SkyIsTheLimit
Bookmark

বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে সংকট ও সমাধান রচনা

শিক্ষাঙ্গনে সৃষ্ট সংকট ও সমাধান
বা সংকটমুক্ত শিক্ষাঙ্গন

ভূমিকা :
শিক্ষাঙ্গন একটি অতি পবিত্র স্থান। বিদ্যাপিঠে দাঁড়িয়ে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকরা আদর্শ জীবন গড়ে তােলে। একটি অট্টালিকা তৈরি করতে হলে যেমন শক্ত মজবুত ভিত্তির প্রয়ােজন তেমনি আদর্শ জাতি গঠনে উন্মুক্ত শিক্ষাঙ্গন প্রয়ােজন। কিন্তু দেশব্যাপি শিক্ষাঙ্গনের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মানব দেহ যেমন দুর্বল হয়ে পড়ে তেমনি এদেশের অধিকাংশ শিক্ষাঙ্গন এরূপ নানামুখী সংকটের সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।

শিক্ষাঙ্গনের সংকট
(i) নকল প্রবণতা : ছাত্র মানেই পরীক্ষার্থী। কয়েকটি পরীক্ষার মাধ্যমেই ছাত্রজীবনের শেষ হয়। আর পরীক্ষা হলাে ছাত্রদের মেধা মূল্যায়নের একটি পদ্ধতি। এ পদ্ধতির মাধ্যমে ছাত্রদের জ্ঞানের পরিধির পরিমাপ করা হয়। কিন্তু একথা আজ দিনের আলাের মত সত্য যে, পরীক্ষা নামক পুলসিরাত পার হওয়ার জন্য অনেক ছাত্রই 'নকল নামক দুর্নীতির আশ্রয় গ্রহণ করে। কারণ, দেশের ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক সর্বোপরি সবারই মূল উদ্দেশ্য ছাত্রদের পরীক্ষায় সাফল্য। এতে বাধাদান করলে, যে কোন ধরনের অপকর্ম করতে তারা দ্বিধাবােধ করে না।

(ii) সন্ত্রাস : সন্ত্রাস শিক্ষাঙ্গনের শান্তি, শৃঙ্খলা ব্যাহত করে। সন্ত্রাস আজ সমাজে সর্বগ্রাসী হয়ে প্রভাব বিস্তার করেছে। থেকে শিক্ষাঙ্গনও বাদ পড়ে নি। সমাজের শীর্ষস্থান শিক্ষাঙ্গনে আজ অস্ত্রের ঝনঝনানি, রাজনীতি, চাদবাজি আর মাস্তানির দৌরাত্মে ডাস্টবিনের নারা আবর্জনায় পরিণত হয়েছে।  

(iii) ছাত্র রাজনীতি : শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। প্রতিটি রাজনৈতিক দল তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ এর কবল অপ্রত্যাশিতভাবে সন্ত্রাসঙ্গনে পরিণত হয়েছে। হাসিলের জন্য ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়। ফলে এসব সংগঠন পরস্পরের বিরুদ্ধে অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষমতায় মেতে উঠে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সবসময় আতংকগ্রস্ত অবস্থায় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে হয়। সম্প্রতি আমাদের দেশের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গনে এ অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারে একটি মেধাবী ছাত্রী রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। এ উচ্ছঙ্খল রাজনীতির ফলে শিক্ষাঙ্গন যেমন কলুষিত হয় তেমনি শিক্ষার মান ও হ্রাস পায়। 

(iv) শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতা : একজন শিক্ষক পাঠদানের সাহায্যে সেই বিষয়কে সহজসিদ্ধ করে তােলে। কিন্তু অধিকাংশ পেশাদারী শিক্ষক শ্রেণী কক্ষে ঠিকমত পাঠদান না করে কৌশলে প্রাইভেট টিউশনির উপর ইংগিত প্রদান করে। শুধু তাই নয়, অনেক অনভিজ্ঞ শিক্ষক আছে যারা ঠিকমত পাঠদানে অক্ষম। ফলে শিক্ষার্থীগণ পাঠে আনন্দ পায় না। 

(v) ফল প্রকাশে বিলম্ব : নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলেও নির্ধারিত সময়ে পরীক্ষার ফলাফল ঘােষণা করা হয় না। এতে ছাত্রসমাজ এবং অভিভাবকদের অবর্ণনীয় ক্ষতি সাধিত হয়। অভিভাবক আশা করেন তার সন্তান সাফল্যের সাথে পাঠদান সম্পন্ন করে কর্মজীবনে প্রবেশ করবে। আবার ছাত্ররাও উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ কিংবা বৃহত্তর জীবনে প্রবেশের সপ্ন দেখে। কিন্তু ফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়ার কারণে তাদের সে আশা মায়ময় মরিচীকায় পরিণত হয়। এটা দেশ ও জাতির জন্য যে ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় তা উপলব্ধি করা প্রয়ােজন। 

(vi) সেশন জট : পরীক্ষায় ফল প্রকাশের বিলম্ব শিক্ষাঙ্গনে সেশন জটের অন্যতম কারণ। এতকাল মনে করা হতাে, শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র আন্দোলন এবং ছাত্র রাজনীতির কারণে সেশন জটের সৃষ্টি হয়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, একশ্রেণীর শিক্ষক এ সেশন জটের জন্য দায়ী । শিক্ষকদের রাজনৈতিক দলাদলী, পাঠদানে অমনােযােগিতা, সময়মত কোর্স শেষ না করা, শিক্ষকদের অন্যান্য কর্তব্য পালনে অবহেলা, ব্যক্তিগত কন্সালটেন্সিতে সময় দেওয়া, ছুটি নিয়ে বিদেশে গিয়ে নির্ধারিত সময়ে দেশে না ফেরা এবং যথাসময়ে পরীক্ষার নম্বরপত্র জন্ম না দেওয়ার জন্য সেশনজটের সৃষ্টি হয়। 

শিক্ষাঙ্গনের সংকট ও সমাধানের উপায় : শিক্ষাঙ্গনে সংকট একটি অতি পরিচিত ঘটনা। এর কারণে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীদের জীবন পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। এর হাত থেকে শিক্ষাঙ্গনকে মুক্ত করতে হলে নিম্ন লিখিত বিষয়গুলাে গুরুত্বের সাথে বাস্তবায়ন করা প্রয়ােজন। 

ক.  শিক্ষাঙ্গন থেকে নকল প্রবণতা কমাতে হলে পাবলিক পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমানাে এবং নতুন ধারায় পরীক্ষা পদ্ধতি চালু, বিদ্যমান শিক্ষাবাের্ডগুলাের ক্ষমতা কমিয়ে জবাবদিহিমূলক কার্যক্রম ও তত্ত্বাবধান করার জন্য বিভাগীয় পরিদর্শনের ব্যবস্থা গড়ে তােলা। নকলের বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। 

খ.  শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে হলে সন্ত্রাসের কারণগুলাে চিহ্নিত এবং তা কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। 

গ.  ছাত্র রাজনীতির হাত থেকে শিক্ষাঙ্গনকে মুক্ত রাখতে হবে। প্রয়ােজনে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘােষণার মাধ্যমে শিক্ষার  অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখতে হবে।  

ঘ.  শিক্ষক নিয়ােগের সময় যথার্থ পরীক্ষার মাধ্যমে অভিজ্ঞ  শিক্ষক  নিয়ােগ করে শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। 

ঙ.  নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা গ্রহণ এবং ফলাফল ঘােষণা করতে হবে। 

চ.  নির্দিষ্ট সময়ে ফলাফল ঘােষণা না করায় সেশন জটের সৃষ্টি হয়। এ সমস্যার সমাধানের জন্য প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।  

ছ.  শিক্ষাখাতে বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে এবং অধিক বেতনের মাধ্যমে ভাল শিক্ষক নিয়ােগের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। 

জ.  শিক্ষকদের যেন পাশাপাশি অন্য কোন আয়ের উৎসের চিন্তা করতে না হয় তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়ােজন। উপরােক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষাঙ্গনকে সংকটমুক্ত রাখা সম্ভব। 

উপসংহার : শিক্ষাঙ্গন সমাজ বিচ্ছিন্ন কোন দ্বীপ নয়। শিক্ষাঙ্গনকে যদি সংকট মুক্ত না রাখা যায় তাহলে শিক্ষাঙ্গনের কর্মকাণ্ড, আইনশৃঙ্খলা ভেঙ্গে পড়বে। একে সচল রাখার জন্য সকল সংকট দূর করে শিক্ষাঙ্গনকে শিক্ষার অনুকূল পরিবেশে গড়ে তুলতে হবে।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment