SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা বিজ্ঞানের বিভীষিকা

বিজ্ঞানের অভিশাপ 
বা পৃথিবী ধ্বংসে বিজ্ঞান
ভূমিকা : বিজ্ঞানের নব নব কৌশল পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে সাথে সমরনীতির কৌশলও অভাবনীয়রূপে পরিবর্তিত হয়েছে। প্রাচীনকালে যুদ্ধনীতির মধ্যে কিছুটা মুনষ্যত্বের পরিচয় পাওয়া যেত। অশ্বারােহী বা রথারূঢ় যােদ্ধর সাথে, পদাতিকের, শাস্ত্রপাণির সাথে নিরত্রের, সৈনিকের সাথে গ্রাম্যলােকের যুদ্ধ হতে পারত না। কিন্তু বর্তমানকালের যুদ্ধের মধ্যে সে আদর্শের বালাই নেই। যে কোন উপায়েই হউক পানির নিচে লুকিয়ে, আকাশে উড়ে অসহায় মানুষের উপর পৈশাচিক অত্যাচার, দল বেঁধে কসাই বৃত্তি এরই নাম আধুনিক যুদ্ধ এ কারণে মানুষের মনে প্রশ্ন জেগেছে বিজ্ঞান আশীর্বাদ না বিভীষিকা।
আধুনিক যুদ্ধে বিজ্ঞান : আধুনিক যুদ্ধ যে এতটা ভয়ঙ্কর, তার মূলে রয়েছে বিজ্ঞান। আধুনিক বিজ্ঞানে আবিষ্কৃত মারণাস্ত্রসমূহ মানুষের সভ্যতাকে ধ্বংসমুখী করে তুলেছে। যুদ্ধক্ষেত্রে ক্রুজার, সাবমেরিন, বিসােকারণ, বিষবাম্প প্রভৃতির ধ্বংসলীলা মানুষের মনে গভীর হতাশার সৃষ্টি করেছে। আণবিক বোমা, হাইড্রোজেন বােমা, রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র প্রভৃতিকে নিয়ে দেশে দেশে প্রতিযােগিতা জগতের শান্তিকামী মানুষকে শঙ্কিত ও আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছে। পৃথিবীর নিরাপত্তা আজ বিপন্ন মনে হয়। অদূর ভবিষ্যতে যুদ্ধ যদি এসব অস্ত্র ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়, তবে পৃথিবীর ধ্বংস অনিবার্য। আধুনিক বিজ্ঞানের এ ধ্বংসলীলা দেখে হয়ত বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইন বলেছেন, “পৃথিবী এক অনিবার্য ধ্বংসের মুখে এগিয়ে চলেছে। এসব আণবিক অস্ত্রের ভয়াবহতার কথা চিন্তা করলে এ কথাকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
আধুনিক অস্ত্র প্রতিযােগিতা : প্রথম মহাযুদ্ধে ধ্বংসাত্মক অস্ত্রের সংখ্যা ছিল অনেক কম। এ বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে বৃটিশ কর্তৃক ট্যাংক আবিষ্কৃত হওয়ায় যুদ্ধের গতি বদলে যায় এবং জার্মানির পরাজয় সূচিত হয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের শেষের দিকে দানবীয় মহাশক্তি নিয়ে রণক্ষেত্রে অবতীর্ণ হল আণবিক বােমা। এটির মাত্র দুটি প্রলয়জ্কর বিস্ফোরণে অসংখ্য লােকজনসহ জাপানের দুটি সমৃদ্ধ নগরী বিলীন হয়ে যায়। এর পর অধিকতর মারাত্মক অস্ত্র, বােমারু বিমানকে প্রতিহত করার জন্য আবিষ্কৃত হল আধুনিক বিমান বিধ্বংসী কামান, বিষবাষ্পকে প্রতিরােধ করার জন্য সৃষ্টি হল গ্যাস মুখােশের, মাইনের মােকাবিলায় আসল মাইন ফাটানাে অস্ত্র, গােলাবারুদের মােকাবিলায় আসল কংক্রিটের পাযাণ গাঁথুনি, ট্যাজেকর মােকাবিলায় ট্যাঙ্ক ধ্বংসী অস্ত্র। সাবমেরিন ও টর্পেডাের আক্রমণকে প্রতিহত করার জন্য বৈজ্ঞানিকগণ দিনের পর দিন গবেষণা চালাতে লাগলেন। অবশেষে আবিষ্কৃত হল হাইড্রোজেন বােমা, ক্ষেপণাস্ত্র প্রভৃতি। এসব আণবিক অস্র আবিষ্কারের হিড়িক দেখে পৃথিবীর মানুষ আজ যুপকাষ্ঠবদ্ধ মৃত্যুমুখী বলির পাঁঠার মত ভয়ে কাঁপছে। সত্যই কি বিজ্ঞান পৃথিবী ধ্বংস করতে চলেছে ? 
মানুষের সীমাহীন লালসা : বর্তমানে রাষ্ট্রধর্ম ও সমাজ ব্যবহারের মূলে দেখা যায় সীমাহীন লোভ, আর পরজাতিকে নানাভাবে শাসন ও পােষণ করার মারাত্মক প্রচেষ্টা। একদিকে পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদ, অন্যদিকে রাশিয়ার অর্ধ-সাম্যবাদ উভয়ই গ্রাস করতে চায় সমগ্র পৃথিবীকে। তাদের রক্তমুখী স্বার্থের কবলে পড়ে গােটা পৃথিবী আজ আর্ত ও নিপীড়িত। এ অশুভ বুদ্ধির প্রভাবে আদর্শ ভ্রষ্ট হয়ে আধুনিক বিজ্ঞান বিপথগামী হয়ে চলেছে; তারমহান আদর্শ ও সব বিবেক বুদ্ধি বিক্রয় করে মানবতার ক্ষেত্রে দেউলিয়া সেজেছেন।
সর্বনাশের জন্য দায়ী কে : বিজ্ঞান মানুষকে অফুরন্ত শক্তি দিয়েছে। যে প্রকৃতির হাতে মানুষ ছিল ব্রীড়ানক মাত্র, সে প্রকৃতির দুর্জয় শক্তিকে জয় করার শক্তি যােগাচ্ছে বিজ্ঞান। প্রকৃতির সাথে সংগ্রামশীল মানুষের জীবনে যে বিজ্ঞান শক্তি ও শান্তির বাণী বহন করে এনেছিল, সে বিজ্ঞানই কি মানুষকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে? না, এর জন্য সম্পূর্ণ দায়ী স্বয়ং মানুষ, বিজ্ঞান। নয়। মানুষ বিজ্ঞান শক্তির একমাত্র পরিচালক; তার বিজ্ঞান-চর্চা ও গবেষণার ফলে যদি অমঙ্গল ঘটে, বিজ্ঞান শক্তি দ্বারা মানুষ যদি মানুষের ধ্বংস সাধন করে, তার জন্য দায়ী মানুষ, বিজ্ঞান নয়। বিজ্ঞানের যে সাধারণ সত্য,সকল মানুষের তাতে অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় নি। সামাজিক জীবনে তারা বিজ্ঞানকে আপন স্বার্থসিদ্ধির প্রধান অবলম্বন হিসেবে ব্যবহার করছে। 
উপসংহার : বিজ্ঞানের সার্থক প্রয়ােগের উপর নির্ভর করে বিশ্বশান্তি। জগতের ক্ষমতাশীল ব্যক্তিগণ বিজ্ঞানের অপ প্রয়ােগের দ্বারা বিশ্বশান্তির আকাঙ্কা বিনষ্ট করে দিচ্ছে। আণবিক শক্তির পর এবারে পারমাণবিক শক্তি বৃদ্ধির প্রতিযােগিতা চলেছে, কারণ বিজ্ঞানের প্রতি মানুষের ঘৃণা ও ভীতির সঞ্চার হয়েছে। বৈজ্ঞানিকগণ যদি ঐক্যবদ্ধ ও দৃঢ়ভাবে বিজ্ঞানকে শুধু কল্যাণের কাজে নিয়ােজিত করতে পারেন, তবেই জগতের শান্তি ও নিরাপত্তার পথ প্রশস্ত হবে। স্বার্থবাদী দুরাত্মাদেরকে যুদ্ধের প্রচেষ্টায় সহযােগিতা না করে যদি তারা এর প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেন, তবে শান্তি প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে এবং পৃথিবীর মানুষের ভীতি ও ত্রাসের অবসান ঘটবে। এজন্য বিশ্বের সব দেশের শান্তিকামী মানুষের মধ্যে আন্দোলন গড়ে তােলা দরকার।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment