিশ করেছেন। এ সুপারিশ অনুসারে যে সহজ বাংলা' শিক্ষা পদ্ধতির প্রচলন করা হয়েছে; তার সাহায্যে অপেক্ষাকৃত অল্প সময়ে বাঙালি অথবা অবাঙালি যে-কোন ব্যক্তি বাংলা শিখতে পারবে। বাংলা ভাষা শিক্ষা দেওয়ার জন্য বাংলা একাডেমিতে একটি কোর্স চালু করা হয়েছে। কয়েক বছর হল এ কোর্স চলছে। আমাদের এখন একমাত্র স্বপ্ন হচ্ছে আমাদের দেশের অশিক্ষিত ভাইবােনদের নিরক্ষরতা দুর্ভোগ হতে মুক্তি দেওয়া। আমাদের এ সকল ভাইবােন তথা দেশের বিরাট জনসমুদ্র নতমস্তকে দাড়িয়ে আছে। তাদের কপালে শতবর্ষের পুরানাে জুলুমের করুণ কাহিনী লিখিত। তারা ভাগ্যকে অভিশাপ দেয় না, তারা অন্য কাকেও দোষী করে না। তারা জীবিত কিন্তু প্রাণহীন। এটি আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের জীবনের ছবি। জনগণই আমাদের সমাজ জীবনের ভিত্তি, আমাদের জীবিকার মূল।
উপসংহার : ছাত্রগণ তাদের অবসর ও ছুটির সময় যদি রুশ ও সমাজতান্ত্রিক দেশের ছাত্রছাত্রীদের ন্যায় জনশিক্ষার পশ্চাতে ব্যয় করে, নতুন পদ্ধতি অনুসারে বালক ও বয়কদের শিক্ষাদান করে তবে নিরক্ষরতার অন্ধকার অচিরেই দূর হয়ে যাবে এবং সেদিনই আমাদের স্বাধীনতা লাভ সার্থক, সুন্দর ও পূর্ণাঙ্গ হবে।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment