বা সার্স প্রতিরােধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
বা সার্স ও বর্তমান বিশ্ব
সূচনা : পৃথিবীতে রােগ বালায়ের শেষ নেই, মানবসভ্যতা যত এগিয়ে যাচ্ছে তার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে চলেছে নানা প্রকার রােগব্যাধি। কিছুদিন পূর্বেও পৃথিবীর বুকে আলােচিত ও আলােড়িত ছিল এইডস। কিন্তু আজ এ ভয়ঙ্কর এইডসকে পিছনে ফেলে সার্স রােগ বলয়ের খাতায় প্রথম স্থানে তার অবস্থান করে নিতে ভুল করে নি।
সার্স কি : সার্স এর Elaboration হচ্ছে Sarvere Acute Respiratory Syndorme সংক্ষেপে (SARS) সার্স রােগটিকে বিজ্ঞানীরা ‘রহস্যময় নিউমােনিয়া’ বলে অভিহিত করেছেন। জীবাণু বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এটি একটি ভাইরাস বাহিত রােগ। প্রথম দিকে এর কারণ হিসেবে একাধিক জীবাণুর কথা বলা হলেও ১৬ এপ্রিল ২০০৩ ইং তারিখে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) নিশ্চিত করেছেন যে, 'করও না ভাইরাস এজন্য দায়ী। হংকং এর একদল বিশেষজ্ঞগণ এ রােগের নাম। দিয়েছেন 'করােনা ভাইরাস নিউমােনিয়া বা সংক্ষেপে সিভিপি। সার্সের ইতিহাস : প্রায় ৩২০০ বৎসর আগে চীনে হাঁসকে গৃহপালিত প্রাণী হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। এ হাঁসের পাকস্থলীই হচ্ছে সার্সের জন্মস্থান, তবে এটি হাঁসকে কখনাে আক্রান্ত করে না। এ ভাইরাস আগে কখনও মহামারি আকারে দেখা যায়। নি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০০২ সালে নভেম্বর মাসের সার্স ভাইরাস চীনের ওয়াংডং প্রদেশ থেকে বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।
সার্স সম্বন্ধে শান্তিকামী মানুষের ধারণা : বিশ্বের অনেক দেশের শান্তিকামী মানুষ মনে করেন যে, এটি মানব সূষ্ট রােগ। বর্তমানে বিশ্বের প্রভৃত্ব করার জন্য এবং ইরাক যুদ্ধের অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার জন্য অথবা ইরাক যুদ্ধ নিয়ে যাতে করে কোন দেশ আলােচনা সমালােচনা করার সুযােগ না পায় সেজন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জীবাণু অস্ত্র অত্যন্ত সুকৌশলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে দিয়েছেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি যেন ভেঙ্গে পড়ে যাতে করে তাদের কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাততে হয়, সেজন্য তারা এ জঘন্যতম কাজটি করতে কুণ্ঠাবােধ করে নি। অবশ্য হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন, “রােগটি সম্ভবত জন্তু হতে মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছে। নেদারল্যান্ডের গবেষণা এজন্য বানরকে দায়ী করেছেন। কারণ, সার্সে আক্রান্ত মানুষের দেহে যে উপসর্গ দেখা যায়, আক্রান্ত জন্তুর মধ্যে সেরূপ উপসর্গ হয়।
আক্রান্ত এলাকা : চীন থেকে শুরু করে বিশ্বের প্রায় ৩০টি দেশে এ রােগ ছড়িয়ে পড়ে। এদের মধ্যে যে সকল দেশ বেশি আক্রান্ত হয়েছে সেগুলাে হলাে : চীন, হংকং, থাইল্যান্ড ইত্যাদি। ৬ মার্চ ২০০৩ ইং. পর্যন্ত এর মৃতের সংখ্যা দাড়িয়েছে ৪৬৩ জন।
সার্স রােগের লক্ষণসমূহ : 'করােনা ভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশের ২১০ দিনের মধ্যে নিম্নলিখিত লক্ষণসমূহ দেখা যায় : ১।রােগীর অস্বাভাবিক জ্বর হয়, পাশাপাশি দেখা দেয় শুকনাে কাশি। ২।মাথাব্যাথা ও শ্বাসকরষ্ট দেখা দেয়। ৩। অল্পতেই হাঁপিয়ে উঠে। ৪। গলা ব্যথা করে এবং শরীরে চাকা চাকা দাগ দেখা দেয়।৫।রােগ প্রতিরােধ ক্ষমতা পুরােপুরি ব্যর্থ হয়। এছাড়া কারও কারও ক্ষেত্রে বমি, ক্ষুধামন্দা ও ডাইরিয়া হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, যদি কারাে ৩৮ সেন্টিগ্রেডের বেশি জ্বর হয়, শ্বাসকষ্ট থাকে, এবং তার সাথে আক্রান্ত কারাে সংস্পর্শে থাকার ইতিহাস থাকলে তাকে সার্সে আক্রান্ত ধরে নেওয়া হয়।
কীভাবে ছড়ায় : এ রােগ বাতাসের মাধ্যমে খুব দ্রুত ছড়ায়। এ রােগের ভাইরাস নাক, চোখ, মুখ দিয়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশির মাধ্যমে রােগটি কণা আকারে বাতাসে ছড়িয়ে থাকে এবং দূষিত বস্তু হতেও এ রােগ ছড়াতে পারে। পরিবেশে এ জীবাণু ঘণ্টার পর ঘণ্টা এমনকি কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে। এসময় দূষিত বস্তুর । উপর বা বাতাসে ঘুরে বেড়ানাে জীবাণুটি শ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করলেই রােগটি সৃষ্টি হতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে যারা থাকে তাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি।
প্রতিরােধক ও প্রতিশেধক : বিশেষজ্ঞরা ঘােষণা দিয়েছেন অতি শীঘ্রই এর প্রতিশেধক, আবিষ্কার করা হবে। হােমিওপ্যাথিক অর্গাননের মতে, “সার্সের ক্ষেত্রে যে লক্ষণগুলাে পাওয়া যায় তা হােমিওপ্যাথিক একোনাইট ও ‘আর্সেনিক আ’ এ দুটি ঔষধের দ্বারা চিকিৎসা করা যায় এবং প্রতিশেধক হিসেবেও বেশি কার্যকরী। তবে এ রােগের তেমন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশেধক না থাকায় আরও বেশি সচেতন হতে হবে এবং এ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নিন্মলিখিত কাজগুলাে করতে হবে:
ক) মাস্ক ব্যবহার করতে হবে, চোখে কালাে চশমা এবং হাতে গ্লাবস ব্যবহার করতে হবে।
খ) রােগীর চলাচল সীমিত করতে হবে।
গ) আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিসপত্র ধরার পর সাবান না দিয়ে স্পিরিট দিয়ে হাত ধুতে হবে।
ঘ) রােগীকে যেখানে সেখানে থু থু ফেলতে দেওয়া যাবে না।
ঙ) আক্রান্ত এলাকা ভ্রমণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
চ) আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত গ্রহণ করা যাবে না।
এছাড়া এমন কিছু করা যাবে না যাতে রােগীর শ্বাসনালীর নিঃসরণ বাতাসে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যেমন- লেমুনাইজ করা, চেস্ট পিজিওথেরাপি করা, ব্রংকোস্পকপি, গ্যাস্টোসকপি ইত্যাদি।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, এ ভাইরাস আর কখনও মহামারী আকারে দেখা যায় নি। কিন্তু ২০০৩ সালের এপ্রিল থেকে মহামারী আকার ধারণ করে। সভ্যতার ইতিহাসে যতগুলাে মহামারী আছে তার মধ্যে এটিকে সবাই ভয়াবহ মনে করছে। ১৯১৮-২০ সালে স্প্যানিশ ইনফ্লুয়েঞ্জায় প্রায় ৪ কোটি লােক মারা যায়। এতে মৃত্যুর হার ছিল ২.৫%। জীবাণু বিজ্ঞানীরা মনে করছেন এটি হয়তাে স্প্যানিশ ইনফ্লুয়েঞ্জাকে ছাড়িয়ে যাবে। কারণ, এর মৃত্যুর হার দ্বিগুণ। তবে যথাযথ পদক্ষেপ এবং সাবধানতাই পারে এ ভয়াবহ মৃত্যুর হাত থেকে কোটি কোটি মানুষকে রক্ষা করতে।
Post a Comment