SkyIsTheLimit
Bookmark

একুশের বই মেলা রচনা

বই মেলা 
বা বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও বইমেলা
বা বাংলাদেশের বই মেলা
ভূমিকা : মেলা মিলিয়ে দেয় মানুষে মানুষে, জিনিসে জিনিসে, দেশে দেশে। দেয় শিল্প, সংসকৃতি এবং সমাজকে। তবে মেলা যেমন নানা প্রকার, তার পৃষ্ঠপােষকরাও তেমনি আবার নানা প্রবণতার। বাণিজ্য মেলার বিষয়নিষ্ঠদের এবং বই মেলায় জিজ্ঞাসুদের ভিড়। বই মেলার প্রচলন আগে ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি তা নিয়ে প্রভূত উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষণীয়। ব্যাপারটি নবাগত এবং বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই বিদ্যোৎসাহীদের সন্ধানী দৃষ্টি আজ এর ওপর নিবদ্ধ। প্রতিবছর আমাদের দেশে ২১শের বই মেলা বেশ তােড়জোড ও ঘটা করে হয়ে থাকে। এছাড়া, অন্যান্য সময়ও রাজধানী শহর ও মফঃস্বল শহরে বই মেলার আয়ােজন হয়ে থাকে।
আগ্রহ, সুযােগ, প্রকাশক : বই মেলা বইয়ের প্রতি পাঠকদের আকর্ষণ বাড়ায়। মেলায় যাওয়া উপলক্ষে অনেকেই বই কেনার প্রতি বিশেষ তাগিদ অনুভব করেন। মেলা শেষ হওয়ার পরেও বই কেনার মানসিকতা অনেককে প্রভাবিত করে। ফলে অনেকেই আরও বেশি করে বই কিনতে সচেষ্ট হন। এছাড়া, বই মেলায় ক্রেতারা ঘুরেফিরে হাতে নিয়ে বই দেখতে পারেন। মেলায় বহু বই ডিসপ্লে করা হয়ে থাকে। এতে দেখার সুবিধা হয়। উপরন্ত দূর দুরান্ত থেকে বহু প্রকাশক আসেন বই মেলায়। আসে নানা ধরনের বই। ফলে অচেনা অজানা অনেক বইয়ের সন্ধান মেলে; রুচি ও ক্ষমতা অনুযায়ী সেগুলাে কেনাও অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না। কিন্তু মেলা উপলক্ষে সেসব বইয়ের সাথে ক্ষণিক সময় হলেও পরিচয় মেলে।
মেলায় ভাব বিনিময় : প্রকাশকরা মেলা প্রাঙ্গনে ক্রেতাদের কাছে সরাসরি বই বিক্রির সুযােগ পান বলে তাঁরা লাভবান হন। কেননা প্রকাশকগণ পুস্তক বিক্রেতাদের মারফত বই বিক্রির সময় বিক্রেতাদের যে কমিশন দেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এখানে তার প্রশ্ন ওঠে না। বই মেলাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন প্রকাশক নিজেদের মধ্যে ভাব-বিনিময়ের সুযোগ পান, বই প্রকাশ সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যাদি নিয়ে আলােচনারও অবকাশ পান। এছাড়া, পাঠকদের চাহিদা সরাসরি লক্ষ্য করে নতুন নতুন বই প্রকাশের ক্ষেত্রে তারা তাদের কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে পারেন।
মেলার পরিবেশ : বই মেলা প্রাঙ্গণে নানা ধরনের প্রকাশক স্টল খােলেন। এক একটি প্রতিষ্ঠানের প্রবণতা থাকে এক এক ধরনের বইয়ের প্রতি। ফলে ক্রেতারা তাদের অভিরুচি অনুযায়ী স্টল নির্বাচন করে বই কিনতে পারেন। এছাড়া, মেলা, প্রাঙ্গণের সীমাবদ্ধ পরিসরে বিভিন্ন রকম বইয়ের সমাবেশ ঘটায় ক্রেতাদের পক্ষে অল্প আয়াসে নিজ নিজ চাহিদা অনুযায়ী পছন্দ মত বই সংগ্রহ করতে পারেন।
পারস্পরিক ভাব-বিনিময় : বই মেলার উন্মুক্ত পরিবেশে ক্রেতাদের মধ্যে ভাব বিনিময়েরও যথেষ্ট সুযােগ হয়ে থাকে। তারা তাদের পছন্দ অপছন্দ, ভালাে লাগা, মন্দ লাগা ও কেনাকাটার উপকরণ নিয়ে পরস্পরের সাথে আলােচনা করতে পারেন। উপরন্তু মেলার বর্ণাঢ্য পরিবেশ বড়দের বই কেনার আগ্রহে যেমন ইন্ধন যােগায়, ছােটদের কল্পনাকেও তেমনি উজ্জীবিত করে। 
কর্মব্যস্ত ও ক্লান্ত মানুষ : কর্মব্যস্ত মানুষ, যারা এমনিতে বই কিনতে যাবার সময় পান না, তাঁদেরও অনেকেই বই মেলায় গিয়ে হাজির হন। বইয়ের টানের সাথে বাড়তি যে জিনিসটি এখানে যুক্ত থাকে তা হলাে মেলার টান। সেখানে নিজে গিয়েই শুধু তৃপ্তি নেই, আত্মীয় পরিজন সবাইকে নিয়ে গিয়েও আনন্দ উপভােগ করা যায়। 
একুশের বই মেলা : একুশে ফেব্রুয়ারি আমাদের জাতীয় জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ দিবসটিকে স্মরণ করে প্রকাশকরা নতুন নতুন প্রকাশনায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। নতুন ও পুরাতন লেখকগণ নব উদ্দীপনায় নব চেতনায় নতুন নতুন বই রচনায় হাত দেন। অনেকে উপন্যাস, গল্প, কবিতার বই লেখেন, আবার অনেকে রচনা প্রকাশনা দুটি নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। এ মেলাটি প্রতি বছর বাংলা একাডেমি চত্বরে আয়ােজন করা হয়। প্রকাশকগণ সােহরাওয়ার্দী উদ্যান বরাবর ফুটপাথের উভয়দিকে দোকান খােলেন। এতে সব দোকানই নতুন পুরাতন লেখকদের বইয়ের ডালি সাজিয়ে বসেন। এ বই মেলার প্রাক্গণেও কি বিচিত্র পরিবেশ। কোথাও ইউনিফর্ম পরা বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা লাইন করে এগােচ্ছে, কোথাও আবার প্রবীণ তার অনেকদিন আগেকার কোন প্রীতিভাজনকে খুঁজে পেয়ে সাহায্যে হাত বাড়িয়ে দেন। কোথাও বইয়ের প্যাকেট হাতে নিয়ে দ্রুত হেঁটে চল। দোকানী কর্মচারী, কোথাও আবার কাধে-ঝােলানাে ব্যাগ নিয়ে মন্থরগতি জ্ঞানান্বেষী। কোথাও চা, কফি বা শীতল পানীয় খেতে খেতে বই-পাগলদের বিশ্রাম সুখ উপভােগ, কোথাও আবার সঙ্গীকে খুঁজে পাবার জন্যে শ্রান্ত ক্লান্ত কোন ব্যক্তির অন্বেষণ কর্ম। এছাড়া, বইয়ের বিভিন্ন স্টলেও নানা ধরণের মানুষ, কেউ প্রাণপণ চেষ্টায় ঠেলাঠেলি করে। কাউন্টারের দিকে এগুতে ব্যস্ত, আবার কেউ ভিড় এড়াবেন বলে স্টলের দরজায় দাঁড়িয়ে অন্যমনষ্ক। কেউ এক একটা বই। হাতে নিয়ে ধীরেসুস্থে পাতা ওল্টাচ্ছেন, কেউ বা সন্ধানী আলাের মত নিজের দৃষ্টিকে ঘুরিয়ে নিচ্ছেন সাজিয়ে রাখা বইগুলাের ওপর দিয়ে। কেউ দেখছেন অনেক কিনছেন সামান্যই, কেউ আবার ঝোকের মাথায় না দেখেই অনেকাকছু কিনে ফেলছেন। 
উপসংহার : বিগত কয়েক বছর আমাদের দেশে বই মেলার জনপ্রিয়তা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলা একাডেমি আয়ােজিত গত বছরের বই মেলাগুলােই তার প্রমাণ। প্রতিবছরই এখানে ক্রেতা ও স্টলের সংখ্যা এবং বই বিকিকিনির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, জিজ্ঞাসা মানুষের অভাব অভিযােগ যত বাড়বে, যতই দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততা তাদের শৃঙ্খলিত করবে, ততই বই মেলার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাবে; ততই সেখানকার উদার উন্মুক্ত পরিবেশে তাঁরা খুঁজে পেতে চাইবেন মুক্তির সাদ।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment