বাণিজ্য মেলা ৯৫: বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক মানের বাণিজ্য মেলা প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৯৫ সালে। দেশী-বিদেশী শিল্পোদ্যাক্তাদের মাঝে পারস্পরিক সেতুবন্ধন রচনা এবং দেশে উৎপাদিত রপ্তানিযোগ্য পণ্য সামগ্রীকে বিদেশী আমদানিকারকদের কাছে পরিচিত করে তােলার মাধ্যমে দেশের রপ্তানি বাণিজ্যকে আরও চাঙা করার সুদূরপ্রসারী লক্ষ্যকে সামনে রেখে ১৯৯৫ সাল থেকে ঢাকার শেরে বাংলানগরে প্রতি বছর আয়ােজন করা হয় ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। ৭ জানুয়ারি মেলা শুরু হয়, চলে ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত। ২৩ দিন ব্যাপী এ মেলা চলে। ১১ লাখ বর্গফুট এলাকা জুড়ে এক বিশাল চত্বরে ২৭টি প্যাভিলিয়ন, ২২টি মিনি প্যাভিলিয়ন, ১৬৪টি স্টল-এর সমন্বয়ে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে ১৭টি দেশ ও ৭১টি বিদেশী কোম্পানি অংশগ্রহণ করে।
বাণিজ্য মেলা ৯৬: দ্বিতীয় বাণিজ্য মেলা শুরু হয় ৯৬-এর ২ জানুয়ারি। চলে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। ২৬ দিন ব্যাপী এ মেলা বিদেশী ছিল অনেক পরিসর, সুদৃশ্য ও পরীক্ষিত। ১৫ লাখ বর্গফুট এলাকা জুড়ে এ মেলায় ছিল ২৮টি প্যাভিলিয়ন, ৪১টি মিনি প্যাভিলিয়ন, স্টল ২১৬টি। অংশগ্রহণকারী বিদেশী দেশ ১৬টি, বিদেশী কোম্পানি ৮২টি। অনুমিত ট্রেডিং ১২০ কোটি টাকা।
বাণিজ্য মেলা ৯৭ ঃ ২৮ দিন ব্যাপি এ মেলা শুরু হয় ৯৭ এর ২২ ফেব্রুয়ারি চলে ২১ মার্চ পর্যন্ত। এবারে মেলার চত্বর বাড়েনি। ১৬-এর বাণিজ্যমেলার চেয়ে আঙ্গিক ও বৈশিষ্ট্যগত দিক থেকে এ মেলার বৈসাদৃশ্য খুব একটা খুঁজে পাওয়া যায় না। প্যাভিলিযন সংখ্যা অপরিবর্তিত ছিল। মিনি প্যাভিলিয়ন ৫০টি, স্টল ২৭২টি। অংশগ্রহণকারি বিদেশী দেশ ২৩টি, বিদেশী কোম্পানি ১২০টি। এবারে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হয়েছে ৪৭ লক্ষ টাকা। প্রথমবারে দিতে হয়েছিল ৩ কোটি ৭২ লক্ষ টাকা, দ্বিতীয়বারে ৭৫ লক্ষ টাকা। মেলায় কোন-বেচায় আয় হয়েছিল ৪১ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
বাণিজ্য মেলা ৯৮: এবারের বাণিজ্য মেলা শুরু হয়েছে ২২ ফেব্রুয়ারি- চলে ২১ মার্চ পর্যন্ত। এবারের মেলায় ৩৬৪টি দেশী বিদেশী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা অংশ নিয়েছে। তন্মধ্যে দেশী ২৬২টি প্রতিষ্ঠান এবং বাইরে ১৯টি দেশের ১০২টি প্রতিষ্ঠান। প্যাভিলিয়ন সংখ্যা ছিল ৩৫ টি, মিনি প্যাভিলিয়ন ৫৭টি আর স্টল ছিল ২৭২টি । এ বছর কোনাে ভর্তুকি দিতে হয় নি। এ বছর বেচাকেনা হয়েছে ১ কোটি ৭৮ লাখ টাকার পণ্য।
বাণিজ্য মেলা ‘৯৯ ঃ পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি ১ তারিখ পঞ্চম ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা শুর হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয় ২ ফেব্রুয়ারি। এবারের মেলায় অংশ নেয়ার জন্য স্থানীয় ৭৭৬ টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করে। তবে বরাদ্দ দেয়া হয় ৩০২টিকে। এর মধ্যে ২৫টি প্যাভিলিয়ন, ৪৪টি মিনি প্যাভিলিয়ন এবং ২২৩টি স্টল। এ বছরের মেলায় কেনা-বেচা হয়েছে ৩ কোটি ৯২ লাখ টাকার পণ্যসামগ্রী। এবারে উল্লেখযোেগ্য দিক ছিল-মেলার কার্যক্রম ইন্টারনেট সম্প্রচারে ব্যবস্থা নেয়া। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরাে এবং ডিজিটাল ওয়েব কর্পোরেশনের যৌগ উদ্যোগে মেলা উপলক্ষে একটা ওয়েব সাইট খােলা হয়। তাতে অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান ও পণ্যসামগ্রী সম্পর্কে নানা ধরনের তথ্য প্রচার করা হয়।
ভবিষ্যৎ চিন্তা-ভাবনা: দেশের রপ্তানি বাজার সম্প্রচার ও উন্নয়নের লক্ষে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরাে (ইপিবি) আগামী অর্থ বছরের জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলাকে কেন্দ্র করে এক ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, জাপান, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, পাকিস্তান, সৌদি আরব, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া ও মিসরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ২৭টি স্টল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় অংশগ্রহণ করে। তাছাড়া ইপিবি নেপাল ও দক্ষিণ আফ্রিকায় দুটি পৃথক মেলার আয়ােজন করবে। এ ছাড়া বিদেশী ক্রেতাদের কাছ থেকে ৪৬টি বাণিজ্যিক অনুসন্ধানও পাওয়া গেছে। রাজধানীর বাইরে অন্তত তিনটি গার্মেন্টস পল্লী স্থাপনের লক্ষে স্থান ও অন্যান্য সুযােগ-সুবিধা নির্ধারণ করে রিপাের্ট প্রদানের का अम জন্য বাণিজ্যিক সচিবকে আহবায়ক করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে।
উপসংহার: 'প্রাচীন কালের একটি কথা প্রচলিত আছে 'বাণিজ্যিক বসতে লক্ষ্মী কথাটি মন্দ নয়। এ বাণিজ্য নিয়েই মেলা। রাজধানীর শেরে বাংলানগরে বিস্তৃত এলাকা জুড়ে ৯৫ থেকে প্রতিবারেই এ মেলা বসে এবং আমাদের বাণিজ্য ভবনের বাসিন্দারা বাইরের জিনিস আমদানি করে মুনাফা অর্জন করার পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব বিপণন দ্রব্যের সমাহার করে থাকে। মুক্তবাজার অর্থনীতির এ যুগে নিজস্ব সম্পদ কাজে লাগিয়ে গুণগত মানসম্পন্ন দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদনের আয়ােজন করে প্রতিযােগিতায় টিকে থাকুক; আমাদের বাণিজ্যিক ভবনের লােকদের কাছে এটিই প্রত্যাশা।
Post a Comment