SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা সড়ক দুর্ঘটনা: কারণ ও প্রতিকার

ভূমিকা :
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অন্যতম দুঃখজনক সমস্যা হলাে সড়ক দুর্ঘটনা। নিরাপদ জীবনযাপনের জন্যে একটা সার্বক্ষণিক হুমকি সড়ক দুর্ঘটনা। আমাদের দেশে প্রায় প্রতিদিনই সংঘটিত হচ্ছে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা, নির্বিবাদে প্রাণ হারাচ্ছে অসংখ্য মানুষ। খবরের কাগজ খুললেই চোখে পড়ে সড়ক দুর্ঘটনার খবর। এ যেন নিত্যনৈমিত্তিক একটা ব্যাপার। সড়ক দুর্ঘটনা মৃত্যুদূত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের দরজায়। এর মরণছােবল থেকে বাঁচার উপায় বের করা অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাদেশের সড়ক ব্যবস্থাপনা : পাকিস্তান সৃষ্টির পূর্বে আমাদের দেশে পাকা সড়কের দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র ৬০০ কি মি। যার বেশির ভাগটাই ছিল সরু রাস্তা এবং ভারি যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। কিন্তু বর্তমানে সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বাংলাদেশের সড়ক ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১১ হাজার ৫০০ কিলােমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। এর ৪০% ভাগই হাইওয়ে মানসম্পন্ন। ১৯৯৪-৯৫ অর্থ বছরে বাংলাদেশে মােটর গাড়ির সংখ্যা ছিল ৩ লক্ষ ৬৭ হাজার ১২ টি। বর্তমানে যা প্রায় পাঁচ লক্ষে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সড়ক ব্যবস্থার উন্নতি ঘটলেও দিন দিন সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা দ্রুত বেড়েই চলেছে।
সড়ক দুর্ঘটনার কারণ : কারণ ছাড়া দুর্ঘটনা ঘটে না। সড়ক দুর্ঘটনার বহুবিধ কারণের মধ্যে নিম্নলিখিত কারণগুলাে অন্যতম :
ক. দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ড্রাইভারের অপ্রতুলতা; 
খ. অধিকাংশ গাড়ির অনুপযুক্ততা বা রিকন্ডিশন্ড গাড়ির অধিক ব্যবহার; 
গ. রাস্তার তুলনায় পথচারী ও গাড়ির আধিক্য; 
ঘ. গাড়ির বহনক্ষমতার বাইরে লােক নেওয়া; 
ঙ. গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত সড়কসমূহে পথচারীদের জন্যে প্রয়ােজনীয় ফুটপাত না থাকা;
চ. গাড়ির অনিয়ন্ত্রিত গতিবেগ; 
ছ.  নিরাপত্তা আইন ও ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়ােগ না করা; 
জ. নিম্নমানের রাস্তা নির্মাণ; 
ঝ. ব্যস্ত রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটে চলাফেরা করা; 
ঞ. অনিয়ন্ত্রিত ওভারটেকিং ইত্যাদি। 
সড়ক দুর্ঘটনার পরিণতি : সড়ক দুর্ঘটনার ফলে সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিটি সাধিত হচ্ছে তা হলাে মানবসম্পদের বিনষ্টি। এ ক্ষতি অপূরণীয়। তারপরেই রয়েছে অর্থনৈতিক ক্ষয়-ক্ষতি। প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ ২৫ কোটি ডলার বা এক হাজার কোটি টাকা। সমস্যাটা জটিলতর হয় তখনি যখন দেখা যায় ক্ষয়-ক্ষতির প্রায় পুরােটাই বৈদেশিক মুদ্রার। কারণ মােটরগাড়ি, স্পেয়ার পার্টস কিনতে হয় বিদেশ থেকে। এক গবেষণায় দেখা যায় উন্নয়নশীল দেশসমূহের প্রতি কিলােমিটারে সড়ক দুর্ঘটনার হার ব্রিটেনের চেয়ে দ্বিগুণ। বাংলাদেশে প্রতি দশ হাজার যানবাহনে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের হার ১৬৯ জন, যা উন্নত দেশগুলাের তুলনার প্রায় ৩০ গুণ বেশি।
সড়ক দুর্ঘটনার প্রতিকার : সড়ক দুর্ঘটনা বর্তমানে আমাদের সামাজিক। সমস্যায় পরিণত হয়েছে। মানুষ হয়ে পড়েছে নিরাপত্তাহীন। প্রতিনিয়ত। নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান জীবন। তাই দেশ, জাতি, সর্বোপরি দেশের। জনগণের কল্যাণের জন্যে এ সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজে বের করা আশু প্রয়ােজন। 
সড়ক দুর্ঘটনারােধকল্পে নিম্নলিখিত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণ করা যেতে পারে : 
ক. চালককে প্রকৃত প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হতে হবে এবং প্রকৃত লাইসেন্সধারীরা গাড়ি চালনা করে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে; 
খ. চলন্ত অবস্থায় চালকের সাথে কথা বলা যাবে না, ওভারটেকিং 
গ. প্রতিযােগিতা দূর করতে হবে; রিকন্ডিশন্ড গাড়ির ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং গাড়ি চলাচলের উপযুক্ত কি না তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে;
ঘ. প্রধান প্রধান ও ব্যস্ত সড়কে পথচারীদের জন্যে প্রয়ােজনীয় ফুটপাত ও ওভারব্রিজের ব্যবস্থা করতে হবে; 
ঙ. গাড়ির গতিসীমা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। সীমালঙ্নকারীদের শাস্তির বিধান করতে হবে; সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্রাফিক পুলিশদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে, যাতে নিরাপত্তা আইনগুলাের যথাযথ প্রয়ােগ 
চ. নিশ্চিত ও শাস্তির কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। 
উপসংহার : সড়ক দুর্ঘটনা যত জটিল সমস্যাই হােক না কেন আমরা সকলে এর সমাধানে এগিয়ে এলে, আন্তরিকভাবে চেষ্টা করলে এ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া অসম্ভব নয়। এজন্যে সকলকে সচেতন করে তুলতে হবে এবং প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবেই সড়কপথ হয়ে উঠবে নিরাপদ ও আনন্দদায়ক। নিশ্চিত হবে নাগরিক জীবন।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment