সম্প্রসারিত ভাব: বিধাতা নিরাকার এবং অনন্ত। কিন্তু মানুষের মধ্যেই তার যথার্থ প্রকাশ। সষ্টা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন বিশেষ কর্তব্যের জন্য। মানুষের কাজ হলাে স্রষ্টার উপাসনা করা। কিন্তু স্রষ্টাকে পাবার বা সন্তুষ্ট করার জন্য কেবল উপাসনালয়ে বসে ধ্যান করলেই চলে না। উপাসনা হল স্রষ্টাকে সন্তুষ্ট করার পূর্বে প্রয়ােজনীয় মানসিক প্রস্তুতি। তাকে সন্তুষ্ট করতে হয় কর্মের মধ্য দিয়ে, সেবার মধ্য দিয়ে। বিশ্বের যা কিছু দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান সবই স্রষ্টা তার গভীর ভালােবাসা থেকে সৃষ্টি করেছেন। ফলে এই সৃষ্টির মধ্যে যা কিছু রয়েছে তার প্রতি ভালােবাসা প্রকাশ করলে প্রকারান্তরে স্রষ্টাকেই ভালােবাসা হয়। স্রষ্টাকে আমরা দেখি না কিন্তু তাঁর সৃষ্টির বিশালতার মাঝে আমরা তাঁকে উপলদ্ধি করতে পারি। তাই তাঁকে সেবা করতে হলে তাঁর সৃষ্টি জীবকে সেবা করতে হবে। বস্তুত মানুষ তার, চারপাশের জীবজগৎ নিয়েই জীবন যাপন করেন। চারপাশের জীবনে যে জনপ্রাণী বিরাজমান তার প্রতি মানুষের কর্তব্য রয়েছে। মানুষই আমাদের জাগ্রত দেবতা। অনাথ, অসহায়, দুঃস্থ, বিপদগ্রস্ত মানুষ ঐশ্বর্যশালী মানুষের সাহায্য প্রত্যাশা করে। এসব মানুষের প্রতি ধনীরা দয়া-দাক্ষিণ্য প্রদর্শন করুক তাই স্রষ্টার অভিপ্রেত। তাই অসহায় দরিদ্রের সেবা করার মধ্য দিয়ে স্রষ্টার সান্নিধ্য লাভ করা সম্ভব হবে। শুধু আর্ত মানবকে নয়, পশুপাখির মতাে মূক ও অসহায় প্রাণীকেও ভালােবাসতে হয়। মােট কথা স্রষ্টার সৃষ্ট জীবকে ভালােবাসলেই স্রষ্টাকে ভালােবাসা হয়। তাঁকে সেবা করার নামে অন্য কোনাে আচার-আচরণ পরিচালনা করে তাকে খুশি করা যায় না। ঈশ্বরের অধিষ্ঠান তাে কেবল মন্দিরের পাষাণ-বেদীতেই নয়, তাঁর আবির্ভাব মানুষের অন্তরে অন্তরে । জগতের লাঞ্ছিত-উৎপীড়িতদের মধ্যে যে তাঁর আসন পাতা, তাঁর উপস্থিতি যে সেই সবার পিছে সবার নিচে সবহারাদের মাঝে।
মন্তব্য: ঈশ্বরের নৈকট্য লাভ করতে অবশ্যই ঈশ্বরের সৃষ্ট জীবের প্রতি সেবামূলক মনােভাব প্রদর্শন করা উত্তম কাজ। জীবের প্রতি দয়া-প্রদর্শনই শ্রেষ্ঠ ঈশ্বর-সেবা।
Post a Comment