SkyIsTheLimit
Bookmark

বয়স্ক ভাতা রচনা

বয়স্ক ভাতার গুরুত্ব
বা অক্ষমতার ভাতা
বা বয়স্ক ভাতার সুবিধা-অসুবিধা

ভূমিকা : মানব জীবনকে সাধারণত তিন ভাগে বিভক্ত করা হয়ে থাকে। যেমন শিশুকাল, যৌবনকাল ও বৃদ্ধকাল। শিশুকালে মানুষ যেমন অসহায় ও পরনির্ভর থাকে, যৌবনকাল পেরিয়ে সে আবার ধীরে ধীরে পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে থাকে। এ সময়ে যাদের কোন সহায়সম্পদ থাকে না বা ভরণপােষণ এবং দেখা-শােনার জন্য. কেউ থাকে না, তাদের প্রতিমুহূর্তের জীবন হয় অত্যন্ত দুর্ভোগের। এ অবস্থায় রাষ্ট্রের যে-কোন সহযােগিতা তার জীবনকে শান্তিময় করে তুলতে পারে। এদিক থেকে বয়স্ক ভাতার গুরুত্ব অপরিসীম।

বয়স্ক ভাতার প্রয়ােজনীয়তা : পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নানা ধরনের ভাতার প্রচলন রয়েছে। বিশেষ করে ইউরােপের দেশগুলােতেই এর প্রচলন বেশি। এসব ভাতার মধ্যে রয়েছে বেকার ভাতা, শিক্ষা ভাতা, বয়স্ক ভাতা ইত্যাদি। আমাদের দেশেও শিক্ষা ভাতার নামে বৃত্তির প্রচলন আছে। শিক্ষাকে উৎসাহিত করার জন্যে বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রেও ভাতার প্রচলন আছে। মােট কথা, জাতির উন্নয়ন ও উৎসাহের জন্য বয়স্ক ভাতার প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে।

বয়স্ক ভাতা প্রবর্তন : বৃদ্ধ বয়স মানুষের সবচেয়ে অসহায়ের কাল। অনেক মানুষ এ সময়ে মানবেতর জীবনযাপন করে। বিশেষ করে যাদের কোন উপযুক্ত জীবনের বা উপার্জনের ব্যবস্থা নেই, তাদের দুর্ভোগের কোন সীমা পরিসীমাও নেই। এসব মানবিক দিক চিন্তা করেই বর্তমান সরকার ১৯৯৭ সাল থেকে আমাদের দেশে বয়স্ক ভাতা প্রবর্তন করেছেন। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৯৯৭-৯৮ অর্থ বছরের বাজেটে সরকার ৫০ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ রাখেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালের ৩১মে টুঙ্গিপাড়া থানায় প্রায় ৪৫০ জন বয়স্ক লােককে এ ভাতা প্রদান করে এ কর্মসূচির শুভ সূচনা করেন।

বয়স্ক ভাতার নিয়ম ও পরিমাণ : দেশের অসহায় বৃদ্ধ লােকদের বয়স্ক ভাতা দেওয়া হয়ে থাকে। সমগ্র দেশের প্রতিটি ওয়ার্ড থেকে দুজন তিনজন করে অসহায় বৃদ্ধকে নির্বাচন করা হয়েছে এ ভাতার জন্য। প্রতি মাসে মাথা পিছু ভাতার পরিমাণ ধরা হয়েছে ১০০ টাকা করে। বর্তমানে এ কর্মসূচির অধীনে প্রতিটি ওয়ার্ডের ১০ জন বয়স্ক ব্যক্তিকে প্রতিমাসে১০০ টাকা হিসেবে ভাতা প্রদান করা হবে যার মধ্যে ৫ জন অবশ্যই মহিলা থাকবেন। যদিও প্রয়ােজনের তুলনায় এ ভাতার পরিমাণ অত্যন্ত কম, তবু 'নাই মামার চেয়ে কানা মামাই ভালাে হিসেবে এর গুরুত্ব একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

বয়স্ক ভাতার সুবিধা : বয়স্ক ভাতার পরিমাণ অত্যন্ত কম হলেও এ ভাতার প্রচলন যখন ছিল না, তখন এ দেশের অসহায় বৃদ্ধ লােকদের জীবন কিন্তু থেমে থাকেনি। কোন-না-কোনভাবে চলতে হয়েছে তাদের। তাই বয়সক ভাতাকে ধরে নিতে হবে এ দেশের অসহায়, দরিদ্র বয়স্ক মানুষের একটি বাড়তি উপার্জন হিসেবে। প্রতি মাসে ১০০ টাকা করে না দিয়ে এক বছর পর এক সঙ্গে ১২০০ টাকা গ্রহণ করা হলে তা দিয়ে ছােটখাট কোন ব্যবসা করা যায়। ফলে এ ব্যবস্থা থেকে কিছুটা আয়ও হতে পারে। এভাবে দু-তিন বছরের ভাতার টাকা সঞ্চয় করে মােটামুটিভাবে চলার ব্যবস্থা করা যায়।

বয়স্ক ভাতার গুরুত্ব : কেউ কেউ মনে করতে পারে, ১০০ টাকা ভাতা পেয়ে একজন লােকের কতটুকুই বা উপকার হবে। পাশাপাশি এ কথাও ঠিক, ১০০ টাকা ভাতা যখন ছিল না তখন তাকে চলতে হয়েছে। কাজেই এর পেছনে সঞ্চয়ের মনােবৃত্তি থাকতে হবে। মনে করতে হবে এটা তার অতিরিক্ত উপার্জন। তিলে তিলে যেমন তাল হয়, দুতিন বছরের ভাতা সঞ্চয় করে তেমনি চলার মত ব্যবস্থা করা যায়। এভাবে বিবেচনা করলে, যত অল্পই হােক না কেন বয়স্ক ভাতার গুরুত্ব অপরিসীম‌।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, বয়স্ক ভাতা একটি মানবিক পরিকল্পনা। আজ এর পরিমাণ কম হলেও ভবিষ্যতে বৃদ্ধি পেতে পারে। জাতীয় উৎপাদন, রাজস্ব আয় ও প্রবৃদ্ধি বাড়ার সাথে সাথে এ ভাতার পরিমাণ ও পরিধি সম্প্রসারণ করা হবে। আমার কথা হচ্ছে, সরকার ইতােমধ্যে দেশের ৪৬১টি থানার ৪৪৭৯টি ইউনিয়নে প্রায় চার লক্ষ তিন হাজার একশত দশজন বয়স্ক একটি তালিকা প্রণয়ন করেছেন যাদের এ কর্মসূচির আওতায় আনা হবে। যদি পরিকল্পনাটির যথাযথ বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকে, তাহলে জাতি হয়ত একদিন এর বড় সুফল ভােগ করতে পারবে, এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
1 comment

1 comment

  • মোঃ সাব্বির আলী
    মোঃ সাব্বির আলী
    18 January, 2023
    This comment has been removed by a blog administrator.