প্রধান কর্তব্য: নিয়মিত লেখাপড়া করা ছাত্রসমাজের প্রধান কাজ হলেও সমাজের দুর্নীতি দমন করা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। অন্যান্য কর্তব্য-এর পাশাপাশি মাতাপিতা ও শিক্ষকজনের প্রতি শ্রদ্ধা, নিজের স্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। আমাদের দেশে এ যাবতকালের যত দাবি, আন্দোলনে ছাত্র সমাজের অগ্রণী ভূমিকা বিদ্যমান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পেছনে ছাত্রদের অবদান অনস্বীকার্য। লেখাপড়ার সাথে সাথে অন্য কোনাে কাজ করাকে লজ্জাকর মনে করলে চলবে না।
জাতীয় জীবনে দুর্নীতির প্রভাব: স্বাধীনােত্তর বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রভাব বিশেষভাবে লক্ষণীয়। দুর্নীতির প্রভাবে জাতি হিসেবে আমাদের অবনতি ক্রমবর্ধমান হচ্ছে। সর্বোপরি দুর্নীতি দমনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা অতীবজরুরি । জাতীয় জীবনের সর্বত্র দুর্নীতি প্রভাব জালের মতাে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের প্রশাসনিক, ব্যাংক, রাজনৈতিক, শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি ইত্যাদি জায়গাগুলােতে দুর্নীতি এখন স্বাভাবিক ব্যাপার। দুর্নীতির কারণে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দরিদ্র শ্রেণির মানুষেরা।
দুর্নীতি দমনে ছাত্রসমাজের ভূমিকা: দুর্নীতির করাল গ্রাসের হাত থেকে সমাজকে মুক্ত করতে ছাত্রসমাজের ভূমিকা অতিজরুরি। ছাত্রদের সমাজের প্রতিটা ক্ষেত্রে দুর্নীতি উৎপাটন করতে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে। ছাত্ররা কীভাবে দুর্নীতি দমনে অবদান রাখতে পারে তা আলোচনা করা হলাে:
১. সচেতনতা বৃদ্ধি: ছাত্রসমাজের অন্যতম কাজ হচ্ছে সমাজের মানুষকে দুর্নীতি সম্পর্কে সচেতন করবে। দুর্নীতির কুফল সম্পর্কে বিভিন্ন সেমিনার, সভা, লিফলেট ইত্যাদির মাধ্যমে প্রচার করলে দুর্নীতি অনেকাংশে লােপ পাবে। টিভি রেডিও পত্রিকাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রচার চালাতে হবে একযােগে।
২. আন্দোলন গড়ে তােলা: দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশের মানুষের জোটবদ্ধ করে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিভিন্ন র্যালি, মিছিল, আলােচনার মাধ্যমে দুর্নীতির বিপক্ষে মতামত গড়ে তুলতে হবে। ফলে দুর্নীতির প্রভাবমুক্ত হওয়া যাবে।
৩. নাটক, মঞ্ অভিনয়ের মাধ্যমে: দুর্নীতি দমনে মানুষকে সচেতন করতে নাটক, আবৃত্তি, মঞ্ হচ্ছে শক্তিশালী হাতিয়ার। এর মাধ্যমে দেশের প্রধানকে দুর্নীতি সম্পর্কে জানান দিতে হবে।
৪. রাজনৈতিক ক্ষমতার সদ্ব্যবহার: ছাত্রসমাজ দুর্নীতি রােধের অন্যতম উপায় হলাে রাজনৈতিক ক্ষমতা। সতভাবে রাজনীতি করে দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত ক্ষেত্রগুলােকে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে।
৫. চরিত্র গঠনে: ছাত্রসমাজ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে সৎ চরিত্র গঠনের উদ্বুদ্ধ করতে পারে। ফলে মানুষ সুন্দর জীবন গঠন করে দুর্নীতি করার পথ থেকে দূরে সরে যাবে।
দুর্নীতি দমনে ছাত্রসমাজকে উদ্বুদ্ধকরণ: দুর্নীতি দমনে ছাত্রদেরকে উদ্বুদ্ধ করতে শিক্ষক ও পরিবারের ভূমিকা অগ্রগণ্য। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা ছাত্রদের দুর্নীতির দমন সম্পর্কে সচেতন করবে। ছাত্রদের বিবেকবান হওয়ার জন্যে সুশিক্ষা দিতে হবে। পরিবারের গুরুজনরা সন্তানকে সৎ ও মহভাবে গড়ে তুলতে পারলে দুর্নীতি দমন অনেকাংশে কমে যাবে।
উপসংহার: দুর্নীতি দমন করার পাশাপাশি দেশের নিরক্ষরতা দূরীকরণ, যৌতুক প্রথা দূরীকরণ, নকলমুক্ত পরীক্ষার জন্যে সচেষ্ট থাকতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুর্নীতির সম্পর্কে ছাত্রদের সম্পূর্ণ সচেতন হতে হবে। যারা ছাত্র রাজনীতি করে তাদের ভূমিকা আরাে বেশি।
Post a Comment