SkyIsTheLimit
Bookmark

রচনা দেশ ভ্রমণে শিক্ষা ও আনন্দ

শিক্ষাসফরের গুরুত্ব 
বা দেশ ভ্রমণে আনন্দ
বা ছাত্রজীবন ও দেশ ভ্রমণ
ভূমিকা : মানুষের জীবন গতিশীল। মানুষ চির যাযাবর। ঘর মানুষকে আশ্রয় দান করে সত্য, কিন্তু বিপুল বিশ্ব, অপরিচিত জগৎ, জগতের বিচিত্র রহস্য মানুষকে প্রতিনিয়ত বাইরের দিকে আকর্ষণ করে। তাই চিরপথিক মানুষ, কবির কণ্ঠে বলে উঠে, "আমার এ পথ চলাতেই আনন্দ। এ আনন্দ উপভােগের অফুরন্ত স্পৃহা থেকে মানুষ লাভ করে অভিজ্ঞতা এটাই তার শিক্ষা। জীবন ও প্রকৃতির মধ্যে শিক্ষার যে বিচিত্র উপকরণ ছড়িয়ে আছে তার যথার্থ উপলব্ধির মাধ্যমে জীবনে শিক্ষা পূর্ণতা লাভ করে। তাই বিদ্যাপীঠে লব্ধ শিক্ষার সাথে বাইরের জগতের শিক্ষাকে সমন্বিত করতে হয়। এ প্রবণতা থেকেই শিক্ষা সফরের উৎপত্তি।
শিক্ষা সফর কেন : শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের চার দেয়ালের মধ্যে প্রথাগত শিক্ষার আদান-প্রদান সীমাবদ্ধ। কিন্তু শিক্ষায়তনের বাইরে পড়ে আছে বিচিত্র জগৎ। 'আকাশভরা সূর্যতারা, বিশ্বভরা প্রাণ, দেশে দেশে কত না নগর রাজধানী। কত না নদীগিরি, সিন্ধু, মরু। কত অজানা জীব, অপরিচিত তরু। আছে বিচিত্র মানুষ আর তাদের বিচিত্র জীবন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণীকক্ষে গৃহীত পাঠে এ জীবনের খবর থাকতে পারে। কিন্তু তা উপভােগ্য ও অভিজ্ঞতালব্ধ করার জন্য বাইরে আসা দরকার। বাইরে আসাই শিক্ষা সফর। সুদূরকে জানা, অচেনার রহস্য উদ্ঘাটন, অপরিচিতের সাথে পরিচয় সাধন এসব বিষয় মনকে আকৃষ্ট করে গতানুগতিক। সংকীর্ণ জীবনের নিরানন্দ পরিবেশ থেকে মুক্তিলাভের জন্যও ভ্রমণের সুযােগ আছে। কখনও ইতিহাস স্মৃতিবিজড়িত নগরে, কখনও প্রকৃতির অনাবিল সৌন্দর্যে মানুষ অবগাহন করতে চায়, এ আনন্দময় অনুভূতির সাথে - শিক্ষালাভের বিষয়টিও জড়িত আছে। ভ্রমণের মধ্যদিয়ে শিক্ষা পূর্ণতা পায়। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা যে পাঠ গ্রহণ করে তা বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ। ইতিহাস, ভূগােল, সাহিত্য পাঠ্যপুস্তকে সীমাবদ্ধ। তা মুখস্থ করে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ডিগ্রী সনদপত্র লাভ করে শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষার জন্য যেটুকু প্রয়ােজন সে সংকীর্ণ সীমানায় দৃষ্টি নিবন্ধ থাকে, বিষয়ের সুবিস্তৃতি পরিসরে শিক্ষার্থীর দৃষ্টি প্রসারিত হয় না। শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য জ্ঞানের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ বলে পরীক্ষা পাসের পড়া দিয়ে সে লক্ষ্য অর্জিত হয় না। শিক্ষায় আসে না পূর্ণতা।
সফরের সাথে শিক্ষার সম্পর্ক : শ্রেণীকক্ষের শিক্ষার মধ্যে পূর্ণতা আনার জন্যই শিক্ষা সফর। দেশ ভ্রমণের সাথে তার কিছু পাথিক্য থাকা স্বাভাবিক। দেশ, ভ্রমণে আনন্দ আছে, সে সাথে আছে শিক্ষা। নিছক দেশ দেখে বেড়ানাের মধ্যে আনন্দ মাছে। তাতে শিক্ষার কিছু না থাকলেও চলে। কিন্তু শিক্ষা লাভের উদ্দশ্য নিয়ে যে ভ্রমণ তার সাথে আনন্দ থাকতে পারে! হবে সে আনন্দই প্রধান নয়, শিক্ষাই সেখানে প্রধান। সােনারগাঁয়ে আছে ঐতিহাসিক নিদর্শন। শ্রেণীকক্ষে বইয়ের পাতা থেকে সে ধারণা লাভ করা সহজ। কিন্তু এক সময় স্বাধীন বাংলার সম্রাটেরা সােনারগাঁয়ে যে গৌরবময় ইতিহাস সৃষ্টি করে গেছেন তা সেখানকার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থেকে যত স্পষ্টভাবে অবহিত হওয়া যায় তা আর কোথাও পাওয়া যাবে না। ময়নামতিতে আছে সুদূর অতীতের বৌদ্ধ যুগের ঐতিহাসিক নিদর্শন ইতিহাসের একজন ছাত্র যখন সেখানে বেড়ায় তখন অতীতের সে স্মৃতিচিহ্নগুলাে দেখে মুখর হয়ে বইয়ের কালাে অক্ষরে তা উপলব্ধি করা যায় না। বগুড়ার মহাস্থানগড়েও রয়েছে ঐতিহাসিক নিদর্শন। সেখানকার প্রতিটি ধূলিকণা যেন অতীতের ঘটনাবলির বাস্তব মৃর্তমান সাক্ষী। এসব জায়গায় শিক্ষা সফর করা হলে শিক্ষার্থীরা যেন সে সুদূর অতীত থেকে বেড়িয়ে আসে। শুধু যে ঐতিহাসিক স্থানের সাথে শিক্ষা সফরের সম্পর্ক তা নয়। আরও বহুবিধ বিষয়ের জন্য শিক্ষা সফরের গুরুত্ব আছে। ফারাক্কা যে ভয়াবহ সর্বনাশ। নিয়ে আসছে বাংলাদেশের জন্য, যে বিশাল এলাকার মরুভূমিতে পরিণত করছে। দেশের উওরাঞ্চও লে গেলে তার সাথে প্রত্যক্ষ পরিচয় লাভ করা যাবে। মেঘনার করাল গ্রাসে হাতিয়ার একদিক ভাঙছে, অপর দিকে বিশাল চর জেগে উঠছে। তা নিজের চোখে না দেখলে বােঝার উপায় নেই। সেন্টমার্টিন বা নিঝুম দ্বীপে সংগ্রামশীল মানুষ কিভাবে নিজেদের জীবিকার্জনে সাধনারত চোখে না দেখলে তার পূর্ণাঙ্গ উপলদ্ধি অসম্ভব। আর সুন্দরবনের সে সমুদ্র উপকূলের হিরণ পয়েন্টে প্রকৃতি তার বন, হরিণ, বাঘ, কুমির, সাগর সৈকত নিয়ে কি বিস্ময়কর খেলায় মেতে আছে তা বইয়ের পাতায় যথাযথ পাওয়া যায় না। দেখতে হলে যেতে হবে সে হিরণ পয়েন্টে। অর্থনীতি আর বাণিজ্যের ছাত্ররা যায় আদমজীতে, পলাশে, আশুগঞ্জে, চট্টগ্রামের শিল্পকারখানায় বাস্তব অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য। দেশে কাগজ, সিমেন্ট, গ্যাস ইত্যাদি উৎপাদনের প্রক্রিয়া দেখে যে বাস্তব জ্ঞান অর্জিত হয় তা শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ মূল্যবান। বাংলাদেশে অচিরেই কয়লা আর কঠিন শিলা আহরিত হবে। আজকের দিনে সে সম্ভাবনা প্রত্যক্ষ করার জন্য যেতে হবে শিক্ষা সফরে। এভাবে বহু বিচিত্র বিষয়ে প্রত্যক্ষ জ্ঞান লাভের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হয়। তাদের বইয়ের কথার সাথে চোখের দেখাকে মিলিয়ে জ্ঞানের ভিত্তি দৃঢ় করা হয়। শিক্ষা সফর এসব কারণে বিশেষ গুরুত্বের দাবিদার‌।
শিক্ষা সফরের প্রক্রিয়া : শিক্ষা সফরের গুরুত্ব বিবেচনা করে শিক্ষাবর্ষের কর্মসূচির সাথে তার সমন্বয় সাধন করা দরকার। বিভিন্ন বিষয়ের সাথে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা সফরের সমপর্ক। ইতিহাসের ছাত্র আর অর্থনীতির ছাএের সফরের জায়গা এক হবে না। সেজন্য নিজ প্রয়ােজনের স্থান নির্বাচন করতে হবে। এসব সফর সাধারণত দলীয়ভাবে সমপাদিত হয়। লেখাপড়ার ফাকে অথবা কোন ছুটিতে শিক্ষা সফরের পরিকল্পনা করা যেতে পারে। বিষয়বস্তুর গুরুত্ব বুঝে সফরের মেয়াদ নির্ধারণ করা যায়। উপযুক্ত সময়ও নির্ধারিত করতে হবে। শিক্ষা সফরের জন্য দরকার তহবিলের। প্রতিষ্ঠান থেকে বা ব্যক্তিগত চাদায় সে তহবিল গঠন করা যায়। শিক্ষা সফরে গাইড বা নির্দেশক হিসেবে শিক্ষক দায়িত্ব নেবেন। 
উপসংহার : শিক্ষা সফরকে শিক্ষার অঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে। শিক্ষা শুধু মুখস্থ বিদ্যার সাহায্যে পরীক্ষায় পাস নয়, জ্ঞানের পরিপূর্ণ বিকাশের মাধ্যমে মনুষ্যত্ববােধ জাগ্রত করাই শিক্ষার লক্ষ্য। শিক্ষা সফরের মাধ্যমে পাঠ্যক্রমের পরিপূরক। জ্ঞানার্জন সম্ভব। শিক্ষা সফরের মাধ্যমে জানা যায় দেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্য, জাতীয় জীবনের বৈশিষ্ট্য, উপভােগ্য হয়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য লাভ করা যায়। শিক্ষা সফরে আছে দেশকে নানা দিক থেকে জানার, দেশের সমৃদ্ধি ও সম্ভাবনা সমপর্কে অবহিত হওয়ার সুযােগ। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের সীমাবদ্ধ পঠন পাঠনে শিক্ষার বিশাল ব্যাপ্তি অর্জন সম্ভব হয় না। পাঠ্য গ্রন্থের শিক্ষা নীরস ও তথ্য ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে। শিক্ষাকে প্রাণবন্ত, আর্কষণীয় বাস্তবানুগ করার জন্য শিক্ষামূলক এমণের বিকল্প নেই। শ্রেণীকক্ষের শিক্ষা বাস্তব ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় শিক্ষা সফরের মাধ্যমে। শ্রেণী শিক্ষার পরিপূরক হিসেবে শিক্ষা সফরের অভিজ্ঞতা কাজে আসে। শিক্ষাকে জীবনমুখী ও বাস্তবানুগ করার জন্য শিক্ষা সফরের প্রচুর সুযােগ সৃষ্টি করা দরকার।

লেখা-লেখি করতে ভালোবাসেন? লেখালেখির মাধ্যমে উপার্জন করতে যুক্ত হতে পারেন আমাদের সাথে Telegram এ!
Post a Comment

Post a Comment