SkyIsTheLimit
Bookmark

নদীতীরে সূর্যাস্ত রচনা

অস্তগামী সূর্য
বা নদীতীরে সূর্যাস্ত ও বাংলাদেশ
বা সৌন্দর্যের সমাহার

ভূমিকা : এ পৃথিবীর স্থানে স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে সৌন্দর্যের কত বিচিত্র সমাহার। আকাশে বাতাসে যেদিকে দু'চোখ যায় শুধু অনন্ত সৌন্দর্যের অভিব্যক্তি। আর এ সৌন্দর্যরাশির মধ্যে অনিন্দ্য মাধুরিমায় ভরপুর হচ্ছে নদীর সূর্যাস্ত। আমার অনেক সাধ নদীতীরের সূর্যস্ত দেখার। সে সাধ পূরণে আজ সুযােগ এসেছে আমার জীবনে। আমার সামনে উন্মুক্ত বিশাল নদীবক্ষ, বিচিত্র তার রূপ। ঢেউ আর ঢেউ উত্তাল তরঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। নীল জলরাশির গভীর অতলান্ত দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই। আর নদীর উপরে সূর্য ডুবছে। সারাদিনের পরিশ্রমের ক্লান্ত সূর্য যেন একটু বিশ্রাম করার জন্য নদীর বিশাল বুকে তার স্থান নেবার চেষ্টা করছে। রক্তরাগে ঝলসিত তাই নদীর নীল পানি। ঢেউ খেলছে, নাচছে আর তার মধ্যে সূর্যের শেষ পাতা বিচ্ছুরিত হচ্ছে, উপরের দিকে তাকিয়ে অভূতপূর্ব সৌন্দর্যের মধ্যে নিজেকে ভুলে যাই. হারিয়ে যায় আমার মন।

অনুভূতির প্রকাশ : আমার এ অভিভূত মনােভাবের কত না বিচিত্র প্রকাশ ঘটে। মনে হয়, এ যে আমার জীবন, এর সার্থকতা কোথায়? সে কি কেবল লেখপড়া আর পরীক্ষায় পাস করা? না খেয়ে দেয়ে ঘুমানাে? মনে হয়, জীবন এতাে ক্ষুদ্র নয়। আমাদের জন্ম গ্রহণের একটা বৃহৎ ও মহৎ অর্থ রয়েছে, রয়েছে আমাদের জীবনের পূর্ণাঙ্গ প্রান্তির জন্য অনেক কিছু করার। নিজেকে বিচিত্রভাবে উপভােগ করে পৃথিবীকে জানতে হবে। শুধু তাই নয়, নিজেকেও উপলব্ধি করতে হবে। আমার প্রকাশ আমার চেতানার মধ্যে know theyself; আর এজন্যই বুঝি সূর্যাস্তের শােভা আমাদের আনন্দ দেয়, মুগ্ধ করে। আর এ সুযােগ পাওয়ার রা করে নেওয়ার মধ্যেই তাে জীবনের সার্থকতা: তাই আজ নদীর বেলাভূমির উপর দাড়িয়ে অস্তগামী সূর্যের বিচিত্র শােভা দেখে নয়ন সার্থক; আমার প্রাণ অভিভূত, আমি ধন্য। আমার জীবন কতটুকু। কতটুকু তার পরিধি। মনে হয়, কত না বিরাট, বিশাল। কিন্তু আসলে সত্যি কি তাই? মনে মনে তাই ভাবি কূপের ব্যাঙের কাছে নদীর পরিচয় অর্থহীন। তাই বৃহতের কাছে যখন আসি তখন নিজের ক্ষুদ্রত্ব উপলদ্ধি করতে পারি, কূপমণ্ডুকতা ঘুচে যায়। আমার চেতনা উদ্দীপ্ত হয়ে ওঠে। মহৎ কিছু করার প্রেরণা পাই? নিজেকেও বড় করে তুলতে প্রতিজ্ঞা করি। আর আমার গর্ব, আমার অহংকার ধূলায় লুটিয়ে পড়ে। মনে হয় এ উত্তাল তরজ্গাসংকুল নদী আর ওপরে অনন্ত বিশাল সীমাহীন আসমান কি নিথর মৌন নদীর প্রতীক। সৃষ্টিকর্তা কত গৃঢ় রহস্যই না প্রকাশ করছে। হয়তাে আমি তা দেখছে পাচ্ছি না। বুঝতে পাচ্ছি না শুধু বিস্ময়ে দেখছি সূর্য ডুবছে, তার কিরণ ছড়িয়ে পড়ছে নদীর নীল পানিতে, সেগুলাে বিচ্ছুরিত হচ্ছে, খেলছে, নাচছে, ছুটে পালাচ্ছে যেন চঞ্চলা কোন হরিণী । আমার এতদিনের সাধ আজ পূর্ণ হলাে। আমার মনে অনেক ভাব উচ্ছসিত হয়ে উঠছে। অনির্বচনীয় সৌন্দর্যের তাে বর্ণনা হয় না, সে যে অনুভবের। প্রাণের মধ্যে তার গুপ্ত আসন, যার বহিঃপ্রকাশ আমার মুগ্ধ চোখের অগাধ বিস্ময়ে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেন, “যে নদীর তীরের সূর্যাস্তের শােভা দেখেনি। আজ মর্মে মর্মে এ কথার সত্যতা উপলদ্ধি করছি। আমি আজ বলতে পারি, যে নদীর তীরের সূর্যাস্তের শােভা দেখেনি, সে জানে না, সে কি অসীম সৌন্দর্যরাশির কি মধুর শান্ত প্রকাশ। সে বুঝতে পারবে না, এর মধ্যে কত বিস্ময় লুকিয়ে আছে।

উপসংহার : নদীপারের সূর্যাস্তের শাভা আমার জীবনের অবক্ষয় সম্পদ হয়ে থাকবে। এই যে বালুকাময় বেলাভূমির ওপর আমি দাঁড়িয়ে আছি, উচ্ছসিত ঢেউ নাগিনী কন্যার মত ফণা বিস্তার করে পায়ের কাছে ছােবল মারছে, গর্জন করে চলে যাচ্ছে কোন জাহাজ, আর অস্তগামী সূর্য সৌন্দর্যের সে কি প্রকাশ ভাষায় যার রূপ দেওয়া যায় না, তুলিতে যা আঁকা যায় না। শুধু অনুভবের জিনিস। আনন্দের এ উচ্ছসিত প্রকাশ, সৌন্দর্যের এ নগ্ন প্রকাশ আমার সমগ্র চেতনাকে বিভাের করে তুলেছে।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment