সূচনা : চাঁদনি রাত অপরিমেয় সৌন্দর্যের আধার। এ সৌন্দর্য, হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে হয়। আকাশের বুক থেকে জ্যোৎস্না ঝরে প্রকৃতির বুকে জাগিয়ে তােলে এক মােহময় রূপ-মাধুরী। সে মাধুরী নীরব রাতের কোল ভরে পুলকের সাথি হয়। তাকে উপলব্ধি করতে হয় নীরব রাতের নিথর স্তব্ধতায়। বসন্তের এক চাঁদনি রাত আমার সমস্ত চেতনালােকে যে পরম সৌন্দর্য-অনুভূতির কল্যাণধারা প্রবাহিত করেছিল তারই অনুভব তুলে ধরার প্রয়াস পাচ্ছি।
চাদনি রাতের আবির্ভাব : বসন্তের এক বিকেলে কর্মকোলাহলমুখর। লােকালয় থেকে মুক্ত হয়ে প্রকৃতির প্রাণমাধুর্য আস্বাদন করতে নদীর তীরে বসে আছি। মৃদুমন্দ বাতাস নদীর শান্ত জলের পরশ মেখে হৃদয়ে এক অনন্য পুলক জাগিয়ে তােলে। ঝাউবন থেকে ভেসে আসা কোকিলের কুহুতান মনের ভাবাবেগকে দোলা দিয়ে যায়। দেখি পৃথিবীর সমস্ত কর্মচঞ্চলতা থামিয়ে দিয়ে দিনমণি হারিয়ে যাচ্ছে দূর দিগন্তের অতলান্ত গভীরে। দিনমণির অন্তর্ধানে প্রকৃতির বুকে যে কালাে আঁধার নেমে আসার কথা ছিল তার বদলে আবির্ভূত হয় মায়াময় এক রুপালি আলাের অমূর্ত স্ফুরণ। মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে দেখি পূর্ব আকাশের বুক চিরে বসন্তের দ্বাদশী চাঁদ জ্যোৎস্নার অগ্রীম সুধা নিয়ে জেগে উঠছে, শুরু হয়ে যায় জ্যোৎস্নার অমিয় পুলক। চাদের রুপালি জ্যোৎস্নার কোমল আলাের পরশে পৃথিবী ধন্য হয়।
চাঁদনি রাতের প্রকৃতি : চাঁদনি রাতের প্রকৃতি অপরূপ সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ। যায় থাকে। আকাশের বুক থেকে জ্যোৎস্নারাশি সারা প্রকৃতির বুকে ছড়িয়ে পড়ে। এক মােহময় রূপমাধুর্য জাগিয়ে তােলে। জ্যোৎস্নার অজস্র ধারায় স্নাত হয় নীরব প্রকৃতি। হাজার তারার মালা চাঁদের দিকে ঘিরে থেকে জ্যোৎ্সকার রহস্যময়তাকে আরও আকর্ষণীয় করে তােলে। প্রকৃতির চারদিক সৌন্দর্যে কানায় কানায় পূর্ণ হয়। গাছের পাতার ফাক গলিয়ে জ্যোৎস্নার অমিয় সধা সারা উঠোন জুড়ে লুটোপুটি খায়, আমি মুগ্ধ হয়ে চেয়ে থাকি প্রকৃতির পানে, আমার সে দৃষ্টি খুঁজে ফিরে প্রকৃতির সৌন্দর্যের গভীরতা।
চাঁদনি রাতের একান্ত অনুভূতি : নদীর তীরে বসে বসে দেখছি জোৎস্নার রূপ। আমার সমস্ত মন আকুল হয়ে ওঠে। সে আকুলতা সুন্দরের আকুলতা। আকাশজোড়া জ্যোৎস্নার আল্পনা আর শুভ্রচাদরে মােড়া প্রকৃতির অপরূপ শােভা আমার হৃদয়ে গভীর ভাবের প্রকাশ ঘটায়। মনে মনে বলে উঠি- 'এমন চাঁদের আলাে, মরি যদি সেও ভাল, সে মরণও স্বর্গ সমান। আমার মাঝে কোনাে লেখকসত্তা নেই। তবু ভাবলােকের দুয়ার খুলে আমার মন উড়ে যেতে চায় এক অজানা জগতে, শান্তি সুখের পরশে। আজ জ্যোৎস্লারাতের মাধুরী আমার চেতনালােকে আমার অনুভবে যেভাবে ধরা দিয়েছে এর আগে এত গভীরভাবে কখনও ধরা দেয়নি। জ্যোৎস্নারাতের প্রকৃতির সৌন্দর্যের অতল গহ্বরে ডুবে গেছে আমার সমস্ত মন, প্রাণ ও দেহ। আজকের এ জ্যোৎস্নারাতে আমার এ একাকিত্ব অনুভবে অন্তরঙ্গ হলাে, জীবনে এক পরম পাওয়ার তৃপ্তিতে মন ভরে উঠল।
চাঁদনি রাতের রােমান্টিসিজম : জ্যোৎস্নার স্নিগ্ধতা আমাকে মুগ্ধ করে দেয়। আমার হৃদয়ের সমস্ত কাঠিন্য ও অসারতা দূর হয়ে এক রােমান্টিক ভাবের উদয় হয়। আমি হারিয়ে যাই জ্যোৎস্নার অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝে। জ্যোৎস্নার উপচে পড়া স্নিগ্ধতা আমাকে রােমাঞ্চকর স্মৃতির জগতে নিয়ে যায়। আমি মিশে যাই প্রকৃতির মাঝে, অন্য এক চেতনালােকে। কখন যে সময় গড়িয়ে যায় টের পাইনি। হৃদয়ের নিভৃত কোণে লালিত জ্যোৎস্নার সৌন্দর্য দেখার বাসনা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। মনে হলাে, জ্যোৎস্নার এ অপরূপ মাধুরী না দেখলে আমার জীবন অপূর্ণ থেকে যেত, মহান স্রষ্টার অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত সৃষ্টি দর্শন থেকে বঞ্চিত থেকে যেতাম। তাই অবনত মস্তকে বলে উঠি -
'তােমার সৃষ্টি যদি এত সুন্দর হয়
না জানি তাহলে তুমি কত সুন্দর।'
উপসংহার : কালের আবর্তে সময় গড়িয়ে যায়, আকাশে নিত্য চাঁদ ওঠে, জ্যোৎস্নাও ছড়ায়। কিন্তু সে রাতে আমি যেভাবে জ্যোৎস্নার সৌন্দর্য উপভােগ করেছি তা আমাকে পরম পাওয়া তৃপ্তিতে পরিপূর্ণ করে দিয়েছে। জ্যোৎস্নার এ সৌন্দর্য চিরদিনই মানুষের মধ্যে আলাের ফুলঝুরি ছড়িয়ে দিক। একাকিত্ব ঘুচিয়ে মানুষের হৃদয়ে সৌন্দর্যের সুধা ঢেলে দিক।
Post a Comment