SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা সর্বক্ষেত্রে মাতৃভাষা ব্যবহারের প্রয়ােজনীয়তা

ভূমিকা : ভাষা আন্দোলনের ৬৬ বছর পূর্ণ হয়েছে। সুদীর্ঘ ছয় দশক পেরিয়ে গেলেও আজো উপেক্ষিত বাংলা ভাষা। সর্বক্ষেত্রে মাতৃভাষা চালুর স্বপ্ন এখনাে স্বপ্নই রয়ে গেছে। বিদেশি ভাষার আগ্রাসন, ইংরেজি-বাংলা মিশিয়ে জগাখিচুড়ি শব্দ প্রয়ােগ বাংলা ভাষাকে ঠেলে দিচ্ছে এক অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে। অথচ মােদের গরব মােদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা স্লোগানে অনুপ্রাণিত হয়ে মায়ের ভাষায় কথা বলতে, মায়ের ভাষার মর্যাদা রাখতে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে রাজপথ রাঙিয়েছিল বাংলা মায়ের দামাল সন্তান সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিক, সালাউদ্দিনরা। তাদের  আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলা ভাষা বিশ্বে স্বাধীন ভাষার মর্যাদা পেলেও আজো সর্বস্তরে বাংলার প্রচলন হয়নি। 
মানব জীবনে মাতৃভাষার গুরুত্ব : মাতৃভাষা হলাে মানুষের মায়ের ভাষা, প্রাণের ভাষা। তাই মানব জীবনের সর্বস্তরে মাতৃভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। বিভিন্ন দার্শনিক, মনীষী, কবি-লেখক-শিল্পী মাতৃভাষার গুরুত্বকে মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করেছেন। মাতৃভাষা হলাে মন, মনন ও চিন্তনের ভাষা। মানুষের আনন্দ, বেদনা, সুখ-দুঃখ মাতৃভাষার মাধ্যমেই যথার্থভাবে প্রকাশিত হয়। ব্যক্তি জীবনের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা, সমাজ জীবনের শিক্ষা-সংগ্রাম-আন্দোলন সংস্কার, জাতীয় জীবনের ঐক্য, শৃঙ্খলা, পরিকল্পনা ও কর্মতৎপরতা তথা নাগরিক জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে মাতৃভাষা পালন করে অনন্যসাধারণ ভূমিকা। 
মাতৃভাষার পটভূমি : বাঙালির জীবযাত্রা, সংস্কৃতি ও সভ্যতার রূপসন্ধানের প্রচেষ্ঠায় বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। সেদিন বীর বলি হাজারাে বছরের লালিত সৃষ্টিশীলতার তুঙ্গীয় নিদর্শন ও বহুমাত্রিক প্রতিভার সুদীপ্ত উপস্থিতিতে সংগ্রামের মাধ্যমে ছিনিয়ে আনে আমাদের মায়ের মুখের ভাষায় কথা বলার অধিকার। বপন করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বীজ। পৃথিবীর প্রাচীন ভাষাগুলোর মধ্যে বাংলা অন্যতম। বিভিন্ন চরাই-উত্রাই পেরিয়ে এ ভাষা ক্রমশ বিকশিত হয়েছে। এ ভাষায় রচিত হয়েছে মূল্যবান সাহিত্য কর্ম। কিন্তু নানা সময়ে বাংলা ভাষার উপর বহুবিধ আক্রমণ ও আঘাত এসেছে, বাংলা ভাষার বিকাশকে রুদ্ধ করার অপচেষ্টা ও ষড়যন্ত্র চলেছে। ব্রিটিশ আমলে এ ভাষা পেয়েছে চরম অবহেলা। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৫২ সালে পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠীর হাতেও ভাষার জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে বাংলার দামাল তরুণদের। তরুণদের প্রধান দাবী ছিল জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার অবাধ ব্যবহার । তৎকালীন দুই পাকিস্তানের বৃহত্তর জনগােষ্ঠীর ভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী বাংলা ভাষার বিকাশকে রুদ্ধ করতে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র করেছে। এর ফলেই শুরু হয়। ভাষা আন্দোলন এবং মহান একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষার জন্য ছাত্র জনতার আত্মদানের বিরল দৃষ্টান্ত। 
সর্বস্তরে মাতৃভাষা ব্যবহারের প্রয়ােজনীয়তা : পৃথিবীতে বাঙালিরাই সেই গৌরবময় জাতি, যারা মাতৃভাষার মর্যাদার জন্য জীবন দিয়েছে। বাংলা ভাষার মর্যাদা আজ বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত। কারণ ১৯৯৯ সনের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থা ইউনেস্কো আমাদের ভাষা শহীদ দিবসকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘােষণা করেছে এবং বাংলা ভাষার সম্মানে ২০০০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী মহান একুশে ফেব্রুয়ারিতে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা বাংলা হলেও বাংলা ভাষা আজও জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে ব্যবহৃত হচ্ছে না। যদিও বাংলাদেশ একটি ভাষাভিত্তিক রাষ্ট্র। বাংলা ভাষা দেশের সমগ্র জাতিগােষ্ঠীকে একই বন্ধনে বেঁধে রেখেছে । বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিকদের সৃষ্টি সম্ভারে বাংলা ভাষা আর বাংলা সাহিত্য আজ ঐশ্বর্যমন্ডিত। এ ভাষা জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রয়ােজন মেটাতে সক্ষম। ধনিতাত্ত্বিক দিক থেকেও এ ভাষার কোনাে দৈন্য নেই। এ জন্যই বাংলা ভাষা জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে ব্যবহারযােগ্য এবং প্রয়ােগে তেমন কোন সমস্যা নেই। 
সর্বত্র ইংরেজির দাপট : টু-লেট, রুমমেট আবশ্যক, ফ্যাশন লেডিস টেইলার্স, পলাশ ফার্মেসি, ড্রিম এন্টারপ্রাইজ, এডমিশন গােয়িং অন, রাজধানী হেয়ার কাটিং, কুইন্স ফার্মা পথের দুপাশে এ রকম সাইনবাের্ড প্রতিদিনই আমাদের চোখে পড়ে। পুরােপুরি বিদেশি শব্দ বা বাংলা-বিদেশি শব্দের মিশেলে রাজধানীসহ সারাদেশে অসংখ্য দোকানপাট ও বিপণিবিতানের নাম। চোখ এগুলাে সয়ে নিয়েছে। সাইনবাের্ড, বিলবাের্ডে এখন ইংরেজিতে লেখার হিড়িক। অনেকে আবার ইংরেজি শব্দ ইংরেজি হরফে না লিখে বাংলায় লেখেন। বাংলা বানানে দিব্যি চালিয়ে দিচ্ছেন ইংরেজি শব্দমালা। কোথাও কোথাও বাংলা পুরােপুরিই উধাও। জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের (নিমকো) পরিচালিত সর্বশেষ নমুনা জরিপে দেখা গেছে, রাজধানীর কাঁটাবন থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকার ৫০০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ৫১ টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামফলক লেখা হয়েছে। বাংলা হরফে। ইংরেজিতে লেখা নামফলকের সংখ্যা ২৮০ টি। বাংলা ও টাইপের নামফলক রয়েছে ১৬৯টির। ইংরেজি মিশিয়ে খিচুড়ি টাইপের নামফলক ভাষাপ্রেমিকদের দৃষ্টিতে এ এক ধরনের উদ্ভট মানসিকতা। এক সময় একুশে ফেব্রুয়ারির আগে আগে যেসব দোকানে বা প্রতিষ্ঠানের সাইনবাের্ডের ভুল বানান থাকত, তারা শঙ্কিত হয়ে পড়ত। কারণ একুশের প্রভাতফেরি থেকে ছেলেমেয়েরা ভুল বানানের সাইনবাের্ড ভেঙে ফেলতে পারে। তখন শঙ্কিত প্রতিষ্ঠান মালিক নিজ উদ্যোগে ভুল বাংলা বানান সংশােধন করতেন। সাইনবাের্ডও লেখা হতাে বাংলাতেই। 
অবহেলিত প্রমিত বাংলা : মহান ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে আবেগ উচ্ছাসের ব্যাপক বহিঃপ্রকাশ ঘটলেও মানা হচ্ছে না বাংলা বানান নীতিমালা। অনুসরণ করা হচ্ছে না বাংলা একাডেমির প্রমিত বাংলা বিধিবিধান। পাঠ্যবই থেকে শুরু করে নাটক, উপন্যাস, কবিতা, শ্রেণিকক্ষ, সরকারি প্রজ্ঞাপন, বিজ্ঞপ্তির অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিয়মনীতির বালাই নেই। যত্রতত্র ব্যবহার হচ্ছে প্রশ্নবিদ্ধ ও নিম্নমানের অশুদ্ধ ভাষা। ইংরেজিসহ বিদেশি ভাষা ব্যবহারে সুনির্দিষ্ট বিধি থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা মানা হচ্ছে না। অন্যদিকে বাংলা একাডেমির বাংলা পরিভাষা সেলের কার্যক্রম আশার সঞ্চার করতে পারছে না। 
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপেক্ষিত বাংলা : আধুনিকতার নামে চলা বাণিজ্যনির্ভর শিক্ষার দাপটে শিক্ষাঙ্গন থেকে বিদায় নিচ্ছে বাংলা। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলাে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাংলা ভাষা চরমভাবে উপেক্ষিত। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বাংলা নাম। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের ৯৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭ টিতেই নেই বাংলা বিভাগ। অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার প্রধান মাধ্যম ইংরেজি। বাজার চাহিদার বিবেচনায় এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ, এমবিএ, কম্পিউটার বিজ্ঞান, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংসহ কয়েকটি বিষয় পড়ানাে হয়। ইংরেজির প্রয়ােজনীয়তা থাকলেও বাংলাকে এভাবে উপেক্ষা করা মাতৃভাষার প্রতি অশ্রদ্ধার শামিল।
আন্তরিকতা ও উদ্যোগের অভাব : বাংলাদেশে এখনাে উচ্চ শিক্ষার ভাষা, উচ্চ আদালতের ভাষা ইংরেজি। কিন্তু এটা হওয়ার কথা ছিলাে না। কথা ছিলাে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলন হবে। কিন্তু হয় নি। সর্বস্তরে বাংলা চালু হওয়ার পেছনে সরকারি উদ্যোগের অভাব এবং জনগণের অনীহাই মূল কারণ। সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রচলনের জন্য সরকারকে যেমন উদ্যোগ নিতে হবে তেমনি বেসরকারি পর্যায়েও উদ্যোগ নেয়া জরুরি। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের গণমাধ্যমকেও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। বাংলায় যথাযথ অনুবাদের জন্য মানসম্পন্ন শব্দাবলীর প্রয়ােজন। আর প্রয়ােজন দেশের প্রধান প্রধান পন্ডিত ও গ্রন্থাগার পেশাজীবীদের সমন্বয়ে ভাষার একটি ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত বিধান এবং এর প্রয়ােগ ও ব্যবহারে দেশের সর্বশ্রেণীর ও পেশার মানুষের আন্তরিকতা। শিক্ষা ক্ষেত্রে পান্ডিত্যপূর্ণ পরিভাষা ব্যবহার করলেও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে প্রশাসনিক পরিভাষা প্রয়ােজন সমাধিক। 
গ্রন্থাগার ও তথ্যকেন্দ্র সমূহের ভূমিকা : সর্বস্তরে বাংলার ব্যবহার নিশ্চিত করতে গ্রন্থাগার ও তথ্যকেন্দ্রসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। উচ্চশিক্ষা, চিকিৎসা বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিজ্ঞান, মানব বিজ্ঞান এবং আইন সংক্রান্ত উচ্চতর শিক্ষা গ্রন্থসমূহ ব্যাপকভাবে ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ না করার জন্য উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে এখনাে ইংরেজির প্রধান্য অক্ষুন্ন রয়েছে। ফলে শিক্ষা ক্ষেত্রে এবং আইন ও প্রশাসনিক বিধি বিধানের ক্ষেত্রে বাংলা প্রচলনের বিরাট অন্তরায় সৃষ্টি হয়েছে। এই ক্ষেত্রে গ্রন্থাগার সমূহ প্রকৌশল, চিকিৎসা ও আইনের গুরুত্বপূর্ণ পুস্তক সমূহ চিহ্নিত করে আধুনিক ও উন্নয়নশীল দেশগুলাের গ্রন্থাগারের ন্যায় পুস্তকসমূহ অনুবাদের ব্যবস্থা করতে পারে। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলাের গ্রন্থাগারে অনুবাদ বিভাগ রয়েছে। যা গুরুত্বপূর্ণ ও পাঠকপ্রিয় প্রকাশনা গুলাে অনুবাদ করে থাকে। সর্বস্তরে বাংলা প্রচলন শুরু করতে হলে গ্রন্থাগার সমূহের অনুবাদ সমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
অনুবাদ সহজীকরণ : অফিস আদালতে, উচ্চতর শিক্ষা ও বিশেষ পরীক্ষা ক্ষেত্রে বাংলা প্রচলনের সবচেয়ে বেশী প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ইংরেজি থেকে বাংলায় উত্তরণের মনস্তাত্বিক জটিলতা। আমাদের ঔপনিবেশিক আমলের চিন্তা-পরিপুস্ট মানসিকতা চিরকালই স্বদেশের শিক্ষা সংস্কৃতি ভাষা থেকে বিদেশের ভাষা সংস্কৃতিকে বড় করে দেখেছে। তাছাড়া শ্রেণি বৈষম্য টিকিয়ে রাখার জন্য সুবিধাবাদী শিক্ষিত শ্রেণি আজও ইংরেজি ভাষার পক্ষে দুর্বলতা পােষণ করছেন। এই ক্ষেত্রে গ্রন্থাগার সমূহ বিভিন্ন দিবসে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে মিলে সেমিনার ও পুস্তক প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করতে পারে। তাছাড়া শিক্ষক, আমলা ও বুদ্ধিজীবীদের জন্য বিশেষ গ্রন্থাগার সেবা প্রদান করতে পারে। সাথে সাথে জ্ঞানরাজ্য থেকে বাংলা বিভিন্ন বই সংগ্রহ করে পাঠক ও বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর মধ্যে বিতরণ করতে পারে। ফলে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার প্রয়ােগ সহজতর হবে। 
উপসংহার : বাংলা ভাষার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে মাতৃভাষার প্রতি বাংলাভাষাভাষীদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর। আমরা যদি হীনম্মন্যতামুক্ত হয়ে বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে গভীরভাবে মাতৃভাষা চর্চা করতে পারি এবং আমাদের রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে বাংলা ভাষার প্রচলন করতে পারি, তাহলে বাংলা ভাষা তার প্রাপ্য গৌরবের আসনে অধিষ্ঠিত হতে পারে, অন্যথায় নয়।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment